নড়াইলে খাদ্যবান্ধব দশ টাকার চালে ভাগ বসাচ্ছেন ডিলাররা

নড়াইল প্রতিনিধি: আফজাল হোসেন কালিয়া 

করোনা মোকাবেলায় গত ৬ এপ্রিল থেকে সরকারী খাদ্যবান্ধব কর্মসূচী শুরু হয়েছে। হতদরিদ্র মানুষেরা নির্ধারিত কার্ডের বিনিময়ে ১০ টাকা করে প্রতি কেজি চাল কিনতে পারবেন। এই চাল বিক্রিতে কয়েকজন ডিলারের বিরুদ্ধে ওজনে কম দেবার অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র মানুষকে ৩’শ টাকার বিনিময়ে ৩০ কেজি চাল দেবার কথা থাকলেও দেয়া হচ্ছে ২৭/২৮ কেজি। এ নিয়ে ক্রেতাদের ক্ষোভ থাকলেও খাদ্য সহায়তা বন্ধ হবার আশংকায় কথা বলছেন না অনেকে।

জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, নড়াইল জেলায় ৩টি পৌরসভা ও ৩৯ টি ইউনিয়নে মোট ৩৭ হাজার ৩’শ ৪ জন হতদরিদ্র মানুষ ১০ টাকা দরে চাল ক্রয় করে থাকেন। ৩টি পৌরসভায় ১৪ জন সহ মোট ৯৪ জন ডিলার কার্ডের বিনিময়ে এই চাল বিতরন করছেন। এর মধ্যে পৌর এলাকায় কার্ডপ্রতি ৫ কেজি করে সপ্তাতে ৩ দিন এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে জনপ্রতি ৩০ কেজি করে মাসে একবার এই চাল কিনতে পারবেন।

নড়াইলের কালিয়া উপজেলার চাচুড়ী ইউনিয়নের চাচুড়ি বাজারে ডিলার বিল্লাল মোল্যা। ১২ এপ্রিল রবিবার এখানে এলাকার গরীব মানুষেরা চাল নিতে গেলে ৩০ কেজি চালের পরিবর্তে দেয়া হয়েছে ২৭ কেজি করে। সাংবাদিক এসেছে এমন খবর পেয়ে ২৮ কেজি করে দেয়া শুরু করে। এরপর ক্যামেরা সামনে দেয়া হয় ৩০ কেজি। চাচ–ড়ী গ্রামের একাধিক ব্যাক্তি নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, চাচুড়ী ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই ডিলার বিল্লাল মোল্যার জামাতা রিকসনের গোডাউন থেকে খাদ্য বান্ধব কর্মসূচী ৩’শ টাকার চাল কিনে অন্য জায়গায় মেপে দেখেছি ২৭ কেজি হয়েছে। কৃষ্ণপুর গ্রামের শিউলী বেগম আসমা বেগম, বনিতা বেগম বলেন, এখানে ৩’শ টাকা নিয়ে ২৮ কেজি চাল দিয়েছে। ।

একই অবস্থা চাচুড়ী ইউনিয়নের আটলিয়া এলাকায় ডিলার মেজবাউর রহমানের গোডাউনে। এই ডিলার ক্যামেরা দেখে চাল বিতরন বন্ধ করে দেন । এসময় কয়েকটি বস্তা মেপে ২কেজি করে চাল কম পাওয়া যায় একই গ্রামের ফরিদা বেগম বলেন, ও এম এস এর দোকানে কার্ড নিয়ে চাল নিতে এসেছি। ৩’শ টাকায় ত্রিশ কেজি চাল পাবার কথা কিন্তু মেপে দেখি ২৮ কেজি দিয়েছে, একথা কাকে বলবো । এভাবে ঐখান থেকে প্রতিজনকে ২/৩ কেজি করে চাল কম দিচ্ছে।

সরকারী ভ‚র্তকির চাল ওজনে কম দেবার ব্যাপারে চাচুড়ী বাজারের ডিলার বিল্লাল মোল্যার জামাতা রিকসন মোল্যা জানান, সরকারী খাদ্যগুদাম থেকে চাল আনার সময় ওনাদের ওজন যন্ত্র নষ্ট ছিলো। পরে স্থানীয়ভাবে ওজন দিয়ে দেখি বস্তায় চাল কম আছে, সেই কারনে চাল কম দেয়া হচ্ছে। এটা ইউএনও জানেন। আরেক ডিলার মেজবাউর রহমান বলেন, ফুড গোডাউন থেকে বস্তায় চাল কম দেয়ায় আমরা ওজনে কম দিচ্ছি। তবে এটা আমাদের চেয়ারম্যান এর সাথে আলাপ করেই করা হয়েছে। প্রতি কার্ডেও বিপরিতে ২৯ কেজি করে দেবার কথা স্বীকার করেন এই ডিলার।

চাচুড়ী ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম হিরক বলেন, ফুড অফিসের বস্তায় ওজনে কম দেবার কথা আমি শুনেছি। এখনতো মেপে দেখলাম সাড়ে আঠাশ কেজি, এ ব্যাপারে ইউএনওর সাথে আলাপ করবো।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক শেখ মনির হাসান বলছেন, ফুড গোডাউনে চাল ওজনে কম দেবার কোন সুযোগ নেই, ডিলারদের মাল দেবার সময় সঠিক ওজনে মাল পেয়েছেন এটা লিখিত নেয়া হয়। তারা ওজনে কম পেলে আবার মেপে সেটা পুরন করে নিয়ে যায়। ২/৩ কেজি করে কম দেয়া এটা ডিলারদের কারসাজি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন