বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ছাড়াল

বিদেশি সংস্থার কাছ থেকে পাওয়া সহায়তার অর্থ রিজার্ভে এসে যোগ হওয়ায় সম্প্রতি বিদেশি মুদ্রার সঞ্চিতি ৪৬ বিলিয়ন (৪ হাজার ৬০০ কোটি) থেকে ৪৮ বিলিয়নে (৪ হাজার ৮০০ কোটি) উন্নীত হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দিন শেষে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৮০৪ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গতকাল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) বরাদ্দকৃত ১৪৫ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়।

এর আগে গত ২৯ জুন রিজার্ভ ৪ হাজার ৬০০ কোটি ডলারে উন্নীত হয়। এরপর তা কিছু দিন ধরে সামান্য ওঠানামার মধ্যে ছিল। সবশেষ গত ১৯ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৬৫৮ কোটি ডলার। যা এর আগ পর্যন্ত বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার সর্বোচ্চ অবস্থান। এর আগে গত ৫ জুলাই বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সর্বোচ্চ অবস্থানে ছিল। ওইদিন রিজার্ভ ছিল ৪ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে রিজার্ভ ৫০ বিলিয়ন ছাড়াবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। গত বছরের নভেম্বরে এক অনষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী এ আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন।

প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর ভর করে রিজার্ভ তরতর করে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি দেশ রূপান্তরকে বলেন, ‘দেশে রেমিট্যান্স পাঠালে বাড়তি ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর ফলে কভিড-১৯ পরিস্থিতির মধ্যেও বেশি করে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন প্রবাসীরা। এই পরিমাণ রিজার্ভ দিয়ে এক বছরের আমদানি দায় পরিশোধ করা সম্ভব।’ গত বছরের মার্চ থেকে রিজার্ভ বাড়তির ধারায় রয়েছে। ওই মাসে রিজার্ভ ছিল ৩ হাজার ২০০ কোটি ডলার। সেই হিসেবে গত বছরের মার্চ থেকে চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৬০০ কোটি ডলার রিজার্ভে যোগ হয়েছে।

বিদায়ী ২০২০-২১ অর্থবছরে ২ হাজার ৪৭৭ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। যা এর আগের অর্থবছরে আসা রেমিট্যান্সের তুলনায় ৩৬.১০ শতাংশ বেশি। চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই মাসে রেমিট্যান্স কিছুটা কম এসেছে। আগস্টেও একই রকম প্রবাহ দেখা যাচ্ছে। তবে রেমিট্যান্সে প্রবৃদ্ধির ধারা ধরে রাখার একটি প্রচেষ্টা সরকারের রয়েছে। চলতি অর্থবছরের বাজেটে রেমিট্যান্সের ওপর নগদ ২ শতাংশ প্রণোদনা অব্যাহত রাখতে ৪ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রেখেছে সরকার।

তবে রেমিট্যান্সের প্রণোদনায় বর্তমানে এর থেকে বেশি ব্যয় করছে সরকার। চলতি অর্থবছরের সংশোধনী বাজেটে এ খাতের প্রণোদনার বরাদ্দ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। মূল বাজেটে এই বরাদ্দের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা। ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স বাড়াতে ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা চালু করে সরকার। ওই অর্থবছরে প্রথম এ খাতের প্রণোদনার জন্য ৩ হাজার ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। প্রণোদনা সুফল বয়ে আনায় গত অর্থবছরের সংশোধনী বাজেটে এ খাতের বরাদ্দ ৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা করা হয়।

বর্তমানে ৫ হাজার ডলার পর্যন্ত রেমিট্যান্সের ওপর কোনো ধরনের কাগজপত্র জমা ছাড়াই ২ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে সরকার। এর বেশি রেমিট্যান্স পাঠালে এ সংক্রান্ত কাগজপত্রাদি জমা সাপেক্ষে প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে।বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কোনো কোনো ব্যাংক সরকারে ২ শতাংশ প্রণোদনার সঙ্গে আরও ১ শতাংশ যোগ করে মোট ৩ শতাংশ প্রণোদনা দিচ্ছে। এটা রেমিট্যান্স বাড়াতে বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে।

সম্প্রতি ডলারের দর কিছুটা বাড়তে শুরু করেছে। এ কারণে রিজার্ভ আবার বাড়তির ধারায় ফিরবে বলে আশা করছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা। গতকাল আন্তঃব্যাংক মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, এক ডলার কিনতে ব্যাংকগুলোকে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৫ দশমিক ১০ টাকা। যেখানে গত ২ আগস্ট এক ডলারের পেছনে ব্যয় করতে হয়েছে ৮৪ দশমিক ৮০ টাকা। অর্থাৎ গত ২২ দিনে ডলারের দর বেড়েছে প্রায় ৩০ পয়সা।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন