রাজশাহীতে তেইশ লক্ষাধিক টাকার খাঁটি গুড় বিক্রি

সফল তরুণ নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন স্বতাধিকারী, বাঁধন ফুড ও রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি, উইমেন এন্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই ‘ছোটবেলা থেকেই ইচ্ছা নিজের পরিচয়ে পরিচিত হব। তাই অন্য কোন পেশার চেয়ে ব্যবসাটাকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছি। কারণ আমার কাছে মনে হয়েছে এটা একাটা স্বাধীন পেশা। আর এখানে নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার সুযোগ আছে। তাই নিজেকে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত করার জন্য বিভিন্ন সময় নানান ধরণের ব্যবসায়িক উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। কিন্তু তাতে ব্যার্থ হয়েছি। পরিবার থেকে নেওয়া অর্র্থগুলো বিনিয়োগ করে জলে গেছে। তবুও থেমে থাকি নি। নিজের মধ্যে আগ্রহ ধরে রেখেছি। বারবার চেষ্টা করে গেছি’।

কথাগুলো এক নাগারে বলে গেলেন হার না মানা একজন সফল তরুণ নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন। তিনি ‘বাঁধন ফুড’ (ট্রেড লাইসেন্স নং-২৬০/পারিলা,পবা, রাজশাহী) এর স্বতাধিকারী ও উইমেন এন্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই’র রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি। তার বাড়ি রাজশাহীর পবা উপজেলার বজরাপুর এলাকায় হলেও বর্তমানে থাকেন রাজশাহীর রাজপাড়া থানাধীন পুলিশ লাইন এলাকায়। তিনি জেলার পবা থানাধীন হাট রামচন্দ্রপুর ডিগ্রি কলেজে ডিগ্রিতে পড়াশোনা করছেন।

তরুণ নারী উদ্যোক্তা মাহবুবা আক্তার জাহান বাঁধন জানান, ‘বারবার ব্যার্থ হওয়ার পরও আমি হাল ছেড়ে না দিয়ে বরং শক্ত হয়ে চেষ্টা করেছি। এভাবেই চেষ্টা করতে গিয়ে ‘উইমেন এন্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই’ গ্রুপে যুক্ত হই। সেখানে যুক্ত হয়ে নতুন উদ্যোগের উৎসাহ পাই। ব্যবসা করে সফলতা অর্জন করার মত আইডিয়া বা কনসেপ্ট পাই। সেটা নিয়ে অগ্রসর হই।’

কিভাবে উই গ্রুপে যুক্ত হওয়ার এমন প্রশ্নের উত্তর দিয়ে গিয়ে বলেন, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত সংবাদে জানতে পারি যে একজন নারী উদ্যোক্তা স্বপরিবারে অগ্নিদগ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। সেই সংবাদের মধ্যেই উই সম্পর্কে জানতে পারি। উনিও খুব সম্ভত উই এর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। পরে এ অগ্নিদগ্ধ সংক্রান্ত বিষয়ে একটি শোক বার্তা লিখে উই গ্রুপে প্রথম পোষ্টটি করি। সেখান থেকেই আমার যাত্রা শুরু উই গ্রুপে।’
শুরুতেই পন্যকে নয় বরং নিজেকে পরিচিত করে তোলার উদ্দেশ্যে রাজশাহী জেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ও দর্শনীয় স্থানগুলো নিয়ে গ্রুপে পোষ্ট দিতাম।

এর মাধ্যমে খুব অল্পসময়ের মধ্যেই গ্রুপে পরিচিতি লাভ করি। পরিচিত লাভের পরে রাজশাহীর বিখ্যাত আম নিয়ে পোষ্ট দেই। সেখানে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেই খাঁটি পন্যের নিশ্চয়তার। চ্যালেঞ্জমত নিজস্ব জমিতে উৎপাদিত ভেজালমুক্ত খাঁটি পন্য ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিতে সক্ষম হই। যা গ্রুপের সকলের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে ও গ্রহণযোগ্যতা পায় এমনটাও জানান তিনি।

এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, আমের মৌসুম শেষ হওয়ার আগেই চিন্তা কির নিজের ব্যবসাকে কিভাাবে টিকিয়ে রাখা যায়। সেই চিন্তা থেকেই মাথায় আসে ভেজালমুক্ত খাঁটি খেজুরের গুড়ের। যেই চিন্তা সেই কাজ। শুরু করে দিই গুড় নিয়ে কাজ। হতাশ হতে হয়নি। আমের মতই বরং বলা যা তার চেয়েও বেশি সাড়া ফেলে খেঁজুরের গুড়। শুধু আম যেখানে বিক্রি হয় এক লক্ষ টাকার মত সেখানে উই’তে প্রায় তেইশ লক্ষাধিক টাকার খাঁটি খেঁজুরের গুড় বিক্রি করি। মাত্র তিন মাসে প্রায় পনের হাজার কেজিরও বেশি খেঁজুরের গুড় বিক্রি হয়।

আম আর খেঁজুরের গুঁড়ের পাশাপাশি তিনি ঘরোয়া ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন রকমের খাঁটি মসলা, দেশি হাস-মুরগি, গরু-ছাগলের মাংশ, মেশিনের ও গরুর ঘাঁনিতে ভাঙ্গা সরিষার তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পন্য বিক্রি করতে থাকে। এদিকে স্পেশাল আইটেম হিসেবে তার নিজস্ব পদ্ধতিতে উৎপাদিত ঝালমুড়ি মশলার বিক্রিও চলে। যা বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করতে সক্ষম হয়। ফলে গত ফেব্রুয়ারী মাস থেকে শুরু করে চলতি মে মাসের প্রথম সপ্তাহ অর্থাৎ রমজান মাস পর্যন্ত তিনি শুধুমাত্র ঝালমুড়ি মসলা বিক্রি করেছেন প্রায় দেড় লক্ষাধিক টাকার।

সফল নারী উদ্যোক্তা বাঁধন বলেন, “নারীরা কেন পুরুষের আয় রোজগারের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে বাড়িতে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকবে? সেটা আমার কাম্য নয়। এই আদি প্রথাকে ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হয়েছি। আমি নিজে আমার সংসারের দায়িত্ব নিয়েছি। ছেলে-মেয়েদের ব্যায়ভার গ্রহণ করেছি। আমি মনে করি পুরুষ যদি স্বামী হিসেবে স্ত্রী আর সন্তানদের দায়িত্ব নিতে পারে তবে নারী কেন স্ত্রী হিসেবে স্বামী ও সন্তানদের দায়িত্ব নিতে পারবে না?” এখনও সফল উদ্যোক্তা হতে পারি নি বলে মন্তব্য করে হার না মানা এই নারী উদ্যোক্তা বলেন, ‘আমি মনে করি আমার শেখার এখনও বাকি আছে।

অনলাইনে সফল উদ্যোক্তা হতে হলে যেসব জ্ঞান, দক্ষতা আর অভিজ্ঞতা থাকা প্রয়োজন সেইসব এখনও পূর্ণতা পায় নি। অর্জন করতে পারি নি। ’উইমেন এন্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই’র উদ্যোক্তা ও চেয়ারম্যান এবং ই-কমার্স এ্যসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)’র জয়েন্ট সেক্রেটারি নাসিমা আক্তার নিশার প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে তিনি আরো বলেন, ‘তিনি আমাকে উইমেন এন্ড ই-কর্মাস ফোরাম-উই’র রাজশাহী জেলা প্রধান হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে রাজশাহী সকল উদ্যোক্তাদের সঙ্গে নিয়ে পথচলার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। নাসিমা আক্তার নিশা আপুর কাছে থেকে প্রতিনিয়ত নানা ধরণের দিকনিদের্শনা ও পরামর্শ পাচ্ছি। যা আমাকে সমৃদ্ধ করছে।

বার্তা প্রেরক
মোঃ শামীউল আলীম শাওন
রাজশাহী প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন