বাগেরহাটে স্বামী-সন্তানসহ নারী নেত্রীর বিরুদ্ধে স্কুল শিক্ষিকাকে ধর্ষণ ও সহযোগিতার মামলা

বাগেরহাটে বিয়ের প্রলোভনে ধর্ষণ, মারধর ও জোরপূর্বক গর্ভের সন্তান অপসারণের চেষ্টার অভিযোগে স্বামী-সন্তানসহ এক প্রভাবশালী নারী নেত্রীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন ৩০ বছর বয়সী এক স্কুল শিক্ষিকা। ৩০ আগস্ট সকালে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওই শিক্ষিকা বাগেরহাট সদর থানায় এই মামলা দায়ের করেন। কৌশলগত কারণে মামলার বিষয়টি গোপন রাখা হলেও বিষয়টি নিয়ে শহরে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পুলিশ অবশেষে শুক্রবার (০৩ সেপ্টেম্বর) মামলার বিষয়টি সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন।

মামলার আসামীরা হলেন, বাগেরহাট শহরের রেলরোডস্থ রেদওয়ান আহমেদ রাতুল (২৯), রাতুলের বাবা ফারুক আহমেদ (৫৮) এবং রাতুলের মা বাগেরহাট মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদিকা ও বাগেরহাট সদর উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান এ্যাড. পারভীন আহেমদ (৫০)। দীর্ঘদিন ধরে নারী অধিকার নিয়ে কাজ করছেন এ্যাড. পারভীন আহমেদ।

বাদীর লিখিত এজাহারের বরাদ দিয়ে থানা পুলিশ জানান, এ বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারি রেদওয়ান আহমেদ রাতুলের সাথে প্রেমের সম্পর্ক হয় ওই স্কুল শিক্ষিকার। সম্পর্কের এক পর্যায়ে ১৪ জুলাই স্কুল শিক্ষিকার ভাড়া বাসায় শারীরিক সম্পর্ক করে রাতুল। পরবর্তীতে ২৩ জুলাই রাতুলের রেলরোডস্ত বাড়িতে নিয়ে জোরপূর্বক ওই শিক্ষিকার সাথে শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হয় রাতুল। সর্বশেষ ২৯ আগস্ট নিজেকে দুই মাসের অন্তস্বত্তা দাবি করে রাতুলের বাড়িতে যায় ওই শিক্ষিকা। সেখানে জোরপূর্বক আবারও ওই শিক্ষিকাকে ধর্ষণ ও মারধর করে রাতুল।

বিষয়টি রাতুলের মা এ্যাড. পারভীন আহমেদ দেখে ফেলেন। তখন ওই শিক্ষিকা অন্তসত্ত¡ার বিষয়টি এ্যাড. পারভীনকে জানান। পরে ওই স্কুল শিক্ষিকার গর্ভের সন্তান অপসারণ করতে জোরপূর্বক বাগেরহাট শহরের দাসপাড়া মোড়স্থ একটি বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যায় এ্যাড. পারভীন আহমেদ। একপর্যায়ে সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে রাস্তার পাশের দোকানে আশ্রয় নিয়ে অসহায় ওই শিক্ষিকা আত্মচিৎকার করতে থাকেন।
স্থানীয়রা জড়ো হলে সে সময় ওই নারীনেত্রী সরে পড়েন।

একজন প্রভাবশালী নারীনেত্রীর এমনকান্ডে বাগেরহাট শহরের বিভিন্ন নারীদের মধ্যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। এনিয়ে শহরে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে ৩০ আগস্ট বাগেরহাট মডেল থানায় বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেন হিন্দু স¤প্রদায়ের ওই স্কুল শিক্ষিকা। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য এ্যাড. পারভীন আহমেদকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। বাগেরহাট মহিলা পরিষদের সভানেত্রী এ্যাড. সীতা রানী দেবনাথ বলেন, আমরা এই বিষয়ে সরাসরি কোন অভিযোগ পাইনি।

গতকাল বৃহস্পতিবার আদালতে গিয়ে এ বিষয়ে শোনার পর আমরা খোঁজ নিচ্ছি। আমরা নারীদের অধিকার ও মানবাধিকার নিয়ে কাজ করি। মেয়েটি যেন নেয় বিচার পায় আমরা সেই চেষ্টা করবো। আর আমাদের পরিষদের কেউ এই ঘটনায় জড়িত থাকলে তার বিরুদ্ধেও তদন্তপূর্ব ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে ধর্ষণ ও সহায়তার অভিযোগ এনে স্কুল শিক্ষিকা মামলা দায়ের করেছেন। মামলার পর থেকে আসামীরা পলাতক রয়েছে। তবে আসামীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

বার্তা প্রেরক
তানজীম আহমেদ
বাগেরহাট প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন