হোমনায় বিয়ে বাড়িতে গাঁয়ে হলুদের অনুুষ্ঠানে মেয়েদের ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে কয়েক দফা সংঘষের্র ঘটনা ঘটেছে। এতে গুলিবিদ্ধসহ ২০ জন আহত ও বাজারের দোকান পাট ভাংচুরের অভিযোগ উঠেছে। গত বৃহস্পতিবার রাত থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত উপজেলার বড় ঘাড়মোড়া ও হুজুরকান্দি গ্রামবাসীর মধ্যে তিন দফা এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে হোমনা থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন। এ ঘটনায় এখনো এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। ঘটনাস্থল ঘাড়মোড়া বাজারে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
সংঘর্ষে আহতরা হলেন-রাজিব (২৭), আসাব উদ্দিন (৩৫), আলম প্রকাশ কেট্টা (৫৫), আজগর আলী (৬০), রাজিব (২৭), জিলানী (৫০), অজিত (২২), ইকরাম (১৪), ইকবাল (২৫), শাহ ্অলম (৩২), মতিন মিয়া (৩৫), কবির (২৮), নজুরুল (২৬), শুভ (২২), তানভির (১৬) ও আরিফ (২১)। বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের গুরুতর আহত তিন জনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা ও কুমিল্লায় পাঠানো হয়েছে। বাকীদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঘাড়মোড়া গ্রামের গিয়াস উদ্দিনের বাক প্রতিবন্ধি মেয়ের বিয়ের দিন ধার্য ছিল গত শুক্রবার। এ উপলক্ষে গত বৃহস্পতিবার রাতে কনের বাড়িতে গাঁয়ে হলুদের আয়োজন করা হয়। এদিন গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে রাতে মিউজিক বাজানো হচ্ছিল। এ সময় হুজুরকান্দি গ্রামের রাসেল, ইমরান অন্তরসহ ৮/৯ জন ছেলে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে মোবাইলে মেয়েদের ছবি তুলে। বিষয়টি বিয়ে বাড়ির লোকজনের চোখে পড়লে তারা তাদেরকে মোবাইলে তোলা ছবিগুলো ডিলিট করে ফেলতে বলেন। এ নিয়ে বিয়ে বাড়ির লোকজনের সাথে হুজুরকান্দি গ্রামের ছেলেদের কথা কাটাকাটি ও এক পর্যায়ে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনার জের ধরে শনিবার সকালে বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের বাসিন্দা মো.সাব মিয়া (৬৫) ঘাড়মোড়া বাজারে দুধ বিক্রি করতে গেলে হুজুরকান্দি গ্রামের কয়েক জন ছেলে সাব মিয়ার বালতির দুধ তার মাথায় ঢেলে দিয়ে অপমান করাসহ তাকে মারধর করেন। পরে এঘটনায় সাব মিয়ার ভাই জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে শনিবার হুজুরকান্দি গ্রামের সাত জনকে এজাহার নামীয়সহ অজ্ঞাতনাম ২২ জনকে আসামী করে হোমনা থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ হুজুরকান্দি গ্রামের ফারুক আহমেদ বকুল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করে।
বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের বাসিন্দা মো. সাব মিয়া জানান, বৃহস্পতিবার রাতে হুজুরকান্দির ছেলেরা আমাদের গ্রামের একজন বাক প্রতিবন্ধি মেয়ের গাঁয়ে হলুদের অনুুষ্ঠানে এসে অশ্লীলতা করে। পরে গ্রামের ছেলেরা বাঁধা দিলে তারা উল্টো আমাদের ছেলেদের সাথে ঝগড়া লেগে যায়। এরপর শনিবার দুধ বিক্রি করতে করতে ঘাড়মোড়া বাজারে গেলে হুজরকান্দির লোকজন আমাকে অপমান ও মারধর করেন।
ঘাড়মোড়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো.শাহজাহান মোল্লা বলেন, গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে ছবি তোলাকে কেন্দ্র করে যে ঘটনা ঘটেছিলো আমি দুই গ্রামের মুরুব্বিদের নিয়ে সেটি মিমাংশার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু এর আগেই আজ রবিার সকালে আবারো দুই গ্রামের লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে যায়। বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের বাসিন্দা আবদুল আউয়াল অভিযোগ করে বলেন, বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের প্রতিবন্ধি মেয়ের গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে গিয়ে হুজুরকান্দি গ্রামের রাসেল, খোকন ও বকুল চাঁদাদাবি করে।
এছাড়া রবিবার লোকজন ঘাড়মোড়া বাজারে এলে হুজুরকান্দির দুলাল, রাসেল, মুসা, ছানাউল্লাহর নেতৃত্বে হুজুরকান্দি গ্রামের লোকজন রাম দা, চল, কালতা, লাঠিসোঠা, ইট,ককটেল, পাখি মারার বন্দুকসহ দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে ঘাড়মোড়া গ্রামের লোকজনের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের যাকে পেয়েছে তাকেই মারধর করেছে। এতে তারা ঘাড়মোড়া গ্রামের ১৫/২০ জনকে মেরে আহত করে। আহতদেরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি দেয়াসহ স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।
তবে বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের লোকজনের সকল অভিযোগ অস্বীকার করে হুজুরকান্দি গ্রামের বাসিন্দা মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, চাঁদা দাবি তো দূরের কথা আমাদের গ্রামের কয়েকজন ছোট ছোট নাবালগ ছেলে বড় ঘাড়মোড়া গ্রামে গাঁয়ে হলুদের অনুষ্ঠানে যাওয়ায় বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের লোকজন তাদেরকে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে। পরে আবার তারাই আমাদের গ্রামের লোকজনের নামে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরপর আজ রবিবার সকালে হুজুরকান্দি গ্রামের সাবেক ইউপি মেম্বার বাদশা মিয়াকে ঘাড়মোড়া বাজার থেকে বড় ঘাড়মোড়ার লোকজন ধরে নিয়ে আটকে রাখে। এখবর গ্রামের লোকজনের কাছে আসলে লোকজন ঘাড়মোড়া বাজারে গিয়ে বাদশা মেম্বারকে উদ্ধার করেন। এ সময় বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের লোকজন আমাদের গ্রামের ১০/১২ জনকে মারধর করে আহত করেন।
হোমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কায়েস আকন্দ বলেন, দুই গ্রামবাসীর সংঘর্ষের খবর পেয়ে সাথে সাথে ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। এছাড়া শনিবার বড় ঘাড়মোড়া গ্রামের এক মুরুব্বিকে মারধরের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। এ মামলায় বকুল নামের একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম তানভীর, হোমনা সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার স্পিনা রানী প্রামাণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
বার্তা প্রেরক
মোঃ কামাল হোসেন
হোমনা প্রতিনিধি