মাগুরায় পানি উঠছে না টিউবওয়েলে, বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট

মাগুরা প্রতিনিধিঃ রক্সী খান 

মাগুরার জেলার ৪ টি উপেজলায় বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। যতোই দিন গড়াচ্ছে, ততোই যেন নিচে চলে যাচ্ছে ভূ-গর্ভস্থ পানির স্তর। অকেজো হয়েছে জেলার ২০ হাজারেরও বেশি টিউবওয়েল । এসব টিউবওয়েলে পর্যাপ্ত পানি না ওঠায় চরম দূর্ভোগের শিকার হয়েছেন জেলার কমপক্ষে ২৫ হাজারেরও বেশি পরিবার। প্রচন্ড খরতাপ, ভ্যাপসা গরম ও পানি সংকটে নেমে এসেছে অসহনীয় দুর্ভোগ। এর মধ্যে শ্রীপুর উপজেলায় বেশী সমস্যা দেখা দিয়েছে।

মাগুরা জেলার বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, টিউবয়েলে পানি না ওঠার কারণে পুকুরের পানি দিয়েই চলছে হাজারও মানুষের দৈনন্দিন কার্যক্রম। হঠাৎ দু-একটি বাড়িতে তারাপাম্প টিউবয়েল থাকলেও সেখানে একটু পানি নেওয়ার জন্য দীর্ঘ লাইনে উপচেপড়া ভিড় জমাচ্ছেন গৃহবধুরা। সামর্থবান অনেকে আবার টিউবয়েলে পানি না পেয়ে সাব-মারসিবল পাম্পের মাধ্যমে পানি তোলার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু সেখানেও সমস্যা দেখা দিয়েছে, পানি উঠছে না ।

মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার ঘাসিয়াড়া গ্রামের আমজেদ, তাহাজ্জত,শাজাহান, দুলাল, মুক্তার, মকিদুল ইসলাম, ভোলা, ভ্যানচালক লাল চান ও কৃষক বক্করসহ অন্যরা জানান, পানির অপর নাম জীবন, সেই জীবনের ব্যবস্থা সরকারকে করতে হবে। তা-না হলে আমরা অল্প আয়ের মানুষ কেমন করে বাঁচবো? আমাদের তো তারাপাম্প টিউবয়েল বসানোর টাকা নেই ।

শ্রীপুর ্উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও নাকোল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হুমাউনুর রশীদ মুহিত জানান, গয়েশপুর, আমলসার, শ্রীকোল, শ্রীপুর, দ্বারিয়াপুর, কাদিরপাড়া,সব্দালপুর ও নাকোল ৮টি ইউনিয়ন নিয়ে শ্রীপুর উপজেলা গঠিত। কমবেশি সব কয়েকটি ইউনিয়নেই বিশুদ্ধ খাবার পানির সমস্যা দেখা দিয়েছে। স্থানীয়রা প্রায় প্রতিদিনই নলকূপ থেকে পানি ওঠানোর জন্য নতুন করে মাটি খোড়াসহ নানা কৌশল অবলম্বন করেছে। তবুও এর কোন প্রতিকার পাচ্ছেনা। তবে কিছু কিছু এলাকায় সামান্য কয়কেটি তারাপাম্প টিউবওয়েলে পানি উঠলেও হাজারেরও বেশি টিউবওয়েলে একে বারেই পানি উঠছে না। যে কারণে ক্রমান্বয়ে বিশুদ্ধ খাবার পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে এলাকায়। এ ব্যাপারে আমি মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ¦ এ্যড. সাইফুজ্জামান শিখরের সাথে কথা বলেছি, তিনি দ্রুত সময়ের মধ্যে সমস্যা সমাধানের আশ^াস দিয়েছেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ ইয়াছিন কবীর বলেন, শ্রীপুর উপজেলার কিছু কিছু এলাকায় পানির সংকট দেখা দিয়েছে বিষয়টি জনগুরুত্বপূর্ণ। ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে জনস্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছি যাদের বাড়িতে এ সমস্যা দেখা দিয়েছে তাদের সাথে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের জন্য।

শ্রীপুর উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হাসনাত কাজল সত্যতা স্বীকার করে জানান, শ্রীপুর উপজেলার ৮ টি ইউনিয়নের মধ্যে গয়েশপুর ইউনিয়নে গভির টিউবয়েল ৫০ টি,অগভির ২৭২টি, আমলসার ইউনিয়নে গভির ৬৮ টি, অগভির ৩৪৮টি, শ্রীকোল ইউনিয়নে গভির ১৪২ টি,অগভির ৪১০টি, শ্রীপুর ইউনিয়নে গভির ১২৪ টি,অগভির ৩৪৫টি, দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নে গভির ৩২টি,অগভির ২৮০টি, কাদিরপাড়া ইউনিয়নে গভির ৭৩ টি,অগভির ২৭৫টি,সব্দালপুর ইউনিয়নে গভির ৭৫ টি,অগভির ৩০১ টি, ও নাকোল ইউনিয়নে গভির ৩৭টি,অগভির ৩০২টি সর্বমোট সরকারি ৩১৩৪ টি টিউবয়েল রয়েছে। তবে বেসরকারি টিউবয়েলের সংখ্যা আমাদের জানানায় । তিনি বলেন, যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান টিউবওয়েল বসানোর আগে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি পেতেন। তাহলে এখন ভূক্তভোগীদের কি করণীয় প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এ বিষয়ে জনস্বাস্থ্যের কিছু করণীয় নেই। তবে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা চেষ্টা করলে নতুন করে টিউবওয়েল বসিয়ে এর সমাধান করা সম্ভব।

মাগুরা জেলা অতিরিক্ত জনস্বাস্থ্য নির্বাহী প্রকৌশলী আমিরুল ইসলাম জানান,মাগুরা জেলার ৪ টি উপজেলার মধ্যে মাগুরা সদর উপজেলায় ৪৯২৫টি, মহম্মদপুর উপজেলায় ৩৫৮৫ টি,শালিখা উপজেলায় ৩০৭৮টি এবং শ্রীপুর উপজেলায় ৩১৪০টি, সর্বোমোট ১০৩৭৮ টি গভীর, অগভীর টিউওবয়েল রয়েছে। তিনি বলেন, বেসরকারি টিউবয়েলগুলো যথাযর্থ আইন না মেনে স্থাপন করেছে, যে কারনে ঐ সব টিউওবয়েলে এখন পানি উঠছে না। তবে আমার জানামতে,সরকারি টিউওবয়েলে পানি উঠছে। এ ছাড়াও আমাদের মেকানিক্যাল টিম সবসময় ফিল্ডে কাজ করছে। যে সব টিউওবয়েলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে তারা সাথে সাথে মেরামত করে পানি ওঠার ব্যবস্থা করছে। তবে তার কথার সাথে কাজের মিল পাওয়া যায়নি ।

সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, অধিকাংশ সরকারি টিউবওয়েল পানি না উঠার কারণে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে ।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন