ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করায় ১৭ আইনজীবী পেশাগত কার্যক্রমে অংশ নিতে পারবেন না জানিয়ে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির দেয়া নোটিশ স্থগিত করেছেন হাইকোর্ট। ফলে ওই আইনজীবীরা পেশা পরিচালনা করতে পারবেন বলে জানিয়েছেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
একইসঙ্গে ভার্চুয়াল কোর্টে কোনো আইনজীবী ভবিষ্যতে মামলা পরিচালনা করতে গেলে তাদের বাধা দেয়া থেকে বিরত থাকতে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ১৭ মে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সভায় আপাতত ভার্চুয়াল কোর্টের সকল কার্যক্রম হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু কিছু আইনজীবী ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করেন। এরপর জেলা আইনজীবী সমিতি ১৭ জনকে ২ জুন নোটিশ দেয়।
নোটিশে বলা হয়, গাইবান্ধা জেলা বারের গত ১২ মে তারিখের অন্তর্বর্তীকালীন সিদ্ধান্ত এবং তদপ্রেক্ষিতে ১৭ মে তারিখের জরুরি সভায় গৃহীত সিদ্ধান্ত অমান্য, জেলা বারের শৃঙ্খলা ভঙ্গ, জেলা বার সম্পর্কে কটূক্তি, অবজ্ঞা প্রদর্শন ও মানহানিকর বক্তব্য প্রদানের জন্য বারের সদস্যপদ হতে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে নোটিশ দেয়া হলো।
ভার্চুয়াল কোর্ট বিষয়ে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির গত ১৭ মে ও ২ জুনের সিদ্ধান্ত ও নোটিশ হাইকোর্টের নজরে এনে ভার্চুয়াল উপস্থিতিতে আজ শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সমরেন্দ্র নাথ বিশ্বাস।
অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সাংবাদিকদের বলেন, গাইবান্ধায় ভার্চুয়াল কোর্টে অংশগ্রহণ করায় ১৭ জন আইনজীবী পেশা পরিচালনা করতে পারবেন না বলে গাইবান্ধা সমিতি নোটিশ দেয়। অথচ রাষ্ট্র আইন করে ভার্চুয়াল কোর্টের ব্যবস্থা করেছে।
আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে ওই আইনজীবীরা ভার্চুয়াল কোর্টে মামলা পরিচালনা করতে যান। এ জন্য সমিতি ওই নোটিশ দেয়, যা রাষ্ট্রের আইনবিরোধী। এর মাধ্যমে তাদের জীবিকা বন্ধ করা দেয়া হয়েছে, শুনানিতে বলেছি। শুনানির পর আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ওই আদেশ দেন। রুল না দেয়া পর্যন্ত সময়ের জন্য সমিতির ওই সিদ্ধান্ত ও নোটিশের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে।
করোনাভাইরাসের সংক্রমণে উদ্ভূত প্রেক্ষাপটে গত ৯ মে ‘আদালত কর্তৃক তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার অধ্যাদেশ, ২০২০’ শিরোনামে অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। ফলে অডিও-ভিডিও বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শারীরিক উপস্থিতি ছাড়া ভার্চুয়াল উপস্থিতির মাধ্যমে বিচারকাজ পরিচালনার সুযোগ তৈরি হয়। অধ্যাদেশ জারির পরদিন সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন থেকে এ বিষয়ে প্র্যাকটিস নির্দেশনা (ব্যবহারিক দিকনির্দেশনা) প্রকাশ করা হয়। আর ১১ মে থেকে দেশের অধস্তন আদালতে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে কার্যক্রম শুরু হয়।
তবে নথিসূত্রে জানা যায়, ১৭ মে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির এক জরুরি সভায় আপাতত ভার্চুয়াল কোর্টের সকল কার্যক্রম হতে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত হয়। পরবর্তীতে ২ জুন ১৭ আইনজীবীর বিরুদ্ধে ওই ব্যবস্থা গ্রহণ বিষয়ে নোটিশ দেয়া হয়।
এ অবস্থায় ভার্চুয়াল কোর্টে অংশগ্রহণের কারণে গাইবান্ধা জেলা আইনজীবী সমিতির কতিপয় সদস্যের বিরুদ্ধে ওই সমিতির নির্বাহী কমিটির নেয়া সিদ্ধান্তের বিষয়ে ৪ জুন লিখিতভাবে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যানের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন কয়েকজন আইনজীবী। আর বিষয়টি আজ আদালতের নজরে আনলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, যিনি পদাধিকার বলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও চেয়ারম্যান।
১৭ আইনজীবী হলেন- পীযুষ কান্তি পাল, এস এম মাজহারুল ইসলাম সোহেল, মো. শাহনেওয়াজ খান, মো. নওশাদুজ্জামান, মো. সরওয়ার হোসেন বাবুল, মো. মঞ্জুর মোর্শেদ বাবু, মো. রেজওয়ানুল হক মন্ডল, মো. আশরাফ আলী, বেগম বদরুন্নাহার, নিরঞ্জন কুমার ঘোষ, মো. আব্দুস সালাম, জি এম মুরাদ হাসান, মো. মোস্তাফিজুর রহমান, মো. মুরাদজ্জামান রব্বানী, মো. আব্দুর রশীদ, খন্দকার মঞ্জুরুল করিম সোহেল ও মো. জাহাঙ্গীর আলম সরকার জিন্নাহ।