বালু ও পলিতে ভরে গেছে তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট

বালু ও পলিতে ভরে গেছে তিস্তা নদী। সম্প্রতি উজানের ঢলে দুই দিনে তিস্তায় ৫৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহের কারনে কয়েকশ কোটি টাকার কে,পি,আই,ওয়ান ক্যাটাগড়ির এই স্থাপনাটির সামনে ও পেছনে বালু ও পলিমাটির স্তুপে ভরে গেছে। আজ শনিবার সকালেও এই চিত্র চোখে পড়ে। উজানের ঢলে ১৫ ঘন্টায় তিস্তা ব্যারাজের জলকপাট দিয়ে দুই লাখ ৪৩০ কোটি কিউসেক পানি নিঃসরন হয়েছিল। বর্তমানে ব্যারাজটির মুল ৪৪ টির জলকপাটের মধ্যে ৮ টি প্রধান জলকপাট বন্ধ হয়ে গেছে। যে কোন মূহুর্তে উজানের ঢল নেমে এলে এবার চরম ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হবে দেশের সর্ববৃহৎ সেচ প্রকল্পের তিস্তা ব্যারাজকে এমন ধারনা করা হচ্ছে।

অপরদিকে তিস্তা ব্যারাজের সিলট্রাফ অর্থাৎ পলির আধার থেকে নিয়মিত পলি উত্তোলন করা হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর প্রায় ২০ লাখ টন পলি জমা হচ্ছে এই আধারে। একই সঙ্গে আধার থেকে ওই পলি ৩৪ কিলোমিটার দীর্ঘ প্রধান সেচ খালে গিয়ে পড়ছে। ফলে প্রধান খালের গভীরতা কমে গিয়ে পানিপ্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজের অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেম কাজ করছে না। ব্যারাজের গেট ওঠানো-নামানো হচ্ছে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ।

তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের যান্ত্রিক ও পানি ব্যবস্থাপনা শাখা সূত্রে জানা যায়, ৫২টি জলকপাট দিয়ে একসঙ্গে ব্যারাজের পানি নিঃসরণ ক্ষমতা প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে চার লাখ কিউসেক। এর চেয়ে বেশি পানি বা ঢল হলে ব্যারাজের পাশে ফ্লাড বাইপাসের ফিউজ স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে গিয়ে বিকল্প পথে ঘুরে গিয়ে বাড়তি পানি আবার নদীতে পড়ে। ১৯৯৬, ১৯৯৮.২০০৭ সালের তীব্র ঢলে বাড়তি চাপে ফ্লাড ফিউজ ওপেন করা হয়েছিল।সেই থেকে জেনারেটর দিয়ে টুলি পদ্ধতিতে গেটগুলো ওঠানো-নামানো হচ্ছে। গত বছর অটোমেশন অপারেটিং সিস্টেমের ক্রুটি সারানো হয়। সংশ্লিষ্ট সুত্রের এক হিসাবে দেখা যায়, প্রতিবছর তিস্তা নদী প্রায় পাঁচ কোটি টন পলি বহন করে।

এই পলি ব্যারাজের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে নীলফামারীর ডালিয়া থেকে রংপুরের কাউনিয়া পর্যন্ত প্রায় ৬৫ কিলোমিটার জুড়ে বিশাল চর সৃষ্টি করেছে। অন্যদিকে সেচ প্রকল্পের জন্য তৈরি প্রধান খালে পানি প্রবেশের উৎস মুখে ৪৫ হেক্টর জুড়ে নির্মিত সিলট্রাফে পলির একটি বিশাল অংশ প্রবেশ করছে। দীর্ঘদিন ধরে সিলট্রাফ থেকে পলি অপসারণ হয়নি। পলি জমে এরই মধ্যে খালের গভীরতা আড়াই থেকে তিন ফুট কমে গেছে। এ ছাড়া চলতি বছরের ১২ ও ১৩ জুলাই ভয়াবহ উজানের ঢল নেমে এসেছিল। খোজ নিয়ে জানা গেছে ২০১২ সালে তিস্তা ব্যারাজের উজানে ৫০০ মিটার ও ভাটিতে ১০০০ মিটার ২৩ কোটি টাকা ব্যয়ে চর খনন, পলি অপসারণ করা হলেও এরপর আর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি।

এ ব্যাপারে কথা হলে পানি উন্নয়ন বোডের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ বলেন বিগত ৩০ বছরের রেকড ভঙ্গ করে ১২ জুলাই রাত ৯টা থেকে পরের দিন ১৩ জুলাই বেলা ১২টা পর্যন্ত ১৫ ঘন্টায় উজান হতে মারাত্বক ঢল আসে। ওই ঢলে তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাটের মাধ্যমে প্রতি সেকেন্ডে সাড়ে ৪ লাখ কিউসেক করে পানি নিঃসরণ হয়। এতে ১৫ ঘন্টায় সর্বমোট পানি নিঃসরন হয়েছিল দুই লাখ ৪৩০ কোটি কিউসেক পানি। সেই পানি বর্তমানে ভাটি অঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি সৃস্টি করছে। ওই পানি তিস্তা ব্যারাজ দিয়ে নিঃসরন হওয়ার সময় ব্যারাজের সামনে পেছনে প্রচুর বালু ও পলিমাটি এসে স্তুপে পরিনত হয়েছে। এটি অপসারনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। অপর দিকে তিস্তা ব্যারাজ যান্ত্রিক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা জানান অটোমেশন অপারেটিং এর ৭টি রাউটারের মধ্যে ৬টি চুরি হয়ে গেছে। পুলিশ তদন্ত করছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে জলকপাট অপারেটিং কোন সমস্যা হচ্ছেনা। ব্যারাজের পানি নিষ্কাশনের জন্য মুল ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন