গাংনী এসিল্যান্ড ঘুষের বন্যা

৩৪ তম বিসিএস থেকে নিয়োগ প্রাপ্ত নূর-ই-আলম সিদ্দিকী মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা এসিল্যান্ড। তিনি খুশি হলেই অর্পিত সম্পত্তিও নাম খারিজ করে দিচ্ছেন। ঘুষ দেওয়া মাত্রই মিলছে কাঙ্ক্ষিত নামজারি খারিজ, মিসকেস নিষ্পত্তি। আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন বিশ্বস্থ দালাল চক্রের একটি গোপন সিন্ডিকেট গড়ে। যেসব মিসকেস ভূতপূর্ব এসি ল্যান্ডগণ নিষ্পত্তি করেননি প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায়। সেগুলোই এখন লক্ষ লক্ষ টাকার বিনিময়ে একের পর এক করে দিচ্ছেন এই কর্মকর্তা।

এসিল্যান্ডের দালাল চক্রের একজন দলিল লেখক কামরুজ্জামান রুবেল (৩৩), পিতা মৃত রেজাউল হক, মাতা শেফালী খাতুন, গ্রাম: গাড়াবাড়িয়া, ইউনিয়ন: কাথুলি, উপজেলা গাংনী। তার হাত ধরেই এসি ল্যান্ড সিদ্দিকী খারিজ ও মিসকেস নিষ্পত্তিতে অনিয়ম করেছেন। যার বেশ কয়েকটি নথি এই প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। গাংনী উপজেলার কাথুলি ইউনিয়নের গাড়াবাড়িয়া গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে মো: আবুল কাশেমের নামীয় মালিকানা স্বত্বের খারিজ খতিয়ান নং ২১৬৪, হোল্ডিং নং ২৮৩৫, মৌজা গাড়াবাড়িয়ায় ২৭২১, ১২৮৫, ৩৩৬ ও ৩৩৭ নং দাগে মোট ১ একর ১৪ শতক নিষ্পত্তি হয় এসি ল্যান্ড সিদ্দিকীর হাতেই। ৪ বছর আগে আবেদন করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও বৈধ প্রমাণের অভাবে ঝুলেছিল আবেদনটি।

মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে কাজটি করে দেন এসিল্যান্ড সিদ্দিকী। এর সত্যতা স্বীকার করেন বৃদ্ধ আবুল কাশেম। সৃজিত খতিয়ানটির কেইস নং ৪৭//১৪৩, ১৪৪ (অর্পিত)/২০১৭-১৮ এবং আদেশের তারিখ ০৬/১২/২০২০, যার ডুপ্লিকেট কার্বন রশিদ ১০৭০৩০/২ তে ১ হাজার ১৫০ টাকা আদায় লেখা থাকলেও সেবা-গ্রহীতাকে দিতে হয়েছে প্রায় অর্ধ লক্ষ টাকা। ওলিওল আজম (৪৫) নামে আরেক দালাল এসি ল্যান্ড সিদ্দিকীকে ৫লাখ টাকার ঘুষের প্রস্তাব দিলে ধানখোলা ইউনিয়নের কসবা মৌজার ৪ একর ৪৬ শতক জমি সংক্রান্ত মিসকেস প্রার্থীর অনুকূলে আদেশ দিয়ে নিষ্পত্তি করে দেন। প্রায় অর্ধ যুগ আগের আবেদন নিমিষেই নিষ্পত্তি হয়ে যায় টাকা দেওয়া মাত্রই।

এই টাকা সিদ্দিকী সোনালী ব্যাংকের একটি একাউন্টে নিয়েছেন বলে অভিযোগে জানাগেছে। দালালি বাবদ ওলিওলকে ২০ হাজার টাকার একটি বান্ডেল গুনে দিয়ে একটি চিরকুটে একাউন্ট নম্বরটা লিখে দেন সিদ্দিকী। মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অফিস সহায়ক মিয়ারুল ও প্রধান সহকারী এনামুল কাজ করে থাকেন। তাছাড়া সাধারণ নামজারি খারিজে শতক প্রতি ২ হাজার টাকা ও এক বিঘা সিলিং অতিক্রম করলে শতক প্রতি ১ হাজার নিয়ে থাকেন সিদ্দিকী। নিষ্কণ্টক ও কম পরিমাণের জমির খারিজ আবেদনে লাগছে ২ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা। যেখানে সর্ব সাকুল্য খরচ খারিজ প্রতি মাত্র ১ হাজার ১৭০ টাকা। এখানেই শেষ নয়, বিলধলা মৌজার ৮০১৩ নং খতিয়ান অনুমোদনের ক্ষেত্রে মোঃ কাবিরুলের অনুকূলে দেওয়ানি আদালতের আদেশ থাকলেও সেখানে সিদ্দিকী চা-নাস্তা বাবদ নিয়েছেন ১০ হাজার টাকা।

দালাল ওলিওল আজমের সাথে সিদ্দিকীর সখ্য এমন পর্যায়ের যে অফিস স্টাফ না হয়েও তার অফিস কক্ষের কম্পিউটারে বসে আদেশ কম্পোজ করে থাকেন রুবেল নামের আরেক দালাল যা আইন বিরোধী। তার উপর গাংনী উপজেলার সকল ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা তথা তহশিলদারগণের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বখরা পেয়ে থাকেন সিদ্দিকী। দাখিলা রশিদে খাজনা মওকুফ বা ১০ থেকে ৭০ টাকার খাজনা দিতে গেলেও রেখে দিচ্ছেন ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকা। খাজনা রশিদ আনতে গিয়ে বর্ণনাতীত হয়রানির শিকার হচ্ছেন গাংনীবাসী। সকাল ১১ টার আগে দেখা মিলছে না তহশিলদারের। দুপুরের খাবারের বিরতির পর বাসায় চলে যান অনেক তহশিলদার। এতে যারপরনাই ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে সেবা-প্রার্থীদের।

নূরে আালম সিদ্দিকীর অফিসে গিয়ে দেখা যায় তিনি প্রায় ১শ জনের নাম খারিজের কাগজে স্বাক্ষর করছেন। তিনি জানান আগামী কয়েকদিনের মধ্যে বদলি হয়ে যাবেন সেই জন্য মানুষের কষ্ট দুর করতে বিভিন্ন অভিযোগ নিষ্পত্তি করে যাচ্ছেন। ৫ থেকে ৭ বছরের অভিযোগও নিষ্পত্তি করায় গত তিন মাসের প্রতি মাসে সরকারকে শতকরা ১শ’২৭ ভাগ রাজস্ব আদায় করতে পেরেছেন বলে গর্ব প্রকাশ করেন।

আগের এসিল্যন্ড কর্মকর্তারা যেসব অভিযোগ নিষ্পত্তি করতে পারেননি প্রয়োজনীয় দলিল না থাকায় কিভাবে সিষ্পত্তি করছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন অফিসের বড় বাবু ইনামুল হক কাগজ পত্র সঠিক আছে জানালে তিনি তাতে স্বাক্ষর করে নিষ্পত্তি করেছেন। তবে অভিযোগ আসলে নাম খারিজ বাতিল করার বিধান আছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মেহেরপুর ভূমি-রেজিষ্ট্রি অফিসের এক কর্মকর্তা জানান, এসব মামলাটি দেওয়ানী আদালতে মামলার মাধ্যমে মালিকানা নিষ্পত্তি করা উচিৎ ছিল।

বার্তা প্রেরক
এ সিদ্দিকী শাহীন
মেহেরপুর প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন