দেশের নদী দূষণ, অবৈধ নদী দখল দারিত্ব সহ অন্যান্য দূষণ থেকে ৪৮ নদী রক্ষা ও নদীর তথ্য ভান্ডার তৈরি করার পাশাপাশি সমীক্ষা প্রকল্পে (১ম পর্ব) জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন এক উদ্বুদ্ধকরণ আলোচনা সভা করেছে। বুধবার দুপুরে উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে এই আলোচনা সভা অনষ্ঠিত হয়। সভায় বক্তারা বলেন, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট কারণে দেশের নদ-নদী গুলি হারিয়ে ফেলেছে তাদের প্রাণ প্রবাহ। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বিভিন্নমুখী উন্নয়ন প্রকল্পের বিরূপ প্রভাব পড়েছে নদ-নদীতে। নদীর নাব্যতা সংকট ও গতিপথ পরিবর্তনে প্রাকৃতিক কারণ যেমন আছে, তেমনি মানবসৃষ্ট কারণও বিদ্যমান।
প্রতিনিয়ত অবৈধভাবে দখল হয়ে যাচ্ছে দেশের নদ-নদীসমূহ। উজান থেকে আসা পানি অতিরিক্ত বালি, পলি বহন করছে। তাই নদী ভরাট হয়ে নাব্যতা কমে যাচ্ছে। এদিকে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রতিনিধিরা জানান, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক অনুচ্ছেদ অনুযায়ী দেশের বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, জলাভূমি ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ এবং নিরাপত্তা বিধান করবে রাষ্ট্র। এ সাংবিধানিক দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করার জন্য সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
নদীর অবৈধ দখল, পানি ও পরিবেশ দূষণ, শিল্পকারখানা কর্তৃক সৃষ্ট নদী দূষণ, অবৈধ কাঠামো নির্মাণ ও নানাবিধ অনিয়ম রোধকল্পে এবং নদীর স্বাভাবিক প্রবাহ পুনরুদ্ধার, নদীর যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ এবং নৌপরিবহণযোগ্য হিসেবে গড়ে তোলাসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নে নদীর বহুমাত্রিক ব্যবহার নিশ্চিত করার প্রয়োজনে মহামান্য হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং ৩৫০৩/২০০৯ এর রায়ের প্রেক্ষিতে ২০১৩ সালের ২৯ নং আইনে ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ গঠিত হয়েছে। পরবর্তী সময়ে রিট পিটিশন নং ১৩৯৮৯/২০১৬ এর রায়ে মহামান্য হাইকোর্ট নদীকে ‘জীবন্ত সত্তা’ (Living entity) রূপে ঘোষণা করেন এবং ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’কে দেশের সকল নদীর ‘আইনগত অভিভাবক’ (Legal guardian) হিসেবে অভিহিত করেন।
‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ দেশব্যাপী নদী রক্ষার জন্য ইতোমধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তারই ধারাবাহিকতায় নদীর বর্তমান অবস্থা যাচাই, পুনরুদ্ধার ও সংরক্ষণ কৌশল এবং দূষণমুক্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণের নিমিত্তে ‘নদী দূষণ, অবৈধ দখলদারিত্ব এবং অন্যান্য দূষণ থেকে ৪৮টি নদী রক্ষা এবং নদীর তথ্য ভান্ডার তৈরি ও গবেষণা প্রকল্প (১ম পর্ব)’ ‘জাতীয় নদী রক্ষা কমিশন’ কর্তৃক বাস্তবায়িত হচ্ছে। উক্ত প্রকল্পের আওতায় মহানন্দা ও করতোয়া নদীর সমীক্ষা কার্যক্রম আরম্ভ হয়েছে। এছাড়াও তেঁতুলিয়া উপজেলার মধ্যে দিয়ে গোবরা, বেরং, ডাহুক, ভেরসা, করতোয়া, চাওয়াই, তালমা ইত্যাদি নদী রয়েছে।
এসব নদী রক্ষায় এবং অবৈধ দখল ও নদী দূষণ ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং নদী ব্যবহারকারীদের জন্য পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হয়। একই সাথে আলোচনার মাধ্যমে সকল স্তরের স্টেহোল্ডারদের নদী রক্ষায় এগিয়ে আশার জন্য আহ্বান করা এবং অবৈধ দখল ও নদী দূষণ ইত্যাদি বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন এবং নদী ব্যবহারকারীদের পরামর্শ ও সুপারিশ প্রদান করা হয়। এ সময় আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে উস্থিত ছিলেন, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রকল্প পরিচালক ও যুগ্ন সচিব ইকরামুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসাার সোহাগ চন্দ্র সাহা, নদী রক্ষা কমিশনের প্রকল্প প্রোগ্রাম অফিসার সেলিনা সুলতানা, ইউপি চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম, জনপ্রতিনিধি ও সাংবাদিকসহ স্থানীয় গণ্যমাণ্য ব্যাক্তিবর্গ।
বার্তা প্রেরক
জাবেদুর রহমান জাবেদ
তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়) প্রতিনিধি