চট্টগ্রামে ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম ঠেকাতে ‘নো কম্প্রমাইজ’ নীতিতে প্রশাসন

করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের এই সময়ে সরকার প্রদত্ত ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি ঠেকাতে ‘নো কম্প্রমাই’ নীতি গ্রহণ করেছে প্রশাসন। ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম করলে কাউকেই ছাড় না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোনো জনপ্রতিনিধি-কর্মকর্তা-কর্মচারি সরকারি ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করলেই তার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তকরণ, ফৌজদারি মামলা দায়েরসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে মাঠ প্রশাসনকে নির্দেশও দিয়েছে।

জানা যায়, গত বুধবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীরের ডবলমুরিং থানার ঝর্ণাপাড়া এলাকায় মুনমুন কমিউনিটি সেন্টারের গলিতে বিসিকের একটি গুদামে অভিযান চালিয়ে খাদ্য অধিদফতরের প্রায় ১৬ মণ চাল উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় গুদাম থেকে খাদ্য অধিদফতরের সিলযুক্ত সাড়ে ১১ হাজার খালি বস্তাও পাওয়া যায়। পুলিশ মনে করছে, করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে ঠিকাদার বিনামূল্যে বিতরণের চাল আত্মসাৎ করে খোলা বাজারে বিক্রির চেষ্টা করছিল। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে মামলা করেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মির্জাপুর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের বিরুদ্ধে ত্রাণ নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। এ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক। চিঠির প্রেক্ষিতে গতকাল রবিবার ওই চেয়ারম্যানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়।

ডবলমুরিং থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সুদীপ দাশ বলেন, ‘এ ঘটনায় পুলিশের এস আই শহীদ বাদি হয়ে মিল মালিকসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, করোনাভাইরাসের প্রকোপের এই কঠিন সময়ে কোনো জনপ্রতিনিধি-কর্মকর্তা-কর্মচারি সরকারি ত্রাণ নিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি করলেই তার বিরুদ্ধে সাময়িক বরখাস্তকরণ, ফৌজদারী মামলা রুজুসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেয়। একই সঙ্গে দেশের সব জেলা প্রশাসকগণকে অনিয়ম দুর্নীতি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণ করতে বলা হয়েছে। এ নিয়ে গত  শনিবার স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (প্রশাসন-১শাখা) উপ সচিব মো. এরশাদুল হক স্বাক্ষরিত ‘ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ’ শীর্ষক চিঠিতে এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। স্থানীয় সরকার বিভাগের সিটি কর্পোরেশন, জেলা পরিষদ, উপজেলা পরিষদসহ সকল সংস্থা-দপ্তরে এ চিঠি পাঠানো হয়। স্থানীয় সরকারের চিঠিতে বলা হয় ‘করোনাভাইরাসের কারণে শহর-গ্রামে বিপুল সংখ্যক মানুষের আয়-রোজগারের পথ বন্ধ হয়ে পড়েছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সকল ক্ষতিগ্রস্থ মানুষের খাদ্য সহায়তা হিসাবে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ দপ্তর, সংস্থা এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমুহ নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ কার্যক্রম- যেমন চাল, নগদ অর্থ, শিশু খাদ্য ও অন্যান্য সামগ্রী বিতরণ করছে। প্রধানমন্ত্রীর সদয় নির্দেশনা/অনুশাসনের আলোকে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান সমুহের জনপ্রতিনিধি এবং কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ তৃণমূল পর্যায়ের ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত হয়েছেন। কিন্তু বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এবং পত্র পত্রিকার  জানা যায় যে, কোথাও কোথাও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধি- কর্মচারিগণ ত্রাণ বিতরণে অনিয়ন দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িত জনপ্রতিনিধি ও কর্মকর্তা-কর্মচারিগণকে সাময়িক বরখাস্তকরণ, তাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা রুজুসহ কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকগণকে অনিয়ম দুনতি বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণসহ প্রতিবেদন তাৎক্ষণিকভাবে স্থানীয় সরকার বিভাগে প্রেরণের অনুরোধ করা হয়।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘ত্রাণ বিতরণে জড়িত থাকাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সরকারি একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা সর্বোচ্চ সচ্চতা নিশ্চিত করে ত্রাণ বিতরণ করছি।’

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন