ফেনী শহরতলীর দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় বিদেশে রপ্তানির জন্য পাঠানো গার্মেন্টস পণ্য কাভার্ডভ্যান চুরির সময় সংঘবদ্ধ চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব সদস্যরা। এসময় ১ কোটি ৭ লাখ ৫২ হাজার টাকা মূল্যের গার্মেন্টস পণ্য সামগ্রী উদ্ধার ও একটি কাভার্ডভ্যান জব্দ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (০৮ জুন) সকাল থেকে দিনব্যাপি অভিযান চালিয়ে একটি গুদামঘর থেকে এসব সামগ্রী উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাব -৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. মাহফুজুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেন।র্যাব জানায়, রোববার গাজীপুরের কালিকাপুর থেকে লিবার্টি গ্রুপের গার্মেন্টস পণ্য একটি কাভার্ডভ্যান বোঝাই করে রপ্তানির জন্য চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। কাভার্ডভ্যানটি সোমবার রাত ১১টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরে যাওয়ার পথে ফেনী শহরের অদুরে দেওয়ানগঞ্জ এলাকায় পৌঁছ হয়। তখন ফেনী পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আনোয়ার হোসেন আজাদ ওই কাভার্ডভ্যানটি মালামালসহ একটি গুদামে নিয়ে যায়। আজাদ ওই গুদামের মালিক। রাতেই সেখানে কাভার্ডভ্যান থেকে সব মালামাল সরিয়ে ফেলে গাড়ীটি সড়কের পাশে ফেলে রাখে তারা।
পরে স্থানীয় লোকজন কার্ভাডভ্যানটি হতে মালামাল নামিয়ে ফেলার বিষয়টি দেখতে পেয়ে র্যাবকে খবর দেয়। খবর পেয়ে র্যাব-৭ ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক মো. মাহফুজুর রহমানের নেতৃত্বে র্যাব সদস্যরা ওই গুদামে অভিযান চালায়। র্যাব সদস্যরা ওই স্থান থেকে ফেনী পৌরসভার ১২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও গুদাম মালিক মো. আনোয়ার হোসেন আজাদ (৪২), তার সহযোগী মো. জাহাঙ্গীর আলম স্বপন (৪০), কার্ভাডভ্যানটির চালক মো. হানিফ (২৮) ও চালকের সহকারী মো. মহসিনসহ (১৮) ৪ জনকে হাতে-নাতে গ্রেপ্তার করেন। এ সময় র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে ডাকাত চক্রের অন্য সদস্য পালিয়ে যায়।
গার্মেন্টস পণ্য সামগ্রী গুলো চট্রগ্রাম বন্দর হয়ে জার্মানী যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু গার্মেন্টস পণ্য পরিবহণের চালক ও স্থানীয় নেতা আজাদ সহ আগে থেকে চুক্তি অনুযায়ী পণ্যগুলো ফেনী পৌছানোর পর কার্টুন থেকে মালামাল সরিয়ে ফেলে। সে অনুযায়ী প্রতি কার্টুনে ৩২ পিস মালামাল থাকে কিন্তু সেখান থেকে ৮ পিস পণ্য সরিয়ে রাখে চক্রটি। কার্টুনটি আবার সুন্দর ভাবে আগের মত প্যাকিং করে দেওয়া হয়। ডাকাতচক্র কার্ভাডভ্যানটির সীলগালা না খুলে অন্য পাশ দিয়ে গাড়ীর নাটবল্টু খুলে ভেতর থেকে মালামাল সরিয়ে পুনরায় প্যাকিং করে দেয়। প্যাকিং খোলা ও পুনরায় প্যাকিং করার সব ধরনের জিনিষপত্র তাদের গুদামে রাখা আছে।
র্যাব-৭, ফেনী ক্যাম্পের অধিনায়ক মো. মাহফুজুর রহমান জানান, কার্ভাডভ্যানটিতে মোট ৩৩৬টি কার্টুনে গার্মেন্টস পণ্য ছিল। প্রতিটিতে ৩২ পিস করে সোয়েটার ছিল। প্রতি কার্টুন থেকে ৮ পিস করে সোয়েটার রেখে দিচ্ছিল তারা। তিনি আরও জানান, এ চক্রটি দীর্ঘদিন থেকে এ কায়দায় কার্ভাডভ্যানের চালক ও সহকারীদের সহায়তায় গার্মেন্টস সামগ্রী চুরির কাজ করে আসছিল। এতে বিভিন্ন কোম্পানীর সাথে জার্মান প্রতিষ্ঠানের চুক্তি বাতিলের পাশাপাশি দেশের সুনামও ক্ষুন্ন হচ্ছিল। এ ঘটনায় এসব মালামালের মালিক গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
গ্রেপ্তার ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ফেনী মডেল থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।এদিকে ফেনী পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম স্বপন মিয়াজী জানান, তিনি ঘটনাটি শুনেছেন। এরই মধ্যে পৌর আওয়ামী লীগের অন্য নেতৃবৃন্দের সাথে যোগাযোগ হয়েছে। তাকে (আজাদ) দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
বার্তা প্রেরক
শেখ আশিকুন্নবী সজীব
ফেনী প্রতিনিধি