রাকাবের লোকসান ৬১৫ কোটি টাকা

অবশেষে চূড়ান্ত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংকের (রাকাব) লোকসান দাঁড়াল ৬১৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। সাময়িক আর্থিক প্রতিবেদনে এই লোকসান দেখানো হয় ৬০৩ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিদর্শনে লোকসান বেশি ধরা পড়ায় সম্প্রতি তা সংশোধন করে চূড়ান্ত করে ব্যাংকটি। চূড়ান্ত নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত বিশেষায়িত এই ব্যাংকটির ক্রমপুঞ্জীভূত লোকসান দাঁড়াল ১ হাজার ৭১৫ কোটি ২১ লাখ টাকা। ২০১৯ এর ৩০ জুনে এই লোকসান ছিল ১ হাজার ১০০ কোটি ৪৬ লাখ টাকা।

সম্প্রতি রাকাবের আয়কর উপদেষ্টা হায়দার আহমদ খান এফসিএ কর্র্তৃক প্রস্তুতকৃত সংশোধিত আয়কর বিবরণীতে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। জানা গেছে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর ৭৫ (১) ধারা মোতাবেক রাকাবকে প্রতিবছর কোম্পানি আয়কর রিটার্ন দাখিল করতে হয়। ২০১৯-২০ অর্থবছরের আয়কর রিটার্ন দাখিলের নির্ধারিত সময় ছিল ২০২১ সালের ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত।

এই সময়ের মধ্যে ২০১৯-২০ অর্থবছরের বার্ষিক হিসাব দুটি চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট ফার্ম দিয়ে নিরীক্ষা শেষ না হওয়ায় গত ১৩ জানুয়ারি রাকাবের সাময়িক আয়কর বিবরণী দাখিল করা হয়। তবে গত ৩০ জুন রাকাবের পরিচালনা পর্ষদ ২০১৯-২০ অর্থবছরের আর্থিক প্রতিবেদন অনুমোদন দেয়। ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সংশোধিত কোম্পানি আয়কর রিটার্ন প্রস্তুতের জন্য গত ২২ আগস্ট আয়কর উপদেষ্টা হায়দার আহমদ খানের কাছে পাঠায় রাকাব। গত ২৫ আগস্ট সংশোধিত আয়কর রিটার্ন প্রস্তুত করে ব্যাংকে পাঠিয়ে দেন হায়দার আহমদ খান। এর আগে সাময়িক আয়কর রিটার্ন অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছর রাকাবের লোকসান ছিল ৬০৩ কোটি টাকা। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বিশেষ পরিদর্শনে উঠে আসে এই লোকসান প্রায় ৬১৭ কোটি টাকা।

অবশেষে রাকাবের নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বলা হয়, এই লোকসান প্রায় ৬১৫ কোটি টাকা। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণ ছিল প্রায় ১ হাজার ৭৫৬ কোটি টাকা, যা ব্যাংকের বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ৩০ শতাংশ। রাকাবের লোকসানি শাখার সংখ্যাও বাড়ছে। ৩৮৩টি শাখার মধ্যে ১১৮টি শাখাই লোকসানে রয়েছে। বিপুল পরিমাণ লোকসানের বোঝা নিয়েও প্রতি বছর জুন ও ডিসেম্বরভিত্তিক কর্মীদের পদোন্নতি দিচ্ছে রাকাব।

করোনা মহামারীর কারণে গত ডিসেম্বরভিত্তিক পদোন্নতি আটকে থাকায় গত ২৪ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধির সমন্বয়ের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে গত ২৭ জুন কর্মীদের পদোন্নতি দেয় রাকাব। ডিসেম্বরভিত্তিক পদোন্নতির রেশ-আনন্দ শেষ হতে না হতেই জুনভিত্তিক পদোন্নতি প্রদানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য গত ২৫ জুলাই আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে প্রতিনিধি চেয়ে চিঠি দেয় রাকাব।

এবার উপমহাব্যবস্থাপক ও সমমান, সরকারি মহাব্যবস্থাপক ও সমমান এবং সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার পদে পদোন্নতি বিবেচনার জন্য ১নং পদোন্নতি কমিটিতে প্রতিনিধি দেওয়ার জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে চিঠি লেখেন রাকাবের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ইসমাইল হোসেন।

গত ৩১ জুলাই এ পদোন্নতির সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও এই সময়ের মধ্যে প্রতিনিধি না দেওয়ায় সাক্ষাৎকার অনুষ্ঠিত হয়নি। গত ৩১ আগস্ট জুনভিত্তিক পদোন্নতির ১নং কমিটিতে প্রতিনিধি হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয় আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ সফিউল আলমকে। তবে বর্তমানে রাকাবের এমডি অসুস্থ থাকায় সাক্ষাৎকারের নতুন তারিখ এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন