৪২-এ শাকিব খান

৪২-এ পা রাখলেন সুপারস্টার শাকিব খান। গতকাল ছিল জনপ্রিয় এ চিত্রনায়কের জন্মদিন। দেশ-প্রবাসের কোটি ভক্ত বিশেষ দিনে শাকিবকে শুভেচ্ছা ও দোয়া জানান। সামাজিক যোগাযোগের নানা মাধ্যমে শাকিবকে নিয়ে নিজেদের অনুভূতি প্রকাশ করেছেন ভক্তরা। এটি তার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। সেই অনুভূতি নাড়া দেয় শাকিব খানের বাবা-মায়ের মনেও! পাবনায় ‘অন্তরাত্মা’ সিনেমায় শ্যুটিং করছেন তিনি। সেখান থেকে শাকিব খান বলেন, ‘আমাকে যারা ভালোবেসে প্রতি বছর জন্মদিন এলে তারা নানাভাবে উদ্যাপন করেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় চোখ রাখলেই ইমোশনাল হয়ে পড়ি। ভক্তরা নিজেদের ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ জানান, বিষয়টি আমার কাছে অত্যন্ত সুখের। মাঝেমধ্যে দেখে নীরবে কাঁদি। আমার বাবা-মাও গর্বিত হন।’ শাকিব খান আরও বলেন, ‘ফ্যানদের সঙ্গে সরাসরি দেখা করা সম্ভব না। তারা নিজেরাও জানেন হয়তো কখনো সরাসরি পরিচিত হতে পারবেন না। কিন্তু বছরের পর বছর আমাকে অন্ধের মতো ভালোবাসেন।

কত কিছু যে করেন আমার জন্য! একা একা যখন এগুলো দেখি আমার চোখ ভিজে যায়। ওদের এসব পাগলামো আমাকে কাজের অনুপ্রেরণা দেয়। নইলে এত দিন হয়তো আমার কাজের গতিপথ পরিবর্তন হতো! সব সময় বলি আমি ওদেরই জন্য, যাদের জন্য আজকের আমি। তাই জন্মদিনে ভক্তদের বিভিন্ন পাগলামি ও অনুভূতি প্রকাশের ধরন দেখে আমার কাছে জন্মদিন হয়ে ওঠে বিশেষ দিন।’

জন্মদিনে ঢাকায় থাকা হলে লাইট-ক্যামেরার বাইরে শাকিব খানের নিজের বাসায় বিশেষভাবে পালন করা হয়। শুধু কেক কাটার মধ্যে তা সীমাবদ্ধ থাকে না। শাকিব খান বলেন, ‘মায়ের সঙ্গে আমার একমাত্র ছোট বোন অন্যরকম আয়োজন করে। সেই আয়োজনের বড় অংশ জুড়ে থাকে আমার পছন্দের সব খাবার। তারা স্পেশালভাবে নিজে খাবার রান্না করে খাওয়ায়। তাদের দুজনের রান্নার ফ্যান আমি।’

তবে এবারের জন্মদিনে তিনি পাবনা সদরে। আসন্ন ঈদের সিনেমা ‘অন্তরাত্মা’র শ্যুটিংয়ে ব্যস্ত। সোহানী হোসেনের প্রযোজনায় সিনেমাটি পরিচালনা করছেন ওয়াজেদ আলী সুমন। আপনজনের কাছে নেই, শাকিবকে তা অনুভব করতে দেননি প্রযোজক সোহানী হোসেন। জন্মদিন উপলক্ষে বিশেষ চমক দেন শাকিব খানকে, যা এ নায়ক কখনো ভুলবেন না। পাবনা রতদ্বীপ রিসোর্টে রাত সাড়ে ১১টায় সোহানী হোসেন নিজ হাতে নানা পদের সুস্বাদু খাবার রান্না করে আনেন শাকিব খানের জন্য।

১২টা ১ মিনিটে দুটি হাতি ও ব্যান্ডপার্টি নিয়ে হাজির হন প্রযোজক। পুরো রিসোর্টে আলোকসজ্জা ও শাকিবের ব্যানারে মুড়িয়ে ফেলা হয়। এমন জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনে জন্মদিনের কেক কাটেন শাকিব। লেখিকা ও প্রযোজক সোহানী হোসেন বলেন, ‘শাকিবকে আমার নিজের ভাই মনে করি। খুব অল্প সময়ে যতটুকু পেরেছি করেছি। সময় বেশি হলে হয়তো তাকে জন্মদিনে অন্যভাবে সারপ্রাইজ দিতে পারতাম।’

এবারের জন্মদিনে নতুন কোনো অনুভব নিজের মধ্যে কাজ করছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করেছি সাফল্য পেয়েছি। ভবিষ্যতে অন্য ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ করলেও সাফল্য আসবে ইনশাআল্লাহ। মানুষ গর্বের সঙ্গে বলবে তিনি আমাদের শাকিব খান। পরিশ্রম ও সততা রেখে ভালো কাজ করলে গন্তব্য বা সাফল্য অবশ্যই ধরা দেবে। ভালো কাজে বাধা আসবে। তাই বলে থেমে যাওয়া যাবে না। যে পারে শত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও এগিয়ে যেতে পারে। এটা আমার সবচেয়ে বড় মোটিভেশন। সঙ্গে মানুষের ভালোবাসা তো আছেই।’

১৯৭৯ সালের ২৮ মার্চ গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘধীতে জন্ম নেন শাকিব খান। এই অভিনেতার আসল নাম মাসুদ রানা। তার বাবা আবদুর রব ছিলেন সরকারি কর্মচারী। বাবার চাকরির সূত্রেই শাকিব খানের শৈশব থেকে বেড়ে ওঠা নারায়ণগঞ্জে। ১৯৯৯ সালে শাকিব খানের প্রথম সিনেমা মুক্তি পায়। এটি ছিল সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘অনন্ত ভালোবাসা’। সিনেমাটি ব্যবসাসফল না হলেও নিজের মেধার ঝলক দেখাতে পেরেছিলেন শাকিব খান। এরপরের বছরই তৎকালীন শীর্ষ নায়িকা শাবনূরের বিপরীতে ‘গোলাম’ সিনেমায় অভিনয় করে সফল হন এই অভিনেতা।

এরপর পূর্ণিমার বিপরীতে ‘আজকের দাপট’, পপির বিপরীতে ‘দুজন দুজনার’ এবং মুনমুনের বিপরীতে ‘বিষে ভরা নাগিন’ সিনেমায় অভিনয় করে পরিচিতি পান তিনি। এরপর একের পর এক সাফল্যের মধ্য দিয়ে এগিয়ে যান শাকিব খান। এখন পর্যন্ত চারটি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (২০১০ সালের ‘ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না’, ২০১২ সালের ‘খোদার পরে মা’, ২০১৫ সালের ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’ এবং ২০১৭ সালের ‘সত্তা’) ছাড়াও অনেক স্বীকৃতি-সম্মাননা লাভ করেছেন শাকিব খান। ২০০৮ সালে চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাসকে গোপনে বিয়ে করেছিলেন শাকিব। দীর্ঘদিন ঘটনা চাপা থাকলেও ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল এ কথা নিজেই প্রকাশ করেন অপু বিশ্বাস। তাদের ঘরে আব্রাম খান জয় নামে একটি ছেলেসন্তানও রয়েছে। তবে ঘটনা জানাজানির পরপরই তাদের বিবাহবিচ্ছেদ হয়।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন