ছোট মোড়কজাত ভোগ্যপণ্যের সংকট দামও বেড়েছে

নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে ২৬ মার্চ থেকে সারা দেশে সাধারণ ছুটি চলছে। কাজ বন্ধ থাকায় জীবন ধারণ কঠিন হয়ে পড়েছে নিম্নআয়ের মানুষের। তাদের ত্রাণ সহায়তা দেয়ার প্রয়োজনে চাল-ডালের পাশাপাশি ছোট মোড়কজাত ভোগ্যপণ্যের চাহিদাও বেড়েছে বাজারে। হঠাৎ চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় খুচরা বাজারে সরবরাহ সংকট দেখা দিয়েছে এসব পণ্যের। সেই সঙ্গে বেড়েছে দামও।

পাইকারি ও খুচরা বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরকারি ত্রাণের পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে ব্যক্তি পর্যায়ে ত্রাণ বিতরণের পরিমাণ বেড়েছে। জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন, ব্যক্তি উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ চলছে। এ কারণে ৫০০ মিলিলিটার ও এক লিটার ভোজ্যতেল, এক কেজির আটা ও ময়দা, লবণ, মিনি সাবান, চিনিসহ ছোট প্যাকেটের ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে অনেক। চাহিদার সঙ্গে সংগতি রেখে সরবরাহ দিতে না পারায় গায়ের মূল্যের চেয়েও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে এসব নিত্যপণ্য।

সরবরাহ সংকটের বিষয়ে জানতে চাইলে দেশের অন্যতম ভোগ্যপণ্য আমদানিকারক ও মোড়কজাতকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা (করপোরেট অ্যান্ড রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স) বণিক বার্তাকে বলেন, বর্তমান সময়ে ভোগ্যপণ্য আমদানি, মোড়কজাত, বিপণন ও সরবরাহে নানামুখী সংকট দেখা দিয়েছে। আসন্ন রমজান ও ত্রাণের কারণে পণ্যের চাহিদা বেড়ে গেছে। কিন্তু লকডাউনের কারণে শ্রমিক সংকট তীব্র। উৎপাদনের পর পণ্য পরিবহন ও বিপণন চেইন ভেঙে পড়েছে। এর পরও আমরা চেষ্টা করছি এ সময়ে মানবিক কারণে ৬৪ জেলায় নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পণ্য পৌঁছে দিতে।

এদিকে চাহিদা বেড়ে যাওয়ার সুযোগে মোড়কজাত পণ্যের দামও বাড়িয়ে দিয়েছে কোম্পানিগুলো। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বাড়ানো হয়েছে মোড়কজাত ভোজ্যতেলের দাম। গত দুই মাস ধরে দেশের মোড়কজাত ভোজ্যতেলের দাম উপর্যুপরি বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। ১০ দিন আগে ভোজ্যতেলের দাম আবারো বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে আটা, ময়দাসহ অন্যান্য পণ্যের দামও বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো।

মোড়কজাত ভোজ্যতেলের মধ্যে এক লিটারের (পলিপ্যাক) দাম ৯৮ থেকে বাড়িয়ে ১০৬ টাকা করা হয়েছে। আর বোতলজাত ভোজ্যতেল এক লিটারের দাম ১০৬ থেকে বাড়িয়ে ১১৪ টাকা, দুই লিটারের দাম ২১১ থেকে বাড়িয়ে ২২৬ টাকা এবং পাঁচ লিটারের দাম ৫১৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৪০ টাকা করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে মোড়কজাত এক কেজি ওজনের আটা-ময়দার দামও। প্রতি কেজি প্যাকেটজাত আটা ও ময়দার দাম এ সময়ের ব্যবধানে ২ থেকে ৩ টাকা বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। বর্তমানে কেজিপ্রতি আটা বিক্রি হচ্ছে ৩৪ থেকে (কোম্পানিভেদে) ৩৬ টাকা এবং ময়দা ৪৪ থেকে ৪৮ টাকা। পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, শ্রমিক সংকট ও চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে কোম্পানিগুলো পণ্যের দাম বাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রামের সরকারি কমার্স কলেজ রোডের মেসার্স খাজা গরিবে নেওয়াজ ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের স্বত্বাধিকারী মো. আবদুর রহিম বণিক বার্তাকে বলেন, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ও মুদি দোকানগুলোতে ত্রাণের চাহিদাই সবচেয়ে বেশি। পাড়া-মহল্লা থেকে প্রতিদিনই কেউ না কেউ ত্রাণের অর্ডার করছেন। ফলে ত্রাণের প্যাকেটে ছোট ভোজ্যতেল, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন পণ্য চাহিদামতো দেয়া যাচ্ছে না। ফলে বড় প্যাকেটের পরিবর্তে ছোট প্যাকেটগুলোর দামই বেড়ে গেছে। কোম্পানিগুলো নিয়মিত সরবরাহ দিলে সংকট থাকবে না বলে মনে করছেন তিনি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন