মালয়েশিয়ায় অবৈধ প্রবাসীদের আটক অভিযান বেড়েই চলেছে। প্রতিদিনই কোনো না কোনো স্থানে চলছে পুলিশি অভিযান। ইতোমধ্যেই বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন দেশের দেড় হাজারের বেশি বিদেশিকে আটক করেছে দেশটির অভিবাসন বিভাগ। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান লকডাউন সময়ে ইমিগ্রেশনের অভিযানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে দেশটির কয়েকটি বেসরকারি সংস্থা।
সংকটকালীন অবৈধ প্রবাসীদের আটক না করে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন তারা। দেশটির ম্যানুফ্যাকচারিং এবং বেসরকারি সংস্থাগুলি অনিবন্ধিত বিদেশিকর্মীদের কোভিড -১৯ স্ক্রিনিংয়ে যেতে উৎসাহিত করার জন্য একটি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার দাবি জানানো হয়।
থিয়ান লাই দেশটির জাতীয় দৈনিক স্টার অনলাইনে একটি সাক্ষাতে বলেন, চলমান লকডাউনে অনিবন্ধিত কর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনাহারে অর্ধাহারে বসবাস করছে। যা বেঁচে থাকার জন্য ন্যূনতম আবাসন মান পূরণ করে না। এক্ষেত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ায়।
মার্সি মালয়েশিয়ার সভাপতি দাতুক ডা. আহমদ ফয়জাল পারদৌস বলছেন, অনিবন্ধিত প্রবাসী শ্রমিকরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবাতে এগিয়ে আসার সম্ভাবনা কম। এটি এ কারণে নয় যে তারা পরীক্ষা করতে চান না, তবে তারা আটক হওয়ার ভয়ে রয়েছেন।
যদিও এই মুহূর্তে বিদেশি কর্মী এবং শরণার্থীদের উপর ব্যাপক স্ক্রিনিংয়ের প্রয়োজন ছিল না। মালয়েশিয়ায় প্রায় ছয় মিলিয়ন বিদেশিকর্মী এবং ১ লাখ ৯০ হাজার শরণার্থীর কথা উল্লেখ করে ডা. আহমাদ ফায়জাল বলেন, ‘সম্ভবত এখনও বিদেশিকর্মীদের পর্যাপ্ত পরিমাণ পরীক্ষা করা হয়নি’।
এদিকে চলমান সংকটময় সময়ে শুরু থেকেই অবৈধ বিদেশিদের আটক অভিযানের বিরোধিতা করে আসছে তেনাগানিতা। তেনাগানিতার পরিচালক ও পরামর্শক জোসেফ পল ম্যালিয়ামাউভ বলছেন, দরিদ্র সুবিধাবঞ্চিতদের মালয়েশিয়ানদের মতোই পরীক্ষা করা উচিত। সরকারের একটি স্পষ্ট বার্তা পাঠানো উচিত যে, সাধারণ ক্ষমার সময় তারা নিরাপদ থাকে এবং যদি তারা অসুস্থ বোধ করে তবে তাদের পরীক্ষা করা যেতে পারে।
তেনাগানিতার নির্বাহী পরিচালক গ্লোরিনি এ দাস বলছেন, গত ‘রি-হায়ারিং প্রোগ্রাম’ চলাকালীন কয়েক হাজার অভিবাসীকর্মী যারা কেডিএনকে কয়েক লাখ রিঙ্গিত প্রদান করেছে তাদের ক্ষেত্রেও এটি প্রযোজ্য কিনা? আজ পর্যন্ত সরকার (যদিও সরকারগুলি পরিবর্তিত হয়েছে, তবে একই ব্যক্তিরা আজ নেতারা) প্রোগ্রামটির ব্যর্থতা এবং অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার জন্য দায়বদ্ধ হতে অস্বীকার করেছে।
যে সকল অভিবাসী শ্রমিকরা তেনাগণিতার সহায়তা চেয়েছিলেন তাদের প্রতিবেদন অনুসারে, পুরো রি-হায়ারিং প্রোগ্রামটি অদক্ষতা ও দুর্নীতির সাথে হয়েছিল। ফলস্বরূপ, এর শিকার হওয়া প্রায় অর্ধ মিলিয়ন অভিবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে অর্থে আদায়ের জন্য সরকার-স্পনসরিত কেলেঙ্কারী হিসাবে আখ্যায়িত করা যেতে পারে । তারা কেবল তাদের অর্থ এবং পাসপোর্ট হারায় নাই, তাদের নিজের কোনও দোষ না থাকলেও তারা অবৈধ থেকে যায় এবং তাদের আটকে রাখা হয়, আদালতে অভিযুক্ত করা হয় এবং নির্বাসিত করা অব্যাহত থাকে।
তিনি বলেন, যারা গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং আটক হয়েছেন তাদের মধ্যে অনেকে বৈধ হিসাবেই এই দেশে এসেছেন কিন্তু তারা অবৈধ এবং প্রশাসনিক অপরাধের জন্য ইমিগ্রেশন আইনের অধীনে অপরাধী হিসাবে বিবেচিত হবে, যার জন্য আমরা খুব সুপরিচিত। একথা আবার আমাদের মনে রাখা উচিত যে ‘কোনও মানুষ’ ‘অবৈধ’ হতে পারে না’।
এদিকে, রি-হিয়ারিং প্রোগ্রামের শেষের দিকে বাংলাদেশের হাইকমিশনার মহ. শহিদুল ইসলাম সংশ্লিষ্ট দফতরে চিঠির মাধ্যমে জানিয়েছিলেন, রি-হিয়ারিং প্রোগ্রাম চলাকালে বাংলাদেশি অবৈধ কর্মীরা সরকারের এ আহ্বানে সাড়া দিয়ে বৈধ হওয়ার জন্য আবেদন করেও প্রতারণার শিকার হয়েছে।
তাদের বৈধ করে নেয়ার আহ্বান আশ্বাস দেয়া হয়েছিল। কিন্তু পটপরিবর্তনে আর কিছুই হলো না। এছাড়া মহামারি করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলমান মুভমেন্ট কন্ট্রোল সময়ে বৈধ অবৈধ বাংলাদেশি কর্মীদের চিকিৎসা নিশ্চিত ও অবৈধদের গ্রেফতার না করতে মালয়েশিয়া সরকারকে অনুরোধ ও জানিয়েছিলেন হাইকমিশনার মহ. শহিদুল ইসলাম।