নীলফামারীর কিশোরগঞ্জের বাহাগিলী ইউনিয়নের কাচারী পাড়া গ্রামে গৃহহীন, দুর্দশাগ্রস্ত ও ছিন্নমূল পরিবারের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হয়েছিল আশ্রায়ন প্রকল্প। নানা বিপর্যয়ে জর্জরিত সহায় সম্বলহীন ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষ গুলোর বেঁচে থাকার ঠাঁই হয়েছে এখানে। এটি প্রতিষ্ঠার ২ যুগ পেরিয়ে গেলেও এখানকার মানুষগুলো পাননি বেঁচে থাকার পরিপূর্ণ জীবন।
জানা গেছে, ৯৬ দশকের দিকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে বাহাগিলী মৌজার খাস জমিতে ৮০টি পরিবারের জন্য আশ্রায়ন প্রকল্প নির্মান করা হয়। ওই আশ্রায়ন প্রকল্পের পূর্বের কাচারীপাড়া নাম পরিবর্তন করে আবাসনের বাসিন্দারা নাম করন করেন ৮০ গ্রাম। নির্মানের অদ্যবধি আবাসনের অবকাঠামো সংস্কার ও মেরামত না করায় অব্যাস্থাপনায় জরাজীর্ণ ভাঙ্গাচোরা ঘরে অনেকটাই মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা। সরেজমিনে দেখা গেছে, ২টি ব্যারাকে ৮০টি পরিবারের জন্য নির্মিত আবাসনের ইউনিট গুলোর বেশিরভাগ ছাউনি, বেড়া, দরজা, জানালা নষ্ট হয়ে ব্যবহারে অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
বাঁচার আকুতিতে জরাজীর্ণ ঘরের চালে পলিথিন, ছন,ঘরের বেড়ায় পুরনো কাপড় দিয়ে কোন রকমে বসবাস করছেন। সামান্য বৃষ্টি এলে আশ্রায়নের বাসিন্দাদের তল্পিতল্পা ভিজিয়ে গিয়ে ঘুম হারাম হয়ে যায়। বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যায় ঘরের মেঝে গুলো।আবাসনের ৮টি টিউবওয়েল পরিত্যক্ত হয়ে পড়েছে। প্রতি ১০ পরিবারের জন্য ৮টি টয়লেট স্থাপন করা হলেও সবগুলো টয়লেট পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। বর্ষাকালে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্দশার অন্ত থাকে না। অতিবৃষ্টিতে ডুবে যায় আবাসন এলাকা। তখন পরিবার-পরিজন,গৃহপালিত পশুসহ তাদের ঠাঁই নিতে হয় আশপাশের এলাকায়। পূর্নবাসিতদের জন্য বিভিন্ন উৎপাদনমুখী আয়বর্ধকের ব্যবহারিক ও কারিগরি নেই কোন প্রশিক্ষণ।
অন্য কোন কর্মসংস্থান না থাকায় চরম দারিদ্র আর অভাবের মধ্যে দিন কাটছে তাদের। বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতা, ভিজিএফ, ভিজিডি কার্ডের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত বলে অভিযোগ করেন আবাসনের বাসিন্দারা। আশ্রয়ন প্রকল্পে পূর্নবাসিতরা জানান, নির্মাণের পর সংস্কার না করায় বেশিরভাগ ইউনিট গুলোর টিনের চালা দিয়ে পানি পড়ে। শীতে হিমহিম বাতাস আর বর্ষাকালে ঝড়বৃষ্টিতে বসবাস করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। বৃদ্ধ নাজিমুলের জায়গা জমি নেই। ভূমিহীন এ ব্যক্তির ২যুগ আগে ঠাঁই হয় এ আশ্রায়ন প্রকল্পে। বর্তমানে তার পরিবারের ৭সদস্য। গাদাগাদি করে একটি কক্ষে দিন কাটাচ্ছেন পরিবার নিয়ে।
আঃ মান্নান জানান, জননেত্রী শেখ হাসিনা অনেক গৃহহীনদের ঘরবাড়ি তৈরী করে দিচ্ছে অথচ ২যুগ আগে আশ্রায়ন প্রকল্পে মাথা গোঁজার ঠাই টুকু করে দিয়ে সে অবধি কেউ আর আমাদের কোন রকমের খোঁজ খবর নেয়নি। আবাসন প্রকল্পের সভাপতি মতিয়ার রহমান জানান, আমাদের প্রধান সমস্যা হচ্ছে মাথা গোঁজার ভাঙ্গাচোরা ঘর,বাথরুম, কল। এগুলো অনেক আগেই নষ্ট হয়ে গেছে। ২ যুগ আগে নির্মাণ করা হলে আজও মেরামত করা হয়নি। এজাবুল জানান, সংস্কারের অভাবে অনেক ঘরে থাকার মতো অবস্থা নেই। একারণে আশ্রয়নের অনেক বাসিন্দা আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন। এ ব্যাপারে কিশোরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার রোকসানা বেগম বলেন, সরকারি বরাদ্দ না থাকায় আশ্রায়ন প্রকল্প গুলো সংস্কার করা সম্ভব হয়নি। বরাদ্দ পেলে সংস্কার করা হবে।
লাতিফুল আজম নীলফামারী প্রতিনিধিঃ