বীরগঞ্জ কালিমেলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্য, নিয়োগ বোর্ডের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের

দিনাজপুর বীরগঞ্জের কালিমেলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ে এমপিও নীতিমালার আলোকে চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগে একাধিক চাকুরী প্রার্থীর নিকট থেকে কর্মচারী নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়োগ প্রার্থী অফিস সহায়ক পদে ২ লক্ষ টাকা প্রদান করেও নিয়োগ না পাওয়ায় নিয়োগ প্রার্থী মাসুম ইসলাম বাদী হয়ে নিয়োগ বোর্ডের ৪ জন সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে নিয়োগ বোর্ড সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবুল, নিয়োগ বোর্ড সদস্য সচিব ও প্রধান শিক্ষক টলীন চন্দ্র , বীরগঞ্জ মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার কন্দর্প নারায়নও জিডি প্রতিনিধি বীরগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নাম উল্লেখ করে দিনাজপুর সহকারি জজ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। চতুর্থ শ্রেনীর কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়ায় একাধিক প্রার্থীর নিকট থেকে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টনীল চন্দ্র ও বিদ্যালয় পরিচালনা ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবুল একাধিক নিয়োগ প্রার্থীর নিকট থেকে চাকরি প্রদান করার আশ্বাসে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন।

তবে উক্ত বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দাবি কোন প্রার্থীর কাছে আর্থিক কোনো লেনদেন করা হয়নি মেধার ভিত্তিতে ৩টি পদে ৩জন কর্মচারীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। কালীমেলা দ্বিমুখি উচ্চ বিদ্যালয়ে ৩টি কর্মচারীর পদ শুন্য হওয়ায় প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি সদস্যদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক অফিস সহায়ক, পরিচ্ছন্নতাকর্মী এবং নিরাপত্তা কর্মীর তিনটি পদের জন্য গত ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১ জাতীয় স্থানীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেই বিজ্ঞপ্তি মোতাবেক তিনটি পদের জন্য ৩১ জন প্রার্থী আবেদন করেন যাচাই-বাছাই ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকায় দুজন প্রার্থী কে যাচাই বাছাই কমিটি অবৈধ বলে ঘোষণা করেন । ২৯ জন নিয়োগ প্রার্থীকে চূড়ান্ত প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

ঘোষণা অনুযায়ী ২৯ জন প্রার্থীকে গত ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১ তারিখে লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ডাকযোগে এডমিট কার্ড প্রদান করা হয়। এডমিট কার্ডে দিন ক্ষণ ও স্থন হিসাবে বীরগঞ্জ সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়োগ প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সেই নিয়োগ পরীক্ষায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী পদে ৪ জন, নিরাপত্তাকর্মী পদে ৬ জন এবং অফিস সহায়ক পদে ৫ নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেন। কয়েকজন নিয়োগ প্রার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় নিয়োগ পরীক্ষার এডমিট কার্ড পাওয়ার পরও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি।

নিয়োগ বোর্ডের দাবি এডমিট কার্ড পাওয়ার পরও নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেনি তারাই আজ এই নিয়োগ পরীক্ষা কে বানচাল এবং বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন। তবে কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষায় যিনি সর্বোচ্চ মেধাবী ও কোন নাম্বার পেয়েছেন তাকেই নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ তিন পদের জন্য ৩ কর্মচারী যোগদান করেছেন। এখন তারা নিয়মিত বিদ্যালয়ের কর্মচারী হিসাবে কাজ করছেন।

নিরাপত্তাকর্মী পদে আবেদনকারী লিটন ইসলাম বলেন, কালিমেলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন আমার বাসা এবং আমার পরিবার উক্ত বিদ্যালয়ের দাতা সদস্য বটে। নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর উক্ত পদে আমি প্রার্থী হিসেবে আবেদন করি এবং উক্ত বিদ্যালয়ের র প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সাথে একান্তভাবে বৈঠক করি। আমাকে উক্ত পদে চাকরি প্রদান করা হবে মর্মে সাত লক্ষ টাকা রফাদফা হয়। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি কে নগদ ১ লক্ষ ৩৫ হাজার টাকা প্রদান করেছি কিন্তু নিয়োগ পাইনি।

অফিস সহায়ক পদে নিয়োগ প্রার্থী মাসুম ইসলাম বলেন, অফিস সহায়ক পদে আমার নিকট ৫ লক্ষ টাকার রফাদফা হয় আমি তাৎক্ষণিকভাবে ২ লক্ষ টাকা প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি কে প্রদান করি কিন্তু প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি নিয়োগ পরীক্ষার দুই দিন আগে আমাদেরকে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় যে অফিস সহায়ক পদে ১৪ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এক প্রার্থী চুড়ান্ত হয়েছে। তাই তোমাকে অফিস সহায়ক পদে চাকরি প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না আমরা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ি পরবর্তীতে মামলা দায়ের করেছি।

কালিমেলা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি আব্দুল গফফার বলেন বর্তমান প্রধান শিক্ষক টনীল চন্দ্র ও বর্তমান সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবুল একাধিক প্রার্থীর নিকট চাকরি প্রদানের আশ্বস্ত করে অর্থ গ্রহণ করেছে যখন যে পদের অর্থের পরিমাণ বেশি হচ্ছে তখন তাকে নিয়োগ প্রদান করেছে। তিনি আরোও বলেন বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র ধর্মীয় মেয়েকে স্বজনপ্রীতি ও অর্থের বিনিময়ে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে নিয়োগ প্রদান করেছেন।

অফিস সহায়ক পদে প্রার্থীর বাবা ইউনুছ আলী বলেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবুল এর নিকট রাতের অন্ধকারে তার বাসার একাধিক বার আমরা সাক্ষাৎ করি এবং চাকরির বিষয়ে সে আশ্বস্ত করে তার কথামতো আমার গোয়ালের ৭ টি গরু ও বিভিন্ন লোকের নিকট সুদের উপর টাকা নিয়ে একদিনে লক্ষ টাকা প্রদান করি ছেলের চাকরির জন্যে। অফিস সহায়ক পদে আরো বেশি টাকার বিনিময়ে একজন প্রতিবন্ধী ছেলেকে চাকরি প্রদান করেছে যেটার কারনে আমার ছেলে বাদী হয়ে আদালতে মামলা করেছে।

ম্যানেজিং কমিটির সাবেক সভাপতি ও বর্তমান বিদ্যোৎসাহী সদস্য আলহাজ্ব দানেশ আলী মাস্টার বলেন, বর্তমানের বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক টনীল চন্দ্র কে আমি এই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদান করিয়েছিলাম। সেই সময়ে সে বিদ্যালয়টি সঠিকভাবে ন্যায় নীতির সাথে পরিচালনা করবে বলে অঙ্গীকার করেছিল কিন্তু বর্তমানে সে এত অর্থলোভী হয়ে পড়েছে যে তার কারণেই আজকে এই বিদ্যালয়টি অনেকটা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে। একাধিক প্রার্থীর কাছে চাকরি প্রদান করা হবে বলেও অর্থ নিয়ে আত্মসাৎ করেছে বলেও বিভিন্ন মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি। এই অবৈধ এবং নিয়োগ বোর্ড ও এই স্বার্থন্বেষী প্রধান শিক্ষকসহ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বিচার দাবি করছি।

প্রধান শিক্ষক টনীল চন্দ্র বলেন, এমপিওভুক্ত বিদ্যালয়ের জনবল কাঠামো নীতি অনুসরণ করে যথাযথভাবে সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে এ নিয়োাগ বোর্ড গঠন করা হয় এবং এই নিয়োগ প্রক্রিয়ায় সর্বোচ্চ মেধাবী প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। এখানে আর্থিকভাবে কোন প্রকার কারো নিকট থেকে অর্থ গ্রহণ করি নাই এবং অর্থ গ্রহণ করার কোন প্রশ্নই আসে না। বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও সুনাম ক্ষুন কার জন্য কিছু স্বার্থন্বেষী মহল বিদ্যালয়টিকে পিছনে ফেলার জন্যই মিথ্যে মামলা করে হয়রানী করছে। বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি সহ প্রধান শিক্ষক ডিজির প্রতিনিধি এবং মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার এর বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা হয়রানিমূলক মামলা দায়ের করেছে যেটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির বাবুল বলেন এখানে কোনো রকমের স্বজনপ্রীতির বা আর্থিক লেনদেনের কোন ঘটনাই ঘটে নাই। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সিদ্ধান্ত মোতাবেক তিনজন কর্মচারী নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় এবং বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী চাকরিপ্রার্থীরা আবেদন করেন এবং নিয়ম অনুযায়ী নিয়োগ বোর্ড গঠন করা হয়। নিয়োগ বোর্ড লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা সম্পন্ন করার পর সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত প্রার্থীকে নিয়োগ প্রদান করেছেন। এখাানে কোনো রকমের আর্থিক লেনদেন করা হয় নাই। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ প্রদান করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার ক্ষেত্রে কিছু স্বার্থন্বেষী মহল মিথ্যা মামলা করে হয়রানি করছে এবং বিদ্যালয়ের পাঠদানের ক্ষেত্রে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে।

নিয়োগ কমিটির ডিজির প্রতিনিধি বীরগঞ্জ সরকারী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রেজাউল ইসলাম বলেন , নিয়োগ বোর্ডের উপর কোন মামলা হয়েছে কি না আমার জানা নেই। ডিজির প্রতিনিধি হিসাবে নিয়োগ বোর্ডের সদস্য থাকলে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা আমরা সম্মানী পেয়ে থাকি। তবে এটা সরকারী নির্ধারিত ফি না।

বার্তা প্রেরক
মোঃ নাজমুল ইসলাম (মিলন)
দিনাজপুর প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন