পণ্য নেওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক বড়ো ব্র্যান্ডগুলো

করোনা ভাইরাসের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের বিদেশি ক্রেতারা একের পর এক পণ্যের ক্রয়াদেশ বাতিল করছেন। এমনকি বন্দরে জাহাজীকরণের অপেক্ষায় থাকা পণ্যও আপাতত নিচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে রপ্তানিকারকদের মাথায় হাত পড়েছে।

তবে স্বস্তির খবর আসছে বড়ো ব্র্যান্ডগুলোর কাছ থেকে।বাংলাদেশ থেকে অন্যতম বড়ো আমদানিকারক ব্র্যান্ড এইচ অ্যান্ড এম ইতিমধ্যে জানিয়েছে, উৎপাদন হওয়া ও উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পোশাকের ক্রয়াদেশ তারা বাতিল করবে না। এসব পণ্যের মূল্য তারা পরিশোধ করবে।

গত মঙ্গলবার একই বার্তা দিয়েছে আরো পাঁচটি ব্রান্ড। এগুলো হলো—মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, ইনডিটেক্স, পিভিএইচ, কিয়াবি ও টার্গেট। এর মধ্যে তিনটি ইউরোপভিত্তিক ও দুইটি যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতা প্রতিষ্ঠান।এর বাইরে আরো কিছু ব্র্যান্ড ভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সিঅ্যান্ডএ, ক্যাপাল, বেনেটন ও ডেকাথলন।

এছাড়া টম টেলর জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) সরবরাহের জন্য তাদের কর্মীদের একদিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করবে ঢাকা অফিসের কর্মীদের।সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, আলোচ্য ব্র্যান্ডগুলোও উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পোশাকের দর পরিশোধের আশ্বাস দিয়েছে। তবে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে আপাতত নতুন ক্রয়াদেশ না দেওয়ার বিষয়টিও স্মরণ করিয়ে দিয়েছে।

ব্র্যান্ডদের এমন উদ্যোগে কিছুটা হলেও স্বস্তি ফিরেছে তাদের পণ্য তৈরি করা কারখানা মালিকদের মধ্যে। তারা জানিয়েছেন, উৎপাদনের প্রক্রিয়ায় থাকা পণ্য গ্রহণ করলেও বড়ো ধরনের আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যাবেন তারা।

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ইপিজেডে অবস্থিত ডেনিম এক্সপার্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাফিজ উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, বড়ো ব্র্যান্ডদের এভাবে এগিয়ে আসা আমাদের জন্য অনেক স্বস্তির। ক্রয়াদেশের পণ্য নেওয়া বা দর পরিশোধের বাধ্যবাধকতা থাকলেও করোনা পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ বায়ারই তা মানছেন না।এমন পরিস্থিতিতে এইচ অ্যান্ড এম, মার্কস অ্যান্ড স্পেন্সার, ইনডিটেক্স, পিভিএইচ, কিয়াবি ও টার্গেটের মতো বড়ো ব্র্যান্ডগুলোর এই সিদ্ধান্ত অন্যদের জন্যও অনুকরণীয়।

আমরা আশা করব যারা ইতিমধ্যে ক্রয়াদেশ বাতিল করেছেন বা করার চিন্তা করছেন, তারা অন্তত উৎপাদনে থাকা পোশাকের দর পরিশোধের উদ্যোগ নেবেন।সূত্র জানিয়েছে, ঢালাও ক্রয়াদেশ বাতিলের পরিপ্রেক্ষিতে উদ্বেগ জানিয়ে সম্প্রতি ব্র্যান্ডগুলোকে চিঠি পাঠিয়েছেন গার্মেন্টস শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ সভাপতি ড. রুবানা হক। ৪০-এর অধিক ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে পাঠানো ঐ চিঠিতে তিনি উৎপাদনে থাকা রপ্তানি আদেশের পণ্য গ্রহণ করার অনুরোধ জানান। প্রয়োজনে পণ্যের মূল্য পরিশোধে ৯০ দিন পর্যন্ত বর্ধিত সময় নেওয়ার বিষয়টিও তারা মেনে নেবেন বলে জানান।

একই ইস্যুতে জার্মানির মন্ত্রী গার্ড মুলারকেও চিঠি পাঠান তিনি। ঐ চিঠিতে তিনি বলেন, ক্রয়াদেশের পণ্য পাঠানো সম্ভব না হলে কারখানা মালিকদের পক্ষে শ্রমিকের মজুরি পরিশোধ করা সম্ভব হবে না। সেক্ষেত্রে সামাজিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা তৈরি হবে।

বিজিএমইয়ের হিসাবে, এখন পর্যন্ত প্রায় ৩০০ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ রপ্তানি আদেশ বাতিল বা স্থগিত হয়েছে। স্থানীয় মুদ্রায় এর পরিমাণ প্রায় ২৪ হাজার কোটি টাকা। ক্রয়াদেশ না থাকায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক কারখানার। অন্যদিকে কারখানা চালু থাকলে শ্রমিকদের মধ্যে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গত চার দিন থেকে গার্মেন্টস কারখানায় ছুটি দেওয়া হয়েছে।

তবে গতকাল সচিবালয়ে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক আলোচনা শেষে বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি বলেছেন, যেসব কারখানায় রপ্তানি আদেশ আছে, সেগুলো চালু রাখা যাবে।এর বাইরে আরো কিছু ব্র্যান্ড ভিন্ন উপায়ে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসার আগ্রহের কথা জানিয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সিঅ্যান্ডএ, ক্যাপাল, বেনেটন ও ডেকাথলন। এ ছাড়া টম টেলর জানিয়েছে, বাংলাদেশের স্বাস্থ্য কর্মীদের সুরক্ষা পোশাক (পিপিই) সরবরাহের জন্য তাদের কর্মীদের এক দিনের বেতনের সমপরিমাণ অর্থ প্রদান করবে ঢাকা অফিসের কর্মীরা।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন