করোনা চিকিৎসায় এক অকুতোভয় যোদ্ধা ডা. মিজান

করোনা চিকিৎসায় অকুতোভয় যোদ্ধা হিসেবে রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন নরসিংদী ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালের (কোভিড ডেডিকেটেড) হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. এ.এন.এম মিজানুর রহমান । নীরব সেনা হিসেবে তিনি কাজ করছেন। ইতিমধ্যে তিনি ও তার সহকর্মীদের সেবায় সুস্থ হয়ে কোভিড ডেডিকেটেড জেলা হাসপাতাল থেকে বাড়ি ফিরেছেন প্রায় দুই শত করোনা রোগী।
জানা যায়, করোনা পরিস্থিতির প্রায় শুরু থেকে নরসিংদীতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রোগীর সংখ্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ায় জেলার ১০০ শয্যা জেলা হাসপাতালটিকে ৮০ শয্যা কোভিড হাসপাতাল ঘোষণা করা হয়। কোভিড হাসপাতাল ঘোষণার পর ডা. মিজানকে এর মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরিবারের লোকজনদের ছেড়ে রাতদিন করোনা রোগীদের সেবায় নিজেকে ব্যস্ত রেখেছেন। যার ফলশ্রতিতে নরসিংদীর সব মানুষের কাছে প্রশংসিত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ও আরএমও ডা. মিজান।

সারাদেশে করোনা পরিস্থিতি যখন ভয়াবহ তখন নরসিংদী অবস্থান বিভিন্ন জেলার মধ্যে ছিল পঞ্চম। সে সময় নরসিংদী কোভিড জেলা হাসপাতাল গিয়ে দেখা যেত, করোনা উপসর্গ পরীক্ষা করাতে আসা রোগীদের র্দীঘ লাইন। স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের নমুনা সংগ্রহ করছেন। আর সবাইকে তদারকি করছেন ডা. মিজানসহ তার সহকর্মীরা। এপ্রিলের ৬ তারিখে নরসিংদীতে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। তার ঠিক দুই দিন পর জেলা হাসপাতালের মালি জুয়েল মিয়া করোনায় আক্রান্ত হন। হাসপাতালের মালি করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে কিছুটা করোনা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।ক্ষেত্রবিশেষে চিকিৎসা কার্যক্রম অর্থাৎ রোগী দেখা বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময়ে মরনব্যাধী এই ভাইরাস থেকে জেলাবাসীকে মুক্ত করতে সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে করোনা রোগীদের নিরলস ভাবে সেবা দিয়ে মানবিকতার উদাহরন রাখেন এই চিকিৎসক।

বর্তমানে করোনা সংক্রমণ থাকলেও দেশের মানুষের মধ্যে কেমন যেন গাঁ সহা হয়ে গেছে। মানুষ এখন আর মরনব্যাধী ভাইরাসকে খুব একটা ভয় পায়না। দিন দিন মানুষের জীবন যাত্রার মান স্বাভাবিক হয়ে আসছে। নরসিংদী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল থেকে এ পর্যন্ত ১৮৬ জন করোনা আক্রান্ত রোগী চিকিৎসাসেবা গ্রহণ করেছেন। সাধারণ মানুষের জীবন যাত্রার মান স্বাভাবিক হতে থাকলেও নরসিংদী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালের চিকিৎসক, নার্স ও অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীরা আগের মতই নিরলসভাবেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। তেমন কোন পরিবর্তন এখানে লক্ষ্য করা যায় না। শুধু মাত্র আগের তুলনায় নমুনা সংগ্রহ কিছুটা কমেছে।
নরসিংদী করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ী ফিরে গেছেন এমনই একজন নরসিংদী জেলা কৃষকলীগের সভাপতি আসাদুজ্জামান। তার সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আরএমও ডা. মিজানুর রহমান আমার দৃষ্টিতে একজন মানবিক ডাক্তার।

তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে মানব সেবার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তিনি প্রতিদিনই আমাদের খোঁজখবর নিতে আসতেন। আমাদের খুব কাছ থেকে কুশলাদি জিজ্ঞেস করতেন। কোন ধরনের সমস্যা হচ্ছে কিনা বা ঔষধপত্র আছে কিনা সে কথাও জানতে চাইতেন। এছাড়া মোবাইল ফোনেও আমিসহ অন্যান্য রোগীদের কাছ থেকে সার্বিক বিষয়াদি জানতে চাইতেন। ডিউটি ডাক্তার আসছেন কিনা বা নার্সসহ অন্যান্যরা সঠিক সেবা দিচ্ছেন কিনা এ খবর জানতে চাইতেন। চিকিৎসার পাশাপাশি তিনি আমাদের মনোবল শক্ত করতে পরামর্শসহ বেঁচে থাকার প্রেরণা জুগিয়েছেন।

আমাদেরকে সব সময় মানসিকভাবে চাঙ্গা রেখেছেন, বাঁচার স্বপ্ন দেখিয়েছেন।’ ডা. মিজানুর রহমান সমকালকে বলেন, আমাদের হাসপাতালে প্রতিদিন ১০০ থেকে ১৫০ জন রোগী করোনা পরীক্ষা করাতে আসতেন। আমরা পরীক্ষা করাতে পারতাম ৪০-৫০ জনের মতো। আরেকটু বেশি পরীক্ষা করাতে পারলে রোগী শনাক্ত বেশি হতো। আমাদের এখানে আইসিইউ, পিসি আর ল্যাব, সেন্ট্রাল অক্সিজেনের দরকার। নরসিংদীর বিশিষ্ট শিল্পপতি আব্দুল কাদির মোল্লার অর্থায়নে ও জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সেই সাথে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ ও বিএম এর সহযোগিতায় সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ প্রায় সমাপ্তির পথে। সেন্ট্রাল অক্সিজেন স্থাপনের কাজ হয়ে গেলে আমরা রোগীদের আরো ভাল স্বাস্থ্য সেবা দিতে পারব।

বার্তা প্রেরক
মো: নূরুল ইসলাম
নরসিংদী প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন