ঠাকুরগাঁওয়ে পুরুষহীন ৮টি পরিবার, নিরাপত্তা চেয়ে সংবাদ সম্মেলন

ঠাকুরগাঁওয়ে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধে হামলার শিকার কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

শুধু তাই নয় প্রতিপক্ষ ও স্থানীয় পুলিশি হয়রানীর ভয়ে ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারের ৮ জন পুরুষ।

আইনশৃংখলা বাহিনীর কাছে গিয়ে ঠাই না পেয়ে রবিবার সকালে ঠাকুরগাঁও রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে নিরাপত্তা চেয়েছে পরিবারটির নারী সদস্যরা।

সংবাদ সম্মেলনে হামলার শিকার পরিবারের পক্ষে মাসুমা সুলতানা অভিযোগ করেন, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি দুপুরে জমি দখলকে কেন্দ্র করে জেলা শহরের এ্যাসিল্যান্ড বস্তির আদম আলী ও তার ছেলে শাকিলসহ তার সন্ত্রাসী বাহিনীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের বাড়ীতে হামলা চালায়। পরে আমরা বাধা দিলে সন্ত্রাসীদের ধারালো অস্ত্রে গুরুতর আহত হই।

তিনি আরও বলেন, শুধু তাই নয়, আহতদের হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নিয়ে গেলে হাসপাতালের ভিতর আমাদের লোকজনের উপর হামলা চালায় শাকিল বাহিনী। এ সময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ভয়ে অন্যত্র গিয়ে আশ্রয় নেয়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার আগেই পালিয়ে যায় শাকিল বাহিনী।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মাসুমা আরও জানান, ঘটনার পরের দিন আমার দেবর রুবেলকে সদর উপজেলার জামুরিপাড়া বাসা থেকে তুলে এনে বেরধরক মারপিট করে মৃত ভেবে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যায় শাকিল ও সোহেলসহ তাদের সন্ত্রাসী বাহিনী। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

জানা গেছে, ওই এলাকার প্রায় তিন একর জমি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আদম আলী ও রেজাউলের মধ্যে আদালতে মামলা চলমান। রেজাউলের পরিবারের দাবি দুটি মামলার রায় তাদের পক্ষে পেয়েছেন তারা।

ওই পরিবারের বিউটি আক্তার অভিযোগ করে বলেন, আদম আলী একজন মাদক ব্যবসায়ী, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ। এছাড়া আদম আলী’র ছোটভাই সোহেল রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে এলাকায় ত্রাসের ও মাদকের রাজত্ব কায়েম করেছে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে আমরা আজ বাড়ি ছাড়া হয়েছি।

অথচ আদম আলীর সন্ত্রাসী বাহিনী আমাদের উপর হামলা চালিয়ে উল্টো মিথ্যা মামলা দিয়ে পুলিশি হয়রানী করাচ্ছে। এ অবস্থায় আমাদের বসতভিটায় পরিবারের সদস্যরা প্রবেশ করতে গেলে অনবরত প্রাণ নাশের হুমকি দিচ্ছে। বসতবাড়িতে রেখে আসা আসবাপত্র ভাংচুরসহ ব্যবহৃত মোবাইল, লালন পালনের হাঁস, কবুতর, গরু, বাইসাইকেল, স্বর্নলঙ্কারসহ কাপড় চোপড় লুট করে নিয়ে গেছে তারা।

এ ঘটনার পর আমরা দিশেহারা হয়ে জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সদর থানায় অভিযোগ দিতে গেলে ওসি আমাদের মামলা না নিয়ে উল্টো দুর্ব্যবহার করেন। কুলকিনারা না পেয়ে সংবাদ সম্মেলন করতে বাধ্য হয়েছি। আদম আলী ওই এলাকার অনেকের জমি জোরপূর্বক দখল করে নিয়েছে। তাছাড়া আদম আলী ও তার সন্ত্রাসীপুত্র শাকিল প্রশাসনের দেয়া এসিল্যান্ড বস্তির নাম পরিবর্তনের পায়তারা করে আদম নগর বানানোর চেষ্টা করছে। অথচ কোন জায়গায় আদম নগর বলে কোন গ্রাম নেই।

সংবাদ সম্মেলনে পরিবারের সদস্য বিউটি আক্তার, মাসুমা সুলতানা, জোসনা বেগম, এলাকাবাসি রাসেল ও ইব্রাহিমসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

জানতে চাইলে ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি তানভীরুল ইসলাম জানান, রেজাউলের পরিবারের সাথে পুলিশ কোন ধরনের দুর্ব্যবহার করেনি। এটা মিথ্যা কথা। তাছাড়া আমরা খোজ খবর নিয়েছি আদম আলীর বিরুদ্ধে কোন মাদকের অভিযোগ পায়নি। এ্যাসিল্যান্ড বস্তির দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা পুলিশ গুরুত্বের সাথে তদন্ত করছে।

উল্লেখ যে, গত ২৩ ফেব্রুয়ারি জমি দখলকে কেন্দ্র করে শহরের এ্যাসিল্যান্ড পাড়ায় দুপক্ষের সংঘর্ষে ৫ জন আহত হয়। আহতরা এখনও ঠাকুরগাঁও আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আদম আলীর লোকজন থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে। অন্য পক্ষটি থানায় মামলা না নেওয়ার কারণে আদালতে স্মরণাপন্ন হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানা গেছে।

বার্তা প্রেরক
অন্তর রায় প্রিন্স
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন