শিবচরে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই বসতভিটা উচ্ছেদের অভিযোগে মানববন্ধন

মাদারীপুরের শিবচরে উপজেলায় হাইটেক পার্ক নির্মাণের জন্য প্রস্তাবিত স্থানে ক্ষতিপূরণ ছাড়াই স্থাপনা ও গাছপালা উচ্ছেদ করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় বুধবার (২৭ জানুয়ারি) দুপুরে স্থানীয়রা এর প্রতিকার চেয়ে শিবচরের বড় কেশবপুর এলাকায় মানববন্ধন করেছে। তবে জেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা তাদের ক্ষতিপুরণ দেওয়া হবে। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার কুতুবপুর ও কাঠাঁলবাড়ী ইউনিয়নের প্রায় ৭০ একর জমি নিয়ে হাইটেক পার্ক নির্মাণের প্রস্তাব করা হয়েছে।

স্থানীয়দের দাবি, প্রথমে ৪ ধারা নোটিশের মাধ্যমে জমি অধিগ্রহণ করার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্থদের কোন প্রকার ক্ষতিপূরণ ও নোটিশ ছাড়াই গত ১৮ জানুয়ারি এক সপ্তাহের মধ্যে স্থাপনা ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশনা দিয়েছে জেলা প্রশাসন থেকে। এদিকে এক শ্রেণির দালালরা নতুন নতুন ঘর বাড়ি তৈরী করে ও গাছ লাগিয়ে অতিরিক্ত বিল তুলে নেয়ার পায়তারা করছে বলেও এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শিবচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান, ওসি মো. মিরাজ হোসেনের নেতৃত্বে একাধিক ম্যাজিস্ট্রেট ও বিপুল সংখ্যক পুলিশ বাহিনীর সদস্য ওই প্রকল্প এলাকায় অভিযান শুরু করে। প্রশাসন এ পর্যন্ত শতাধিক ঘরবাড়ি উচ্ছেদ করেছে। এতে করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, স্থানীয় বাসিন্দা আনিস মোল্লা বড় কেশবপুর এলাকায় সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আম বাগান গড়ে তুলেছে। বাগানে অনুমানিক ১৪/১৫শ আম গাছ আছে। কয়েক বছর ধরে এই আম বাগানের আম বিক্রি করেই সংসার চলছিল তার। হঠাৎ করে এ উচ্ছেদের কথা শুনে তার মাথায় হাত পড়েছে। স্থানীয় আরেক বাসিন্দা নাদের ঢালী তিনি কয়েক বছর আগে পদ্মা সেতুর বেড়ি বাঁধের কারণে ঘরবাড়ি হারায়। এরপর এসে বসতি স্থাপন করেছেন কেশবপুর এলাকায় নিজ জমিতে। পরিবারটি এখন জমি থেকে উচ্ছেদের কথা শুনে দিশেহারা। এমন চিত্র পুরো এলাকা জুড়ে দেখা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা সৈয়দ আলী মেম্বার বলেন, আমরা বিভিন্ন সময় জমি জমা হারিয়েছি। এখন সরকার যদি ক্ষতিপূরণ ছাড়া উচ্ছেদ করে তাহলে যাবো কোথায়। নতুন ঘরবাড়ি যদি কেউ তুলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। আমরা চাই সরকার প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থদের ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। যদি ক্ষতি পূরণ নাই দিতে পারে তাহলে সরকার অন্য কোথাও তাদের প্রকল্প স্থাপন করুক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বাসিন্দা জানান, কিছু অসাধু লোক অতিরিক্ত বিল নিতে নতুন নতুন ঘর বাড়ি তুলেছে। তবে আমরা চাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা যাতে ক্ষতিপূরণ পায় সেই ব্যবস্থা করা হোক। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.আসাদুজ্জামান বলেন, এ প্রকল্পটি এখানে হওয়ার খবরে দালালচক্র সরকারের কোটি কোটি টাকা লোপাটের জন্য শত শত স্থাপনা বাগান স্থাপন করে। এ স্থাপনাগুলো দিয়ে দালালচক্র পদ্মা সেতুর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে টাকাও উত্তোলন করে।

আমরা এ স্থাপনাগুলো সরিয়ে নিতে সাতদিন সময় বেধে দিয়েছিলাম। ১০ দিনের মাথায় এসে মাননীয় চীফ হুইপ স্যার ও জেলা প্রশাসকের নির্দেশে অবৈধ স্থাপনাগুলো অপসারন শুরু করেছি। অনেকে নিজে থেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নিচ্ছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন, অবৈধ স্থানপা উচ্ছেদ করা হচ্ছে। পুরানো ঘরবাড়ি ও গাছপালা উচ্ছেদ করা হবে না। প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্থরা ক্ষতিপূরণ পাবেন।

বার্তা প্রেরক
মাসুদ রেজা ফিরোজী
মাদারীপুর প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন