মোরেলগঞ্জে বেড়েই চলেছে আত্মহনন

হাসিয়া বেগমের বয়স ৬৫। নিজের শরীরটাও ভালো না। তার ওপর অসুস্থ স্বামী মালেক শেখের দেখাশুনা, ওষুধপত্রের যোগান, সন্তানদের গলগ্রহতা। নিজের জীবনের উপর অবজ্ঞা, নিষ্কৃতির উপায় হিসেবে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্নহত্যার পথ বেছে নিলেন দৈবজ্ঞহাটীর নুরুল্লাপুরের হাসিয়া বেগম ওরফে খুকি (৬৫)। প্রেমিকের আহ্বানে সাড়া দিয়ে একসঙ্গে রাত কাটানোর ঘটনা ছড়িয়ে পড়লে লোক লজ্জায় নিজের জীবনকে তুচ্ছ জ্ঞান করে দিনে দুপুরে গলায় ফাঁস দিলেন খাউলিয়া ইউনিয়নের স্কুল ছাত্রী রত্না (১৪)।

এভাবে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। মফস্বল এবং গ্রাম-গঞ্জে উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে আত্মহত্যা। পারিবারিক, দাম্পত্য কলহ ও অসন্তোষ, আর্থিক অনটন, হতাশা থেকে অনেকে আত্মহত্যা করছে। আবার মা-বাবার বকাঝকা, দাম্পত্য মান-অভিমানের মত তুচ্ছ ঘটনায়ও আত্মহনন করছে অনেকে। করোনা মহামারীতে আর্থিক অনটন বেড়ে যাওয়ায়ও আত্মহত্যার ঘটনা বাড়ছে বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তারা।

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে শুধু জুনের ১২ তারিখ পর্যন্ত ৫ টি আত্নহননের ঘটনা এবং গত একমাসে ৭ টি আত্নহননের ঘটনা ঘটেছে বলে মোরেলগঞ্জ থানা পুলিশ জানিয়েছেন। দরিদ্র ও নিম্নবিত্তের পরিবারের মাঝেই এ আত্মহনন প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। প্রতিদিনই মিলছে আত্মহত্যার খবর। ফাঁসিতে ঝুলে আত্মহত্যা যেন নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেড়েই চলেছে স্বজনদের হাহাকার।

মোরেলগঞ্জ সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সোনিয়া পারভীন বলছেন, হতাশা, দাম্পত্য বিরোধ, অভাব-দারিদ্র নানা সামাজিক কারণে আত্নহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যমে সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আবেগ নিয়ন্ত্রণে পারিবারিক আস্থার জায়গাটা যদি আমরা নিশ্চিত করতে পারি তাহলে আত্নহত্যার প্রবণতা কমে আসবে বলে আশা করা যায়। পরিবারের সদস্যদের উদাসীনতা বা প্ররোচনা অনেককেই আত্নহননের দিকে ঠেলে দেয়। আমাদের সকলকে সম্মিলিতভাবে এ বিষয়গুলোকে নিয়ে কাজ করতে হবে।

এদিকে, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সমাসেবক বলছেন, হতাশা থেকে আত্মহত্যার পাশাপাশি আবার পারিবারিক কলহে হত্যার ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া হচ্ছে। প্ররোচনার কারণেও অনেক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় মামলা এবং সঠিক তদন্ত হলে অপরাধীরা বিচারের আওতায় আসবে। তাহলে এ ধরনের ঘটনা কমে যাবে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, এটি একটি মানসিক রোগ। ব্যর্থতা এবং হতাশার কারণে জীবনকে যারা তুচ্ছ মনে করেন তারাই আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। এজন্য পারিবারিক ও নৈতিক শিক্ষার অভাবও কম দায়ী নয়।সম্প্রতি মোরেলগঞ্জে বেশ কয়েকটি আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে। ১১ জুন নতুন বিবাহিত জীবনের দাম্পত্য টানাপোড়েনে পরিত্যক্ত ঘরে গলায় ফাঁস দিলেন বারইখালীর শামীমা (২০)। ২ জুন নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডে অজ্ঞাত কারণে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রী মাহিমা আক্তার (১১)।

গত ২৪ মে বারইখালীর ফেরিঘাটের ব্যবসায়ী মনির হোসেন (৫০) পরিবারের উপর অভিমান করে আত্নহত্যা করেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, বেশিরভাগ আত্মহত্যার ঘটনায় পরিবারের পক্ষ থেকে মামলা করা হয়না। থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা রেকর্ড করা হয়। এ ধরনের মামলার তদন্ত বেশিদূর যায় না। সামান্য ঘটনায় জীবনকে যারা তুচ্ছ মনে করেন তারাই আত্মহত্যার মত ভয়ঙ্কর পথ বেছে নেন।

পারিবারিক এবং নৈতিক শিক্ষার অভাবে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। এ থেকে মুক্তির উপায় হচ্ছে পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় করা। সমস্যা নিয়ে পরিবারের সদস্যদের সাথে খোলামেলা আলাপ-আলোচনা করা। আত্মহত্যা যে কোন সমাধান নয়-তা উপলব্ধি করতে হবে। যে কোন ধর্মেই আত্মহত্যা মহাপাপ। ইসলাম ধর্মে আত্মহত্যাকারীরা কবীরা গোনাহের ভাগিদার হবেন।

বার্তা প্রেরক
এইচ এম জসিম উদ্দিন
মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন