স্বাস্থ্যকর্মীদের কণ্ঠরোধ নয়, সমস্যা শুনতে হবে, তবেই সমাধানের পথ বের হবে!

পৃথিবীর প্রায় সকল দেশেই স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য সেই দেশের আশে পাশের হোটেলগুলো স্বাস্থ্যকর্মীদের থাকার জন্য ছেড়ে দিয়েছে জায়গা, কর্পোরেট কোম্পানি ও বড় বড় হোটেল রেস্টুরেন্টগুলো প্রতিদিন পালা করে খাবার পাঠাচ্ছেন আবাসিক হোটেল ও হাসপাতালগুলোতে স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য! সারাবছর তারা ব্যবসা করেছেন, এই দুর্যোগকালীন সময়ে কি সরকারকে এই ক্ষেত্রে আমাদের দেশের হোটেল, কর্পোরেট কোম্পানি ও বড় ছোট রেস্টুরেন্টগুলো একটু মানবিক হয়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে না? নিশ্চয়ই পারে, দরকার সমন্বিত ভাবনার!

এই দুর্যোগ সরকারের একার পক্ষে সামলানো কঠিন, তা আমেরিকা হউক আর বাংলাদেশ হউক! আমাদের সকলের এগিয়ে আসা দরকার। ব্রিটেন-আমেরিকায় প্রতিদিন টিভিগুলো জানান দিচ্ছে, কারা কারা তাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের সাহায্য করছে, বা করবে। আমরাও সেটা শুরু করতে পারি, অন্তত নাম প্রচারের জন্য হলেও অনেক কোম্পানি, রেস্টুরেন্ট এগিয়ে আসবে আমি নিশ্চিত! অনেকেই মানবিকতার জায়গা হতে এগিয়ে আসবে।

স্বাস্থ্যকর্মীদের আনা-নেয়া করার জন্য বেসরকারি সকল হাসপাতালের গাড়ীগুলো, এমনকি অনেক কর্পোরেট কোম্পানির গাড়িগুলো পুলিশ প্রশাসন এর মাধ্যমে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এখন ব্যবহৃত হতে পারে। গাড়িগুলো হয়তো গ্যারেজেই পড়ে আছে, সেগুলোকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

নার্সিং অধিদপ্তরের এই নোটিস হয়তো নার্সদের মিডিয়ায় কথা বলা বন্ধ করতে সহায়তা করবে, কিন্তু মূল সমস্যা রয়েই যাবে। স্বাস্থ্যকর্মীদের মুখ বন্ধ করার চেয়ে জরুরী তাদের পেটে খাবার দেয়া, তাদের পরিবার থেকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা করা! যারা এই ধরণের নোটিস দেবার বুদ্ধি রাখেন, তাঁরা সম্ভবত ভুলে গেছেন এটা ডিজিটাল যুগ, মানুষের হাতের মুঠোয় এখন মিডিয়া! সমস্যা জানানোর জন্য টেলিভিশন ছাড়াও অনেক উপায় আছে, কয়টা বন্ধ করতে পারবেন? বরং এসব নোটিস তৈরিতে সময় না দিয়ে সমাধানের পথ খোঁজা জরুরী।

নার্সরা সারাদিন করোনার সাথে যুদ্ধ করে বাড়ি গিয়ে রান্না করে খাবে এই মুহূর্তে এমন ভাবাটাও তো আমাদের ঠিক হচ্ছেনা| তাদের মানসিক অবস্থা একবার বিবেচনায় আনা দরকার। পারিবারিক চাপ, সন্তান লালনপালন, বাড়ীওয়ালার চাপ, এসব মানবিক জায়গা হতে ভেবে দেখা জরুরী। আসুন, তাদের কণ্ঠস্বর রোধের দিকে নজর না দিয়ে এর বদলে পজিটিভ উপায়ে ভাবি জরুরী সময়ের এই স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে কিভাবে ভালভাবে কাজে লাগানো যায়। সারাবিশ্বেই এখন স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, তবে আমাদের দেশের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতির কারণে নয়, বাজেট স্বল্পতার কারণে। সকল দেশের জনগণ যার যার স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে বকাবকি করছে, এতে তাঁরা স্বাস্থ্যকর্মীদের কণ্ঠরোধের ব্যবস্থা করছে না, বরং সেইসব সমালোচনা হতে সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধানের পথ খুঁজছে! আমাদেরকেও তাই করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, যেখানে এলাকাবাসী করোনার জন্য হাসপাতাল স্থাপনে বাধা দেয়, বাড়িওয়ালারা বাসা থেকে বের করে দিতে চায় স্বাস্থ্য কর্মীদের, যেসময়ে করোনার ভয়ে সন্তানেরা মাকে বনে জঙ্গলে ফেলে আসে, স্বামী স্ত্রীকে রেখে পালিয়ে যায়, স্ত্রী স্বামীকে রেখে পালিয়ে যাচ্ছে, গ্রামবাসী লাশ বহনের জন্য খাটিয়া দেয়না, সারাবছর যাদের বড় বড় ওয়াজ-মাহফিল শুনতে শুনতে কান এর বারোটা বাজতো, তারা পর্যন্ত জানাজা পড়ায় না, জানাজা পড়ানোর ভয়ে পালিয়ে আছে, সেখানে আমরা সকল স্বাস্থ্য কর্মীকে সমানভাবে স্বাস্থ্যসেবা দেবে বলে আশা করলে ভুলের স্বর্গে বসবাস করছি! তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের সেবা দেয়ার সুব্যবস্থা করে দিলে তাদের কাছ থেকে সঠিক সেবা পাবার আশা যায়, নয়তো আশা করাটাও তো অন্যায় হবে।

আসলে এই মুহূর্তে স্বাস্থ্যকর্মীদের জীবনের নিরাপত্তার বিষয়টি তো আছেই, সাথে আরও চিন্তার বিষয় হল, তাদের মাধ্যমে অন্যদের ভেতরেও সংক্রমিত হবার ভয়, সেটাকেও মাথায় রাখা জরুরী। এখন পলিসি নির্মাণের শুরুটাই করতে হবে আগামী এক/দুই মাস পর কি হতে পারে, সেটাকে মাথায় রেখে। নার্সদের কণ্ঠরোধ করার কৌশল নিয়ে ভাবনার সময় এখন নয়। আমরা একটু উদার হই, মস্তিষ্কের কিছু অংশ ভাল চিন্তায় ব্যবহার করি। সমন্বিত পরিসরের কথা ভাবি! এককভাবে এই পৃথিবীতে এখন কোন দেশই কিছু করছেনা….দরকার সমন্বিত ব্যবস্থা, দরকার দল, মত, শ্রেণী নির্বিশেষে সবার এগিয়ে আসা। স্বাস্থ্যমন্ত্রী ভুলে যে পিপিপি’র কথা বলেছেন, সেই পিপিপি (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ) এখন দরকার! এখন বিতর্কের সময় নয়, সময়টা সতর্ক হবার!

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন