বগুড়ায় লকডাউনে গভীররাতে চুরি “এক বাচ্চার ফোনে ধরা পড়লো চোর “

বগুড়া সদর থানার বরাত দিয়ে জানা যায় মঙ্গলবার গভীররাত আনুমানিক ২টার সময়  একটি ফোন আসে বগুড়া সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামানের ফোনে। “ওসি আঙ্কেল” “ওসি আঙ্কেল” একটা চোর দোকানের তালা ভাঙছে সাথে সাথেই ওসি বদিউজ্জামান ওয়ারলেসে কল দিয়ে দ্রুততম সময়ে বাচ্চাটির থেকে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী শহরের শেরপুর রোডের স্থানীয় রেড চিলি হোটেলের সামনে টহলে থাকা পুলিশ সদস্যদের যেতে বলেন চোরকে ধরে দোকানে চুরি ঠেকানোর লক্ষ্যে।

তারা সেখানে উপস্থিত হওয়ার পর দেখতে পান ইতিমধ্যেই চোর তার সমস্ত কাজ  সম্পন্ন করেছে। হঠাৎ সে স্থানে উপস্থিত স্টেডিয়াম পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই জাহাঙ্গীর আলম এবং তার পরেই ওয়ারলেসে ডাক শুনে উপস্থিত ওসি (তদন্ত) রেজাউল করিম রেজাও। করোনায় শুনশান রাস্তায় সেই দোকানের সামনে ঐ ব্যক্তি কি করে এমন নানা প্রশ্ন চলছে সন্দেহাতীত জিজ্ঞাসাবাদ চলছে  এর মধ্যেই আবার সদর থানার ওসির কাছে ফোন আসে, “ওসি আঙ্কেল” আপনার পুলিশ সদস্যরা যার সাথে কথা বলছে সেই চোর, উনাকে ধরতে বলেন’। ওসি সদর আবার ফোনের মাধ্যমে সেখানে থাকা পুলিশ সদস্যকে সেই চোরের ব্যাপারে নিশ্চিত করেন।

পরবর্তীতে তাকে তল্লাশি করে পাওয়া যায় একগোছা নকল চাবি এবং তালা ভাঙ্গার সরঞ্জামাদী। জানা যায় তার নাম তানভীর হক উল্লাস (৩৮) শহরের সূত্রাপুর এলাকার বাসিন্দা। তবে সে নাকি পেটের দায়ে এই চুরি করছিল। এই তানভীর হককে ওসি সদর বদিউজ্জামানই ফোন পেয়ে মাত্র ৩ দিন আগেই  তার বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন পুরো এক সপ্তাহের খাদ্যসামগ্রী ভরা একটি ব্যাগ।

যখন তাকে জিজ্ঞাসা করা হয় আপনার খাবার তো শেষ হয়নি তাহলে আপনি চুরি করছিলেন কেন? পুলিশের এমন প্রশ্নে ভাষা হারিয়ে ফেলে ভদ্রলোকের লেবাস পড়া চোর তানভীর। উক্ত ঘটনার প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই তার বিরুদ্ধে এসআই জাহিদুল ইসলাম বাদী হয়ে সদর থানায় চুরির উদ্দেশ্যে দোকানের তালা ভেঙ্গে অপরাধ করায় পেনাল কোড ৪৬১/৫১১  ধারায় একটি মামলা ঋজু করেছে এবং গ্রেফতার পরবর্তী বুধবার তাকে কোর্টেও প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানান সদর থানার এসআই সোহেল রানা।

সোর্সের মতো প্রতিনিয়ত এমন ফোনের মাধ্যমে অপরাধকে রুখে দেওয়ার বিষয়ে সদর থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম বদিউজ্জামান বলেন, সদর থানায় যোগদানের পরে নিয়মিত দাপ্তরিক কাজের ফাঁকে পুলিশ ভীতি কাটানো এবং জনবান্ধব পুলিশিং এর কার্যক্রম হিসেবে বিভিন্ন স্কুল কলেজে গিয়ে নিয়মিত শিক্ষার্থীদের সাথে সময় কাটাতেন তিনি। বর্তমানে সদরের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের ফোনে তার নম্বর সেভ করা আছে ‘ওসি আঙ্কেল’ নামে। অবাক করা বিষয় হচ্ছে তিনি তাদের সাথে সময় কাটিয়ে চলে আসলেও তারা কিন্তু তাদের আঙ্কেলকে ভোলেনা।

নিয়মিত ফোন করে তাকে এলাকা ভিত্তিক নানা অপরাধ যেমন: ইভটিজিং, মাদক, চুরি, নারী ও শিশু নির্যাতন, বাল্যবিবাহের মতো নানা অপরাধের তথ্য দেয় যার মাধ্যমে এখন পর্যন্ত গতকালের চুরি আটকানোর মতো অনেক অপরাধ সংগঠিত হওয়ার পূর্বেই বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। শিক্ষার্থী এবং তাদের অভিভাবকদের এমন ভালবাসা নিয়ে সর্বদা তাদের ওসি আঙ্কেল হিসেবেই থাকার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে ভাল কাজের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চান সদরের এই জনবান্ধব পুলিশ কর্মকর্তা এস. এম বদিউজ্জামান।

বার্তা প্রেরক
মোঃ আতিকুর রহমান
বগুড়া প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন