বিশ্বের বিভিন্ন দেশের শোবিজের ৯ তারকার মৃত্যু

হুহু করে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। করোনাভাইরাসের থাবায় সারা বিশ্বে প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার মানুষ। রেহাই পাননি শোবিজ অঙ্গনের পরিচিত মুখগুলোও। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৯ শোবিজ তারকা প্রাণ হারিয়েছে। সংক্রমিত অবস্থায় আছে শতাধিক পর্দার মানুষ।

এ তালিকায় সর্বশেষ যোগ হয়েছেন ‘এইন্ট নো সানশাইন’ ও ‘লিন অন মি’ গানের গায়ক বিল উইথার্স। উইথার্সের বয়স হয়েছিল ৮১ বছর। পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, অনেক দিন ধরেই হার্টের সমস্যায় ভুগছিলেন উইথার্স। এমনকি ১৯৮৫ সালের পর আর কোনো গানও প্রকাশ করেননি এই শিল্পী। তার গাওয়া ‘লিন অন মি’ গানটি এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সেই গান শেয়ার করে তাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন ভক্তরা।

তার এক দিন আগেই এ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারিয়েছেন হলিউড অভিনেত্রী জুলি বেনেট। তার বয়স হয়েছিল ৮৮ বছর। দ্য যোগী বিয়ারখ্যাত অভিনেত্রীর মৃতু্যর খবরে মুহূর্তেই শোকের ছায়া নেমে এসেছে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র দুনিয়ায়। মার্কিন গণমাধ্যমের কল্যাণে জানা গেছে, গত ৩১ মার্চ থেকে হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন অভিনেত্রী জুলি। কোভিড ১৯-এ আক্রান্ত হওয়ার পর থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। এরপর শুক্রবার তার মৃতু্যর খবর আসে।

মঙ্গলবার সূর্যের আলো উঠার আগেই না-ফেরার দেশে পাড়ি জমান স্টার ওয়ার্স খ্যাত অভিনেতা অ্যানড্রিউ জ্যাক। তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। সিনেমার ভাষা প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করেছেন রবার্ট ডাউনি জুনিয়র ও পিয়ার্স ব্রসনানের মতো অভিনেতাদের সঙ্গে। জানা গেছে, টেমসের একটি পুরনো হাউসবোটে তিনি একা বাস করতেন। জীবন ধারণে খুব স্বাধীনচেতা ছিলেন অ্যানড্রিউ জ্যাক। স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসতেন তিনি। কিন্তু মৃতু্যকালে তিনি কাছে থাকতে পারেননি। বর্তমানে তার স্ত্রী অস্ট্রেলিয়াতে কোয়ারেন্টিনে আছেন। অ্যানড্রিউ জ্যাকের পর বৃহস্পতিবার খবর পাওয়া যায়, গ্র্যামি পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক অ্যাডাম স্কলেঞ্জারেরও মৃতু্য হয় করোনায় আক্রান্ত হয়ে। এমনকি কান্ট্রি মিউজিকের কিংবদন্তি সংগীততারকা কেনি রজার্স করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।

এখানেই শেষ নয়, মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে কিংবদন্তি ব্রিটিশ কমেডিয়ান ইডি লার্জ। লার্জের মৃতু্যর বিষয়টি ফেসবুকের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছেন তার ছেলে রায়ান ম্যাকগিনিস। তিনি লিখেন, ‘তার বাবা আগে থেকেই হৃদরোগে ভুগছিলেন। দুর্ভাগ্যক্রমে হাসপাতালে থাকাকালীন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। বাবা এতদিন সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। এই ভয়াবহ রোগের কারণে আমরা তাকে হাসপাতালে দেখতে যেতে পারিনি।’ এ কমেডিয়ান ১৯৭০ এবং ৮০-এর দশকে কৌতুক অভিনেতা সিড লিটলের পাশাপাশি খ্যাতি পেয়েছিলেন। তাদের দুজনের জনপ্রিয় ‘লিটল অ্যান্ড লার্জ’ শো ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

গত রোববার সকালে আরও একটি খারাপ সংবাদ দেয় হলিউড রিপোর্ট। সেটা হলো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে ‘আই লাভ রক অ্যান্ড রোল’ গানের লেখক ও গায়ক অ্যালান মেরিলের মৃতু্যর খবর। মেয়ে লরা মেরিলের বরাত দিয়ে হলিউড রিপোর্ট সংবাদটি প্রকাশ করে। অ্যালান মেরিল ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, গিটারিস্ট, অভিনেতা ও মডেল। আবার তিনি ব্রিটিশ ব্যান্ডদল ‘দ্য অ্যারোস’-এর গীতিকার এবং ভোকালও ছিলেন। অ্যালান মেরিলের মেয়ে লরা মেরিল জানান, ‘তার বাবা সুস্থ ছিলেন। কয়েক সপ্তাহ আগেও কনসার্ট করেছিলেন। কয়েক দিন আগে সর্দি-কাশি হয়েছিল। তবে বিষয়টিকে তেমন গুরুত্ব দেননি তার বাবা। পরবর্তীতে করোনার উপসর্গ থাকায় ১০ দিন আগে সেলফ কোয়ারেন্টিনে যান অ্যালেন। এরপর গত শনিবার ভোরে শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে দ্রম্নত তাকে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভেন্টিলেটর দেওয়া হয়। এর এক দিন পর তিনি মারা যান।’

করোনাভাইরাসের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতে শুরুর দিকেই হেরে যান গ্র্যামি পুরস্কারপ্রাপ্ত গায়ক জো ডিফি ও কমেডিয়ান কেন শিমুরা। গায়ক জো ডিফির বয়স হয়েছিল ৬১ বছর। গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে জো ডিফির গান থাকত চার্টবাস্টারের প্রথম দিকে। গ্র্যামিসহ মিউজিক জগতের একাধিক পুরস্কারে সম্মানিত হয়েছেন তিনি। গত কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন জো। পরে পরীক্ষায় তার দেহে করোনার সন্ধান মেলে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সঙ্গে দুদিনের বেশি লড়াই করতে পারেননি তিনি।

অন্যদিকে বাংলাদেশের দর্শকদের কাছে ‘কাইশ্যা’ নামে পরিচিত জাপানের কমেডিয়ান কেন শিমুরাও মারা গেছেন একই কারণে। জ্বর ও নিউমোনিয়ার কারণে ৭০ বছর বয়সি কেন শিমুরাকে ২০ মার্চ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। এর তিন দিন পর করোনাভাইরাস ধরা পড়ে তার। একসময় অবস্থার অবনতি হতে থাকে তার। অবশেষে তিনিও চলে যান না-ফেরার দেশে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন