পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকার সরকারী সম্পদের বেহাল দশা

দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কোটি টাকার জমি ও ভবন দখল করে কৃষি কাজ ও ব্যবসা সহ বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে কতিপয় ব্যাক্তি ও সংগঠন। ঘোড়াঘাট পৌর এলাকার কাদিমনগরে (থানা সংলগ্ন) নিজস্ব সম্পত্তির উপর এই এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানি নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কয়েক যুগ আগে নিজস্ব ভবন নির্মান করে কার্যক্রম শুরু করেছিল বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো)। প্রজেক্ট শেষ হওয়ায় বেশ কয়েক বছর আগে সব ধরণের কার্যক্রম স্থগিত করে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড। এর পর ২০০৫ সালে নব গঠিত ঘোড়াঘাট পৌরসভার অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যবহারিত হয় ভবনটি। ২০১১ সালে নিজস্ব ভবন নির্মান হলে, নতুন কার্যালয়ে কার্যক্রম শুরু হয় ঘোড়াঘাট পৌরসভার।

তারপর থেকে দীর্ঘ দিন যাবত পড়ে থাকার সুবাধে এই এলাকায় থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের পরিত্যাক্ত ভবন দখল করে বিভিন্ন স্থানীয় সংগঠন নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে এবং ভবনের আশেপাশে বিশাল জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে বালুর ব্যবসা করে আসছে কয়েকজন ব্যাক্তি। এছাড়াও উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় থাকা বাপাউবো’র পানি প্রবাহের ক্যানেলের সরকারী কয়েক বিঘা জায়গা কেটে কেটে নিজেদের দখলে নিয়ে চাষাবাদ করছে বিভিন্ন ব্যাক্তি। কতৃপক্ষের যথাযথ নজরদারী ও স্বদিচ্ছার অভাবে এসব সরকারী সম্পত্তি উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছে না। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন ঘেড়াঘাট উপজেলার নিজস্ব ভবনের একটি রুমে ঘোড়াঘাট থানা প্রেস ক্লাবের সাইনবোর্ড টাঙ্গানো রয়েছে। অপর দুই তিনটি রুমে কোন সাইনবোর্ড না থাকলেও  চেয়ার, টেবিল ও ক্যারামবোর্ড সহ বিভিন্ন জিনিস পত্র রাখা রয়েছে এবং এসব রুমে প্রতিদিন লোকজন নিয়মিত ভাবে উঠাবসা করে।

সেই ভবনের সামনে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিজস্ব সম্পতি ফলমুলের বাগানের উপর বিশাল বালুর স্তুপ করে ব্যবসা করে আসছে ঘোড়াঘাট পৌরসভার হিসাব রক্ষক শাহাদৎ হোসেন। স্থানীয়রা জানায়, ভবনের একটি রুম উপজেলার কয়েকজন সাংবাদিক প্রেস ক্লাব বানিয়ে নিজেদের কার্যক্রম পরিচালনা করে এবং অপর দুটি রুমে ঘোড়াঘাট পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশন অফিস কার্যালয় বানিয়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত করেছে। বর্তমানে সাইনবোর্ড না থাকলেও পৌরসভার বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখানে উঠাবসা করে। ঘোড়াঘাট পৌরসভা সার্ভিস এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ফজলে রাব্বি সরকার লিখন জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভবন থেকে স্থানান্তরিত হয়ে নিজস্ব নতুন ভবনে ঘোড়াঘাট পৌরসভার কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর এই জায়গা দেখভাল করার দায়িত্বে থাকা পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মচারীর কাছে তারা মৌখিক ভাবে অনুমতি নিয়ে পৌরসভার কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ভবনের ১টি রুম ব্যবহার করত এবং করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় দীর্ঘদিন থেকে উঠাবসা না করায় কে বা কাহারা সেখানে অবৈধ ভাবে বালু রেখে ব্যবসা করছে, সে ব্যাপারে তারা কিছু জানেনা।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, আমাদের সম্পত্তি অবৈধ ভাবে ব্যবহারিত হচ্ছে! এটা আমার জানা নেই। ঘোড়াঘাট উপজেলায় আমাদের বেশ কয়েক বিঘা সম্পত্তি আছে। সরকারী সম্পদ দখল করে কোন কার্যক্রম পরিচালনা করা বা সরকারী সম্পদের অনুমতি ব্যতিত ব্যবসা বানিজ্যে করা আইন বহিভূত কাজ। আমরা কাউবে বা কোন সংগঠনকে আমাদের পরিত্যাক্ত ভবন বা জমি ব্যবহার করার অনুমতি দেইনি। যদি কেও ব্যবহার করে তবে সরকারী সম্পত্তি ছেড়ে দিতে আমরা তাদেরকে নোটিশ পাঠাব।

বার্তা প্রেরক
আবু সুফিয়ান
ঘোড়াঘাট (দিনাজপুর) প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন