বাগেরহাটে আদালতের আদেশ উপেক্ষা করে অতিরিক্ত জমি দখল, মাছ ও ফসল লুটের অভিযোগ

বাগেরহাটের ফকিরহাটে মামলায় রায় পেয়ে আদালতের আদেশের থেকে অতিরিক্ত পাঁচ একর জমি দখল, কয়েক লক্ষ টাকার মাছ ও ফসল লুটপাটের অভিযোগ উঠেছে প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে। এই ঘটনায় এলাকাবাসী, রাজনৈতিক নেতা ও জন প্রতিনিধিদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।প্রতিপক্ষের হুমকীতে ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে পরিবারটি।

ঘটনাটি ঘটেছে ফকিরহাট উপজেলার পিলজংগ গ্রামে। ৩৯ নং পিলজংগ মৌজায় প্রায় ৬ একর জমি নিয়ে মৃত কালি প্রসাদ রায় চৌধুরীর ছেলে আশিষ রায় চৌধুরীর সাথে বাগেরহাট জেলা জজ আদালতে একই গ্রামের শেখ আব্দুল মমিন শেখের মামলা চলছিল।এই মামলা চলমান অবস্থায় শেখ আব্দুল মমিন শেখ অন্য একটি মামলা করে সেই মামলায় শেখ আব্দুল মমিন একটি ডিগ্রি পান।ওই ডিগ্রিতে শেখ আব্দুল মমিন বিবাদমান জমির মধ্য থেকে ৫ একর ৯০ শতক জমি প্রাপ্ত হন।কিন্তু থানা পুলিশ, আদালতের প্রোসেস সার্ভার ও আইনজীবীদের সহায়তায় বৃহস্পতিবার (৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ১১ একরের উপরে জমি দখল করে নেন শেখ আব্দুল মমিন ও তার জামাতা গ্রামিন ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সুজন।

বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ওই জমিতে থাকা পুকুরের প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ ও কয়েক লক্ষ টাকার পান লুটে নেয় আব্দুল মমিনের লোকেরা।কয়েক লক্ষ টাকার গাছও কেটে নিয়েছে তারা এমন দাবি ক্ষতিগ্রস্থ আশিষ রায় চৌধুরীর।আদালতের রায় অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমান জমি দখলে নিয়েছেন বলে দাবি করেছেন রায় পাওয়া শেখ আব্দুল মমিন। ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক আশিষ রায় চৌধুরী বলেন, এই জমি নিয়ে আদালতে আমাদের একটি মামলা চলমান রয়েছে। কিন্তু বৃহস্পতিবার সকালে তিন শতাধিক মানুষ এসে আমাদের জমি দখল শুরু করে। আমি সেখানে গেলে দুইজন লোক আমাকে পরিচয় দেয় আমরা আদালত থেকে এসেছি জমি বুঝিয়ে দিতে।

আমি আদালতের নির্দেষ দেখতে চাইলে তারা বলেন আদালতে গিয়ে দেখেন। এর আগে কোন নোটিশ আমাদের কাছে দেওয়া হয়নি। তবে দিনভর যে তান্ডব চালিয়েছে তারা তা অবর্ননীয়।৫ একর ৯০ শতক জমি প্রাপ্তির রায়ের স্থলে তারা প্রায় ১১ একর জমি দখল করে নিয়েছে।১০ লক্ষাধিক টাকার মাছ, কয়েক লক্ষ টাকার পান ও বিপুল পরিমান গাছ কেটে নিয়েছে তারা। এই রায়ের বিরুদ্ধে আমি আদালতে আপিল করেছি। আমরা অতিরিক্ত জমি ফিরে পেতে চাই।

আশিষ রায় আরও বলেন, ওই দিন মোর্তুজা সোহেল আহমেদ নামের একজন আইনজীবী আসছিলেন। তিনি নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিয়েছিলেন।পরে জানতে পারি তিনি বাগেরহাট আইনজীবী সমিতির সদস্য। একজন আইনজীবী কিসের স্বার্থে নিজেকে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট হিসেবে পরিচয় দিলেন বিষয়টি আমরা জানতে চাই। আশিষ রায়ের স্বজনরা বলেন, বৃহস্পতিবার যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তা মুক্তিযুদ্ধের সময়ের চিত্রও হার মানায়। দা, কুড়াল ও লাঠিসোটা নিয়ে তিন শতাধিক মানুষ এসে আমাদের জমি দখল করে নেয়।কারা দখল করছে তা দেখতে গেলে আমাদের বাড়ির নারীদেরকে মারধর করেন।

ওই জমিতে থাকা আমাদের কিছু আশ্রিত মানুষের ঘরবাড়ি ভাংচুর ও মারধর করেন শেখ আব্দুল মমিনের লোকেরা। স্থানীয় অঞ্জন চক্রবর্তী, সৈয়দ ইনসান উদ্দীন, কোহিনুর বেগমসহ কয়েকজন বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এই জমি আশিষ রায় চৌধুরী ও তার বংশের লোকরা ভোগ দখল করে আসছিলেন।কিন্তু হঠাৎ করে দেখলাম আব্দুল মোমিন ও তার জামাতা গ্রামিন ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম সুজনের নেতৃত্বে বহিরাগত লোক এসে ওই জমি দখল করে নেয়। ওই জমিতে থাকা পুকুরের মাছ, বরাজের পান ও বিপুল পরিমান গাছ কেটে নিয়েছে।

একটি জমির রায় পেলে তারা জমি দখল নিবে এটা খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু এক সাথে এত মানুষ দা, কুড়াল, লাটি সোটা নিয়ে জমি দখল, মাছ ও ফসল লুটের ঘটনা দেখে আমরা হতবাক। আশীষ রায় চৌধুরীদের কাছ থেকে জমি ক্রেতা নুরজাহান বেগম বলেন, ক্রয়সূত্রে আমরা দীর্ঘদিন ধরে এই জমিতে বসবাস করে আসছি। কিন্তু বৃহস্পতিবার শেখ আব্দুল মমিনের লোকেরা এসে আমাদের বাড়ি থেকে নেমে যেতে বলেন। আমাদের বাড়িঘর ভাংচুর করে। আমরা যদি জমি না পাই এতদিন কেন কথা বলেনি তারা।

আদালতের নির্দেষের বাইরে যদি কোন জমি দখলের ঘটনা ঘটে সেক্ষেত্রে সুষ্ঠ তদন্তপূর্বক ঘটনার বিচার দাবি করেন স্থানীয় ইউপি সদস্য শেখ মোশারেফ হোসেন। পিলজংগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি অঞ্জন কুমার দে বলেন, প্রশাসনের কিছু মানুষসহ বহিরাগত অনেক লোক এসে ওই জমিতে থাকা মানুষের ঘর বাড়ি থেকে নামিয়ে দিয়েছে। ঘেরের মাছ, বরাজের পান লুট ও গাছ কেটে নিয়ে গেছে। এখনও তারা গাছ কেটে নিচ্ছে। এখানে একটি বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। জমিকে কেন্দ্র করে এখানে যে হিংসাত্মক কাজ চলছে তা মেনে নেওয়া যায়না।এখানে মূর্তি ভাংচুরের মত ঘটনাও ঘটেছে।

আমরা এই বিষয়ের একটি সুষ্ঠ সমাধান চাই। পিলজংগ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোড়ল জাহিদুল ইসলাম বলেন, এত ব্যস্ত হয়ে তারা জমি দখল ও লুট করেছে তাতে মনে হয়েছে তারা আদালতের রায় পায়নি, দুই চারদিনের জন্য এসেছে।বিশৃঙ্খলা না করে আদালতের রায় অনুযায়ী সামাজিকভাবে আলোচনা সাপেক্ষে সমাধান করা যেত। ফকিরহাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সুধীর কুমার মিত্র বলেন, আদালত যেভাবে আদেশ দিয়েছে সেভাবেই কাজ করা উচিত ছিল। কিন্তু তারা যেভাবে কাজ করেছে তা খুবই দুঃখজনক ও বেআইনি।

আদালতের রায় পাওয়া শেখ আব্দুল মমিন বলেন, আদালতের নির্দেষ অনুযায়ী যেটুকু জমি আমরা পেয়েছি শুধু সেই জমিটুকু দখল করেছি। ওই জমির ঘেরে থাকা মাছ ও বিভিন্ন ফসল তারা আগেই উঠিয়ে নিয়েছেন। আর ঘেরের জাল টেনে তেমন কোন মাছ পাইনি।জাইলাদের টাকাও ওঠেনি। ঘটনার দিন আইন শৃঙ্খলার দায়িত্বে থাকা ফকিরহাট থানার এসআই নজরুল ইসলাম বলেন, আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলাম। আমি থাকা অবস্থায় আদালতের নির্দেষের বাইরে কোন ঘটনা ঘটেনি।

বার্তা প্রেরক
তানজীম আহমেদ
বাগেরহাট প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন