করোনা আতংক- ইচ্ছা’য় ভরসা ভারসাম্যহীনদের

করোনা ভাইরাস এক ভয়ঙ্কর মহামারির নাম। করোনার ভয়ে দেশে দেশে, এলাকায় এলাকায় চলছে লকডাউনের প্রতিযোগিতা। বাংলাদেশও রক্ষা পায়নি এই ভয়ঙ্কর ভাইরাসের হাত থেকে।অনেক জেলা ইতোমধ্যে লকডাউন করা হয়েছে। দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জেলা বাগেরহাটেও যানচলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সিমীত করা হয়েছে মানুষের চলা ফেরাও।

এই পরিস্থিতিতে সবকিছুতে এক ধরণের স্থবিরতা সৃষ্টি হয়েছে।সমস্যায় পড়েনি এমন কোন পেশা বা শ্রেণির মানুষ খুজে পাওয়া দুস্কর।তবে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন চাল-চুলোহীন ছিন্নমূল ও মানসিক ভারসাম্যহীন পথে থাকা মানুষগুলো।সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা, জনপ্রতিনিধি থেকে শুরু করে সাধারণ বিত্তশালীরা কর্মহীণ ও অসহায় খাদ্য সামগ্রী দিলেও, অভুক্ত থেকে যাচ্ছেন মানসিক ভারসাম্যহীন ও ছিন্নমূল মানুষেরা। কারণ স্বাভাবিক অবস্থায়ই তারা খেয়ে না খেয়ে দিন কাটান। নোংড়া কাপড়, ল¤॥^া জট ওয়ালা চুল, ময়লাযুক্ত শরীরের কারণে তাদের ধারে কাছে কেউ আসতে চায় না।

খাবারের হোটেলের সামনে অনটাইম প্লেটে গ্রাহকের মাখা খাবারে পেটের জ্বালা মেটায় এরা। করোনা পরিস্থিতে না খেয়ে মরার উপক্রম হয়েছে এই মানুষগুলোর।এই করুণ পরিস্থিতে নিরবে, নিভৃতে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোকে রান্না করা খাবার খাওয়াচ্ছেন সামাজিক সংগঠন “ইচ্ছা”। একবার যাকে খাবার দিয়ে আসছেন “ইচ্ছা”-র কর্মীরা তার কাছে জানতে চান পরবর্তীতে কি খেতে চায় তিনি। পরবর্তীতে ওই মানুষটির চাহিদা অনুযায়ী খাবার রান্না করে আবার হাজির হন স্বেচ্ছাসেবকরা।মানসিক ভারসাম্যহীনদের পাশাপাশি বাগেরহাট শহরের ২০ টি স্থানে বেওয়ারিশ কুকুর এবং পাখিদের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করেছে এই সংগঠনটি।

জানা যায়, করোনা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের স্বাভাবিক চলাচল বন্ধ হওয়ার পর। ২৩ মার্চ থেকে “ইচ্ছা”র কর্মীরা বাগেরহাট জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষের পাশে দাড়িয়েছে।শহরের ১৫ থেকে ২০ জন মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে তারা প্রতিদিন দুই বেলা রান্না করা খাবার পৌছে দিচ্ছেন। পাশাপাশি পরিচ্ছন্নতাকর্মীদেরও খাবার সরবরাহ করছেন। শহরে ঘুরে বেড়ানো বেওয়ারিশ কুকুরদেরও নিয়মিত খাবার দিচ্ছেন তারা। পাখিদের জন্য দেওয়া হচ্ছে ধান, গম ও মুড়িরমত শুকনো খাবার।এছাড়া করোনা পরিস্থিতিতে সংগঠনটি কয়েকজনকে নগদ অর্থ এবং ৭’শ ৮২ মধ্যবিত্ত পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। নিজস্ব প্রস্তুতকৃত ৯’শ লিটার হ্যান্ড স্যানিটাইজার মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌছে দিয়েছেন। খেটে খাওয়া মানুষকে মাস্কও দিয়েছে সংগঠনটি।“ইচ্ছা”র এসব কার্যক্রম চলে সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়ন ও শুভাকাংখীদের সহায়তায়।সমাজের বিত্তবানরা তাদের কাজের সাথে এগিয়ে আসলে আরও বেশি মানুষের উপকার করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অনেকে।

যে সকল ভাসমান এবং ভারসাম্যহীন মানুষ এখন বাগেরহাটে অবস্থান করছেন তাদের শুধু খাদ্য নয় বাসস্থানেরও প্রয়োজন। অন্যথায় এই সকল ভ্রাম্যমাণ মানুষেরাই হয়ে উঠতে পারেন করোনা ভাইরাস ছড়ানোর মারাত্মক হাতিয়ার। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে এই সব মানুষদের জন্য দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের অনুরোধ জানান তারা।

ইচ্ছা‘র সভাপতি এ্যাড. শাহিন সিদ্দিকি বলেন, ২০১৪ সালে বাগেরহাটের হতদরিদ্র মানুষের জন্য রক্ত জোগার করার মাধ্যমে সংগঠনের পথ চলা। এরপরে অসহায় দরিদ্র শিশুদের জন্য ঈদের পোশাক দেওয়া।দরিদ্র মানুষকে চিকিৎসা ও শিক্ষা সহায়তার মধ্য দিয়ে চলতে থাকে আমাদের সেবাধর্মী কাজ। বৈশ্বিক এই মহামারীতে যেসব মধ্যবিত্ত মানুষ কারও কাছে খাবার চাইতে পারেনা, তাদেরকে খাদ্য সামগ্রী পৌছে দিয়েছি। বাগেরহাট শহরে থাকা ছিন্নমূল ও মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষকে প্রতিদিন দুই বেলা রান্না করা খাবার দিচ্ছি। বেওয়ারিশ কুকুর পাখিদেরও খাবারের ব্যবস্থা করেছি।ভবিষ্যতে যেকোন দূর্যোগে এ ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন