জরাজীর্ণ ঘরেই ৪০ বছর ধরে চলছে পাঠদান

রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জরাজীর্ণ টিনের ঘরেই ঝুঁকি নিয়ে চলছে কোমলমতি শিশুদের পাঠদান। প্রায় ৪০ বছর ধরে এভাবেই নিয়মিত বিদ্যালয়ের কার্যক্রম চলছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। সরেজমিনে গেলে অভিভাবক শান্তিময় চাকমা জানান, বিদ্যালয়ের কক্ষগুলোর অবস্থা ভালো না।

সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরের ভিতর পানি পড়ে। যার কারণে বাচ্চারা স্কুলে যেতে চায় না। আমরা এই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন একটি পাকা ভবন চাই। তিনি আরো জানান, দীর্ঘদিনেও বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণ হয়নি। বিষয়টা দুঃখজনক।”বর্তমান সরকার শিক্ষা বান্ধব সরকার, তাই শিক্ষার মান্নোয়নের জন্য এই বিদ্যালয়ে একটি পাকা ভবন নির্মাণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটির সদর উপজেলার বন্দুকভাঙ্গা ইউনিয়নের গ্রাম ও তার আশপাশের গ্রামের শিশুদের শিক্ষার জন্য ১৯৮১ সালে এলাকার শিক্ষানুরাগীরা গ্রামবাসীর চাঁদার টাকা দিয়ে প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গায় বিদ্যালয়টি স্থাপন করেন। পরে ১৯৮৯ সালে বিদ্যালয়টি রেজিষ্টার হয়।

এরপর নানা প্রতীকূলতার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ের পাঠদান চলতে থাকে। ২০১৩ সালে বিদ্যালয়টি জাতীয়করণ করা হয়। বর্তমানে জরাজীর্ণ চারটি কক্ষে চলছে বিদ্যালয়ের পাঠদান। বিদ্যালয়ে ৫জন শিক্ষক ও শতাধিক শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রতিবছর প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় শতভাগ পাশ করেছে এই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক সুকেতু বিকাশ চাকমা জানান, বিদ্যালয়ের পাকা ভবন না থাকায় শিক্ষার্থীদের পাঠদানসহ সার্বিক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। টিনের চালার ঘরগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়েছে। জং ধরে ছিদ্র হয়ে যায় চালের টিন। বৃষ্টি হলেই শ্রেণীকক্ষে পানি পড়ে, কাদাপানিতে একাকার হয়ে যায় শ্রেণীকক্ষের মেঝে । এতে করে দুর্ভোগে পড়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

তিনি আরো জানান, বিদ্যালয়ের সামনে একটি পানির চলাচলে ড্রেন থাকায় পানি চলাচলের কারনে বিদ্যালয়ের সামনে থেকে মাটি সরে যাচ্ছে। ফলে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে বিদ্যালয়টি। বিদ্যালয়ের ঝুঁকি এড়াতে রাঙামাটি জেলা পরিষদে আবেদনও দেয়া হয়েছিল। কিন্তু এখনো পর্যন্ত মেরামত করেনি বলে তিনি জানান।

ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবিনয় চাকমা জানান, জরাজীর্ণ টিনের ঘরেই নানা সমস্যার মধ্য দিয়ে বিদ্যালয়ে পাঠদান করছেন শিক্ষকের। বর্ষাকালে আকাশে মেঘের অবস্থা যদি ভয়াবহ হয় তাহলে বিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়। এমনিতেই একটু বৃষ্টি হলেই টিনের ছিদ্র দিয়ে পানি পড়ে।

ফলে শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে আসতে চাই না। তিনি আরো জানান, পাকা ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে রাঙামাটি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসে আবেদন দেয়া হয়েছিল। সেই সময় পাকা ভবন নির্মাণে আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা। কিন্তু এখনো পর্যন্ত পাকা ভবন নির্মাণ হয়নি।

এব্যাপারে রাঙামাটি জেলার সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ রবিউল হোসেন জানান, পর্যায়ক্রমে টিনের ঘরের সবগুলো বিদ্যালয়ের পাকা ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। খুব শিগগিরই ওই বিদ্যালয়ে পাকা ভবন নির্মাণ করা হবে এবং বিদ্যালয়ের সমস্যা সমাধান করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।

এদিকে রাঙামাটির সদর উপজেলার ধামাইছড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিদর্শন করেন রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের সদস্য বিপুল ত্রিপুরা। এসময় তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের ঝুঁকি এড়াতে পানি চলাচলের ড্রেন মেরামত করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

বার্তা প্রেরক
পলাশ চাকমা
রাঙামাটি প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন