ছোটবোনকে মাছের ভর্তা দেওয়ায় প্রাণ দিতে হয়েছে বড় বোনকে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়মনসিংহের গৌরীপুরে। পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছে।
শ্বরগঞ্জ পৌরসভার কাঁকনহাটি গ্রামের বাচ্চু মিয়ার মেয়ে হ্যাপী আক্তার (২৬)। গত ৫ বছর পূর্বে হ্যাপীর বিয়ে হয় পাশ্ববর্তী গৌরীপুর উপজেলার সহনাটি ইউনিয়নের পাছার গ্রামের প্রয়াত আবুল হাসেমের ছেলে শহীদুল ইসলাম (৩২) এর সাথে। হ্যাপীর ৯ মাস বয়সী সাজিদ হাসান সানি নামে একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। স্বজনরা জানায়, হ্যাপীর বিয়ে হবার সাতদিনের মাথায় ছোট বোন লিপি আক্তার বড় বোনের দেবর জায়েদ উল্লাহর সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়। শ্যালিকাকে ছোটভাই বিয়ে করেছে এ বিষয়টি শুরু থেকেই স্বাভাভিকভাবে নেয়নি। এ নিয়ে হ্যাপীর ওপর নানা ভাবে অত্যাচার চালাতো শহীদুল। সংসারের টুকটাক বিষয় নিয়ে শহীদুল ইসলামের পাশাপাশি দেবর জায়েদও মারধর করতো হ্যাপীকে।
গত সোমবার রাতে রান্নাবান্না শেষ করে হ্যাপী ছোট বোন লিপিকে একটু মাছের ভর্তা দেয় খাওয়ার জন্য। তা দেখে হ্যাপীর ওপর শুরু হয় অত্যাচার। মারধরের এক পর্যায়ে লিপি বোনকে রক্ষা করতে গেলে তাকে পাশের একটি কক্ষে দরজা আটকে মারধর করতে থাকে স্বামী। ওই অবস্থায় জ্ঞান হারিয়ে ফেললে স্থানীয় চিকিৎসক নিয়ে স্যালাইন দিয়ে চেতনা ফেরানোর চেষ্টা করে। কিন্তু কাজ না হওয়ায় রাত ১ টার দিকে ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পূর্বে হ্যাপীর মুখে ইঁদুরের ‘বিষ’ দেওয়া হয় বলে পরিবারের অভিযোগ। পরে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়। কিন্তু কিছু দূর যেতেই মৃত্যু হয় হ্যাপীর।
খবর পেয়ে মঙ্গলবার সকালে ঈশ্বরগঞ্জ থানার একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। ঘটনার বিস্তারিত যেনে গৌরীপুর থানা পুলিশের কাছে খবর পাঠানো হয়। পরে বেলা ২ টার গৌরীপুর থানার এসআই কার্তিক চন্দ্র রায় লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। মঙ্গলবার দুপুরে নিহত হ্যাপীর বাড়িতে গেলে বোন ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী লিপি আক্তার বলেন, সংসারের নানা বিষয় নিয়ে তার বোনের ওপর অত্যাচার চালাতো শহীদ। সোমবার রাতে তাকে একটু মাছের ভর্তা দেওয়ায় তার বোনকে মারধর শুরু করে। তিনি ফেরাতে গেলে তাকে পাশের রুমে আটকে মারধর চলে। পরে ইঁদুরের বিষ খাওয়ানো হয় তার বোনকে। অশ্রসিক্ত কণ্ঠে বোন হত্যার বিচার দাবি করেন তিনি।
নিহতের সুরতহাল করেছেন গৗরীপুর থানার এসআই কার্তিক চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, নিহতের মাথায় সামান্য ফুলা চিহ্ন রয়েছে। এবং ডান হাতেও ফুলা রয়েছে। এছাড়া অন্য কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। গৌরীপুর থানার ওসি মো. বোরহান উদ্দিন বলেন, ঘটনার পর থেকে নারীর স্বামী ও পরিবারের লোকজন পলাতক রয়েছে। পারিবারিক কলহে নির্যাতনের এক পর্যায়ে বিষপানে মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে তারা তথ্য পেয়েছেন। লাশ উদ্ধার করে মৃত্যুর সঠিক কারণ নিশ্চিত করার জন্য মর্গে পাঠানো হচ্ছে। এ ঘটনায় মামলার প্রস্তুতি চলছে।
বার্তা প্রেরক
আজহারুল ইসলাম জুয়েল
ময়মনসিংহ প্রতিনিধি