প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংকটে যখন থমকে আছে পুরো বিশ্বের অর্থনীতি। ঠিক এই সময়ে বাংলাদেশের জন্য সুসংবাদ। বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন (রিজার্ভ) প্রথমবারের মতো ৩৪ বিলিয়ন ডলারের (তিন হাজার ৪২৩ কোটি) মাইলফলক অতিক্রম করে করেছে।
বুধবার (৩ জুন) বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, ৩ জুন পর্যন্ত দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের পরিমাণ ৩৪ দশমিক ২৩ বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে সর্বোচ্চ ৩৩ দশমিক ৬৮ বিলিয়ন (৩ হাজার ৩৬৮ কোটি ডলার) রিজার্ভ অতিক্রম করেছিল। এরপর দীর্ঘদিন ৩১ থেকে ৩২ বিলিয়ন ডলারে ওঠানামা করেছে রিজার্ভ।
বেসরকারি পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রার ঋণের দায় ও এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) দায় শোধ করলে এ রিজার্ভ আবারও কমে যাবে বলছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা।
জানা গেছে, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, ইরান, মিয়ানমার, নেপাল, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ- এই নয়টি দেশ বর্তমানে আকুর সদস্য। এই দেশগুলো থেকে বাংলাদেশ যেসব পণ্য আমদানি করে তার বিল দুই মাস পরপর আকুর মাধ্যমে পরিশোধ করে থাকে।
সেই হিসাবে মার্চ শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে এক হাজার ২০৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৫ টাকা ধরে) দাঁড়ায় এক লাখ ২ হাজার ৬৬৩ কোটি টাকা। ঘাটতির এ অংক ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময় ছিল এক হাজার ২২০ কোটি ১০ লাখ ডলার।
আলোচিত সময়ে, আমদানি কমেছে ৪ দশমিক ৮১ শতাংশ। রফতানি কমেছে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ। তবে রেমিট্যান্স বেড়েছে ১৬ দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ।
এদিকে করোনাভাইরাসের লকডাউনের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থাকা অনেক প্রবাসীর আয় বন্ধ হয়ে যায়। আবার অচলাবস্থার কারণে অনেকে দেশে অর্থ পাঠাতে পারেননি। এসব কারণে মার্চ ও এপ্রিল দুই মাস রেমিট্যান্সের প্রভাব কমে যায়। কিন্তু পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে মে মাসে রেমিট্যান্সের পাঠাতে থাকেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। গেল মে মাসের ১৫০ কোটি ৩৪ লাখ ডলারের রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা।
চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছরের ১১ মাসে (জুলাই-মে) এক হাজার ৬৩৬ কোটি ৪৬ লাখ (১৬.৩৬৬ বিলিয়ন) ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসীরা। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের একই সময়ে এই অঙ্ক ছিল এক হাজার ৫০৫ কোটি ১০ লাখ (১৫.০৫ বিলিয়ন) ডলার। এ হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর দেশের অর্থনীতির অন্যতম প্রধান এই সূচক ১ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার বা ৮ দশমিক ৭২ শতাংশ বেড়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরের পুরো সময়ে (জুলাই-জুন) এক হাজার ৬৪১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা।