দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর অবশেষে স্পেনে পৌঁছেছেন ২৭৩ জন বাংলাদেশি প্রবাসী। বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে এসব প্রবাসীরা বাংলাদেশে আটকে পড়েন।
স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাবের উদ্যোগে বাংলাদেশ বিমানের একটি বিশেষ ফ্লাইটে (বিজি-৪১০৯) চড়ে শুক্রবার (১৯ জুন) স্পেন সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় তারা মাদ্রিদ (বারাখাছ) আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। এ সময় তাদের স্বাগত জানান মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তা, স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ ও আগত যাত্রীদের পরিবারের সদস্যরা।
ইমিগ্রেশনের আনুষ্ঠানিকতা সেরে আগত স্পেন প্রবাসীরা বিমানবন্দরের মূল দরজা দিয়ে যখন বের হচ্ছিলেন, তাদের স্বাগত জানাতে আসা পরিবারের সদস্যদের অনেককেই আবেগে আপ্লুত হতে দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন পর স্পেনে রেখে যাওয়া পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা হলো ইনসাফ সুমনের। তার অনুভূতি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অল্প কিছুদিনের জন্য জরুরি কাজে বাংলাদেশে গিয়েছিলাম। কিন্তু এভাবে আটকা পড়ব চিন্তাই করিনি। পরিবারের কাছে পৌঁছাতে পেরে আমি খুবই খুশি।’
আরেক যাত্রী রুনু নজরুল বলেন, ‘বার্সেলোনায় স্ত্রী, সন্তান এবং নিজের ব্যবসা রেখে বাংলাদেশে দুশ্চিন্তার মধ্যে ছিলাম। সৃষ্টিকর্তার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই, এজন্য যে আমি স্পেনে ফিরতে পেরেছি।’
ওয়াজিজুর রহমান মুজিব স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ছুটি কাটাতে গিয়েছিলেন বাংলাদেশে। নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে যোগ দিতে জরুরি ভিত্তিতে বিশেষ ফ্লাইটের সুযোগ পেয়ে এসেছেন তিনি। বিমান চলাচল স্বাভাবিক হলে স্ত্রী সন্তানরাও ফিরবেন।
মাদ্রিদ বারাখাছ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত প্রবাসীদের স্বাগত জানাতে উপস্থিত ছিলেন মাদ্রিদের বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম) মো. মোতাসিমুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘স্পেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা দীর্ঘদিন বাংলাদেশে আটকে ছিলেন। বিভিন্ন সময় আমাদের সঙ্গে তারা যোগাযোগ করেছেন, যাতে স্পেনে ফিরে আসার বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়। বিমান বাংলাদেশে করে তারা ফিরলেন। এ জন্য আমরা আনন্দিত।’
তিনি বাংলাদেশ বিমানসহ স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাব ও স্থানীয় বাঙালি কমিউনিটিকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় বিমান বাংলাদেশ মাদ্রিদে অবতরণ করতে পেরেছে।’
বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটটির বিষয়ে স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাবকে সহযোগিতা করেছেন স্পেনের প্রবীণ কমিউনিটি নেতা খোরশেদ আলম মজুমদার ও মানবাধিকার সংগঠন ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহী।
খোরশেদ আলম মজুমদার বলেন, ‘সবার মধ্যে যে উৎকণ্ঠা ছিল, বিমান বাংলাদেশ মাদ্রিদে অবতরণ করায় তার অবসান হয়েছে। এ জন্য বাংলাদেশ দূতাবাস, বিমান বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষ, স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাব ও স্পেনের বাংলাদেশি কমিউনিটির সবাইকে ধন্যবাদ জানাই।’
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, প্রবাসীদের দীর্ঘদিনের আশা বাংলাদেশ বিমানের ঢাকা-মাদ্রিদ ফ্লাইট শিগগিরই চালুর জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান।
ভালিয়েন্তে বাংলার সভাপতি মো. ফজলে এলাহি বলেন, ‘ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করলে সুফল পাওয়া যায়, বাংলাদেশ বিমানের এ অবতরণ তা প্রমাণ করে। বিপাকে পড়া বাংলাদেশিরা স্পেনে ফিরেছেন, এটাই আমাদের আনন্দ।’
স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ বলেন, ‘সংবাদ পরিবেশনের পাশাপাশি কমিউনিটির প্রতি দায়বদ্ধতাও রয়েছে সংবাদকর্মীদের। এ দায়বদ্ধতা থেকেই বাংলাদেশে বিপাকে পড়া স্পেন প্রবাসীদের প্রত্যাবর্তনে আমরা উদ্যোগ নেই। বিমান বাংলাদেশের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোকাব্বির হোসেন, বাংলাদেশ দূতাবাসের কর্মকর্তাবৃন্দ, বাংলা কাগজের উপদেষ্টা খায়রুল ইসলাম এবং কমিউনিটির সর্বস্তরের মানুষের সহযোগিতায় বিশেষ ফ্লাইটটি স্পেনে অবতরণ করেছে। তাই সকলকে আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।’
মাদ্রিদ বারাখাছ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আগত স্পেন প্রবাসীদের স্বাগত জানাতে কমিউনিটি নেতৃবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান সুন্দর, স্পেন বাংলা প্রেসক্লাবের সভাপতি সাহাদুল সুহেদ, সদস্য কবির আল মাহমুদ, ঢাকা জেলা অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক এস এম মাসুদুর রহমান, ভালিয়েন্তে বাংলার সাধারণ সম্পাদক রমিজ উদ্দিন, আবু জাফর রাসেল, কুলাউড়া ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন ইন স্পেনের সভাপতি খায়রুজ্জামান জামান, জাহাঙ্গীর আলম ইব্রাহীমসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতারা।
করোনা মহামারির কারণে বাংলাদেশে আটকেপড়া স্পেন প্রবাসীদের প্রত্যাবর্তনে বিশেষ ফ্লাইটের জন্য স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহ সভাপতি বনি হায়দার মান্না সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আফাজ জনি, বাংলাদেশে থাকাকালীন স্পেন প্রবাসী মাসুমের রহমান, আমিনুর রাজ্জাক, ওয়াসিম মিয়াসহ স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাবের সদস্যরাও কাজ করেছেন।
বিমানের যাত্রী মাদ্রিদ প্রবাসী মাসুমের রহমান, ছুটিতে বেড়াতে গিয়ে বাংলাদেশে আটকা পড়েছিলেন। প্রায় পাঁচ মাস পর ফিরেছেন। তিনি বলেন, ‘বিমানে বিধি মোতাবেক সামাজিক দূরত্ব মেনে আসন বরাদ্দ করা হয়েছে। একই পরিবারের সদস্য না হলে পাশাপাশি আসনে কাউকে বসতে দেয়া হয়নি।’ স্পেনে ফিরতে উদ্যোগ নেয়ায় স্পেন-বাংলা প্রেসক্লাবসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।