মির্জাপুরে নির্মাণের পাঁচ মাসেই বেহালে ৩ কিমি সড়ক

টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে এলাকাবাসীর প্রতিবাদের তোয়াক্কা না করে দুই কোটি ২৯ লাখ টাকা ব্যয়ে থলপাড়া নতুন বাজার-ফতেপুর বাজার পিটিসি রোডের সঙ্গে সংযুক্ত (হিলড়া পূর্ব পাড়া থেকে ফতেপুর) সোয়া তিন কিলোমিটার সড়কটি তড়িঘড়ি করে নির্মাণ করা হয়েছে। নির্মাণের পাঁচ মাস যেতে না যেতেই সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ভেঙে ধসে পড়ছে। রাস্তাটিতে প্রয়োজনমতো রোলার না করায় বিভিন্ন স্থানে ডেবেও যাচ্ছে।

এ ছাড়া রাস্তাটির উভয়পাশে ৩০ ইঞ্চি মাটির সোলডার করার কথা থাকলেও করা হয়নি। সড়ক নির্মাণের পাঁচ মাসেই ভেঙে ও ডেবে যাওয়াই স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানা গেছে। সড়কটি নির্মাণে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিম্নমানের সামগ্রী নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী। জানা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৩ হাজার ৩২৫ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৩ মিটার প্রস্থের এই সড়কটি বাস্তবায়নে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর টেন্ডার আহ্বান করেন। এতে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২ কোটি ২৯ লাখ টাকা।

টেন্ডারের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের তাপস ট্রেডার্স নামে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি করার জন্য নির্বাচিত হয়।পরবর্তীতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর কাজটি বাস্তবায়ন করে। গত বছর সড়কটির কাজ শুরু হলে ঠিকাদারের বিরুদ্ধে শিডিউল অনুযায়ী মাটি না ফেলা, প্রয়োজনমতো রোলার না করা, নিম্নমানের ইট, বালু ও খোয়া ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ তোলেন এলাকাবাসী। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় এলাকাবাসীর অভিযোগের তোয়াক্কা না করেই স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের সমন্বয়ে কাজটি বাস্তবায়ন করেন বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন।

গত এপ্রিল মাসে সড়কটির কার্পেটিং করা হয়। শিডিউল অনুযায়ী না করে বিটুমিনের পরিমাণ কম দিয়ে করা হয়েছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। এ কারণে সড়কটির বিভিন্ন স্থানে ডেবে গেছে। এ ছাড়া উভয় পাশে ৩০ ইঞ্চি সোলডার করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রবিউল মিয়া জানান, নতুন রাস্তা বানানো হয়েছে। মাটি না ডলায় (রোলার না করা) রাস্তাটি উঁচু-নিচু আছে। কয়েক জায়গায় ভেঙেও গেছে। ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে।

হিলড়া গ্রামের আমির হামজা বলেন, ৪/৫ মাস আগে রাস্তাটি পাকা করা হয়েছে। রাস্তাটিতে ঠিকমতো মাটি ফেলা হয়নি। এ ছাড়া নিম্নমানের কাজ হওয়ায় এই অল্প সময়ের মধ্যেই ভেঙে পড়ছে রাস্তাটি। একই গ্রামের সাহাদত হোসেন বলেন, কাজের মান নিয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের লোকজন শুধু এলাকাবাসী না, অফিসের লোকজনের সঙ্গেও খারাপ আচরণ করেছেন। মহেড়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. বাদশা মিয়া জানান, শিডিউল অনুযায়ী রাস্তায় মাটি ভরাট ও সোলডার নির্মাণ করা হয়নি। নিম্নমানের খোয়া ফেলে কোনো রকম কাজ শেষ করে ঠিকাদার চলে গেছেন। কাজের সময় অনেকবার বাধা দেওয়া হয়েছিল। নিম্নমানের কাজে বাধা দেওয়ায় ঠিকাদার আমার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যে অভিযোগ আনেন। পরে কৌশলে ঠিকাদার রাস্তাটি নির্মাণ করে চলে গেছেন।

তাপস ট্রেডার্সের মালিক ও টাঙ্গাইল জেলা ঠিকাদার সমিতির সভাপতি শরিফুল ইসলাম জানান, গত বছর সড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হলেও বর্ষার কারণে সমাপ্ত করা যায়নি। গত এপ্রিল মাসে দ্রুত সময়ের মধ্যে পাকাকরণ করা হয়েছে। সড়কটির কয়েকটি স্থানে ভেঙে ও ডেবে গেছে। বৃষ্টি বন্ধ হলেই মেরামত করা হবে বলে তিনি জানান। মির্জাপুর উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উপসহকারী প্রকৌশলী ও ওই সড়কের দায়িত্বপ্রাপ্ত তদারকি কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম জানান, সড়কটির কয়েকটি স্থানে ভেঙে ও ডেবে গেছে। অনেক স্থানে সোলডারও শিডিউল অনুযায়ী করা হয়নি। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের জামানত জমা রয়েছে। সড়কটি মেরামতের জন্য ঠিকাদারকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন