প্রচ্ছদ বিনোদন শুভ জন্মদিন ফেলুদার স্রষ্টা

শুভ জন্মদিন ফেলুদার স্রষ্টা

ফেলুদা কিংবা গুপি গাইন বাঘা বাইন – কালজয়ী সে সব গল্পের স্রষ্ঠা বা সিনেমার নির্মাতা সত্যজিৎ রায় ২০০৪ সালে বিবিসির জরিপে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি তালিকায় তিনি ১৩ তম স্থান লাভ করেছিলেন।

জগদ্বিখ্যাত এই চলচ্চিত্র নির্মাতার জন্মদিন আজ। ১৯২১ সালের আজকের এই দিনে তিনি কলকাতার বিখ্যাত রায় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন।

বাবা সুকুমার রায় এবং পিতামহ উপেন্দ্রকিশোর রায় চৌধুরী দুইজনেই বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র। তাদের পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের কিশোরগঞ্জ জেলার কটিয়াদি থানার মসূয়া গ্রামে।

সমৃদ্ধশালী রায় পরিবারে জন্ম হলেও সত্যজিৎ রায়ের শৈশব মোটেও সুখকর ছিল না। মাত্র তিন বছর বয়সে তার পিতৃবিয়োগ ঘটে। মা সুপ্রভা দেবী বহু কষ্টে তাকে বড় করেন।

১৯৪০ সালে মায়ের ইচ্ছায় তিনি শান্তিনিকেতনে ভর্তি হলেও লেখাপড়া শেষ না করে ১৯৪৩ সালে ব্রিটিশ বিজ্ঞাপন সংস্থা ডি জে কিমারে মাত্র ৮০ টাকা বেতনে ‘জুনিয়র ভিজুয়ালাইজার’ চাকরি শুরু করেন।

১৯৪৭ সালে সত্যজিৎ রায় ও চিদানন্দ দাসগুপ্ত কলকাতা ফিল্ম সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯৪৯ সালে সত্যজিৎ রায় তার দীর্ঘদিনের বান্ধবী বিজয়া দাসকে বিয়ে করেন।

সত্যজিৎ দম্পতির ঘরে ছেলে সন্দীপ রায়ের জন্ম হয়, যিনি নিজেও বর্তমানে একজন প্রথিতযশা চলচ্চিত্র পরিচালক।

১৯৫২ সালে তিনি বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিখ্যাত উপন্যাস ‘পথের পাঁচালি’ নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মাণ কাজ শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে ছবিটির নির্মাণ সম্পন্ন হয় এবং সে বছরই ছবিটির মুক্তি দেয়া হয়। মুক্তি পাওয়ার পর ছবিটি ব্যাপক দর্শকনন্দিত হয়।

‘পথের পাঁচালী’ মোট ১১টি আন্তর্জাতিক পুরস্কার লাভ করে। এর মধ্যে অন্যতম ছিল কান চলচ্চিত্র উৎসবে পাওয়া ‘বেস্ট হিউম্যান ডকুমেন্ট’ পুরস্কার।

সত্যজিত রায় পরবর্তীতে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্প-উপন্যাস অবলম্বনে ‘অপরাজিত’ ও ‘অপুর সংসার’ নামে আরও দুইটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এ তিনটি চলচ্চিত্র একত্রে অপু ট্রিলজি হিসেবেই পরিচিত।

এছাড়াও সত্যজিৎ রায় ‘পরশপাথর’ নামের হাস্যরসাত্মক ছবি, জমিদারি প্রথার অবক্ষয় নিয়ে নির্মিত ‘জলসাঘর’; বিভিন্ন সামাজিক সমস্যা নিয়ে ‘দেবী’; ‘তিন কন্যা’ এবং ‘অভিযান’ এবং ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’ নামে রঙিন চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন।

বাংলা চলচ্চিত্রের বাইরে সত্যজিৎ রায় ১৯৭৭ সালে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ নামের হিন্দি ও উর্দু সংলাপ নির্ভর একটি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন। এটিই ছিল বাংলা ভাষার বাইরে অন্য ভাষায় নির্মিত সত্যজিৎ রায়ের প্রথম চলচ্চিত্র।

পরবর্তীতে সত্যজিৎ প্রেমচাঁদের গল্পের ওপর ভিত্তি করে ‘সদ্গতি’ নামের হিন্দি ভাষায় এক ঘণ্টার একটি ছবি বানিয়েছিলেন।

১৯৮৩ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। এরপর তার কাজের গতি একেবারে কমে আসে। স্বাস্থ্যের অবনতির ফলে ছেলে সন্দ্বীপ রায়ের সহায়তায় ১৯৮৪ সালে সত্যজিৎ রায় ‘ঘরে বাইরে’ ছবিটির নির্মাণকাজ শেষ করেন। ১৯৮৭ সালে সত্যজিৎ তার বাবা সুকুমার রায়ের ওপর একটি প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ করেন।

সত্যজিৎ রায়ের অমর সৃষ্টি জনপ্রিয় গোয়েন্দা চরিত্র ‘ফেলুদা’ কিংবা ‘প্রোফেসর শঙ্কু’ এখনও সমান জনপ্রিয়।

১৯৯২ সালের ২৩ এপ্রিল হৃদযন্ত্রের জটিলতায় বহুমাত্রিক, বহুলপ্রজ ও সৃজনশীল এই চলচ্চিত্র নির্মাতার মৃত্যুবরণ করেন।

গত শতাব্দীর শেষ দিকেও যদি কাউকে চলচ্চিত্র অঙ্গনের কয়েকজন শ্রেষ্ঠ নির্মাতার নাম জিজ্ঞাসা করা হত তখন সন্দেহাতীতভাবে একজন বাঙালি চলচ্চিত্র নির্মাতার নাম উচ্চারিত হত সবার আগে।

তিনি এমন এক উজ্বল নক্ষত্র যিনি বাংলা চলচ্চিত্র তো বটেই এমনকি পুরো উপমহাদেশের চলচ্চিত্রকে এক অভিন্ন মাত্রা দিয়েছিলেন। এমন এক গুণী মানুষকে জন্মদিনের অনেক অনেক শুভেচ্ছা।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন

x