তেঁতুলিয়ায় সমতলে চা বাগানে মাল্টা চাষ করে দিগুণ আয় আগ্রহ বাড়ছে চাষীদের

তেঁতুলিয়া উপজেলার সমতলের চা বাগানে সমন্বিত ফসল হিসেবে গত কয়েক বছর ধরে মাল্টার বাগান করছেন চাষিরা। এতে করে চায়ের পাশাপাশি প্রায় সমপরিমান অর্থ মাল্টা থেকে আয় করছে চা বাগান মালিকরা। চা বাগানে সমন্বিত ফল চাষ করে একদিকে যেমন ফলের পুষ্টি আহরণ করতে পারছেন অন্যদিকে প্রচুর লাভবানও হচ্ছেন ক্ষুদ্র চা চাষিরাও। স্বাদে এবং গুণে অত্যন্ত সুস্বাদু এই মাল্টা এখন সারাদেশে সরবরাহ করা হচ্ছে।

আর মাল্টা চাষে আগ্রহী চাষিদের সকল প্রকার সহায়তা দিচ্ছে কৃষি সম্প্রসারন অধিদপ্তর। উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের ইসলামবাগ এলাকার ফেরদৌস কামালের বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী সাদেকুল ইসলাম সুসম করোনা কালীন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ায় ঢাকা থেকে বাড়ি ফিরে বাবার দুই একর জমিতে দুইশ’ বারি-১ জাতের মাল্টা চারা রোপন করেন। মাত্র ১৮ মাসের মধ্যে প্রত্যেক গাছেই প্রচুর পরিমানে ফল ধরে। সুসম জানান, দুই একর চা বাগান থেকে চা পাতা বিক্রি হয় দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। এবার চায়ের পাশাপাশি আরও দুই লাখ টাকার মাল্টাও বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

শুধু সুসমই নয়; অন্যান্য চাষিরাও চা বাগানে মাল্টা চাষ করে লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও জানান, চা বাগানে মাল্টা চাষ করলে আলাদা খরচ করতে হয় না। চা বাগানে যে সব সার ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয় তা দিয়েই মাল্টা উৎপাদন করা যায়। চাষিরা বলছেন, বাগান থেকে ১৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে মাল্টা বিক্রি হয়। আর চা বাগানে মাল্টা বাগান দেখতে প্রতিনিয়ত আসছেন পর্যটকরাও। মাল্টা এবং চা বাগানের অভিনব চাষ দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন তারা। মাল্টা সাইট্রাস ফসলের মধ্যে অন্যতম জনপ্রিয় ফল। এটি ভিটামিন ‘সি’ সমৃদ্ধ ফল যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এটি ত্বকে সজীবতা বজায় রাখে এবং ত্বকের বলি রেখা প্রতিরোধ করে লাবণ্য ধরে রাখাসহ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

ভিয়েতনাম, উত্তর পশ্চিম ভারত ও দক্ষিণ চীন মাল্টার আদি উৎপত্তিস্থল। তবে বর্তমানে এই ফলটি বিশ্বের উষ্ণ ও অবউষ্ণমন্ডলীয় এলাকায় বেশি চাষ হচ্ছে। বাংলাদেশেও পাহাড়ি এলাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য এলাকাতেও মাল্টা চাষ হচ্ছে। শুস্ক ও উষ্ণ জলবায়ু মাল্টা চাষের জন্য বেশি উপযোগি। আামাদের দেশেও মাল্টার চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। মাল্টা চাষ বৃদ্ধি পেলেও এখনও দেশের চাহিদা মেটাতে যার অধিকাংশই আনতে হয় দেশের বাইরে থেকে। আবহাওয়া, মাটি এবং পরিমিত বৃষ্টিপাত মাল্টা চাষের উপযোগি। এর সুফল নিয়ে জেলার সব উপজেলাতে মাল্টা চাষ সম্প্রসারিত হচ্ছে। গড়ে উঠেছে ছোট বড় অনেক মাল্টা বাগান।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম জানান, একই জমিতে চা চাষের পাশাপাশি সাথী ফসল হিসেবে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ মাল্টা চাষ করে অধিক লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় প্রায় ৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে। প্রতি বছরই চা বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মালটা চাষ বৃদ্ধি পাচ্ছে। এছাড়াও সমতল ভুমিতে মালটা চাষের চাষীদের আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চাষীদের বিভিন্ন সময় প্রশিক্ষন প্রদান ও বাগন পরিচর্যার উপকরণ বিতরণ করা হয়ে থাকে।

বার্তা প্রেরক
জাবেদুর রহমান জাবেদ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন