নিষ্ক্রিয় সাত ল্যাব: কর্তৃত্ব নয়, সমন্বিত কাজের সময় এখন

বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসের মহামারী তীব্র আকার ধারণ করলেও আমাদের পরিস্থিতি এখনও আশাব্যঞ্জক। তবে যে কোনো সময় পরিস্থিতি খারাপের দিকে মোড় নিতে পারে- এ আশঙ্কায় সরকার সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়েছে।

এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী বলে দিয়েছেন, করোনার উপসর্গ দেখা গেলেই যেন সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষার আওতায় আনা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, উপসর্গধারী সম্ভাব্য রোগীকে পরীক্ষার আওতায় আনা তো দূরের কথা, করোনাভাইরাসের মারাত্মক সব উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর মুখে পতিত হওয়া রোগীদেরও পরীক্ষার আওতায় আনা যায়নি অনেক ক্ষেত্রে।

অনেকে মারা যাওয়ার পর তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। অথচ কে না জানে, যে কোনো রোগের চিকিৎসার জন্য প্রথমে পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হয়।

এটা সত্য, রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) লোকবল সংকট, করোনা পরীক্ষার কিট সংকট ও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হিসেবে সবকিছু এক হাতে করছে।

মহামারীর পরিস্থিতিতে সবকিছু নিয়ন্ত্রণের মধ্য দিয়ে করা যেমন দরকার, তেমনি কেবল একক কর্তৃত্বের বিষয়টি মাথায় না রেখে সমন্বিতভাবে পরিস্থিতি মোকাবেলা করাই যৌক্তিক ও বুদ্ধিমানের কাজ।

অথচ আইইডিসিআরের কার্যক্রমে তেমনটি ফুটে উঠছে না। হাজারও মানুষ যখন জ্বর, সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে করোনা আতঙ্কে পরীক্ষার জন্য সরকারি এ প্রতিষ্ঠানে বারবার ফোন দিয়েও সাড়া পাচ্ছেন না, তখন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় সক্ষম সাতটি ল্যাবের বসে থাকা মেনে নেয়ার মতো নয়।

আমরা মনে করি, নিজেদের সক্ষমতা, মহামারী দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা, অন্য বছরের তুলনায় এ বছর সর্দি, কাশি ও শ্বাসকষ্টের রোগী ১৪ শতাংশ বেশি হওয়া ইত্যাদি বিবেচনায় সরকারি-বেসরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা রয়েছে করোনা পরীক্ষার, তাদের কাজে লাগানো ও সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে এগিয়ে যেতে হবে।

করোনাভাইরাস পরীক্ষার সক্ষমতা ও আন্তর্জাতিক মানের ল্যাব বিশেষজ্ঞ থাকার পরও আইসিডিডিআর’বিকে করোনা পরীক্ষার অনুমতি দেয়া হয়েছে মাত্র মঙ্গলবার। তাও ১০০টি কিট দিয়ে নামমাত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে আন্তর্জাতিক মানসম্মত প্রতিষ্ঠানটিকে।

সিদ্ধান্তের ক্ষমতা রেখে দেয়া হয়েছে আইইডিসিআরের হাতে। স্বয়ংসম্পূর্ণ ল্যাব ও প্রশিক্ষিত জনবল থাকা সত্ত্বেও কাজে লাগানো হচ্ছে না আরেক সরকারি প্রতিষ্ঠান নিপসমকে। এভাবে সক্ষম সরকারি-বেসরকারি অন্তত সাতটি ল্যাবকে কাজে লাগানো যাচ্ছে না।

বস্তুত আইইডিসিআর একক কর্তৃত্ব বজায় রাখার জন্য পর্যাপ্ত করোনা পরীক্ষা করতে পারছে না; অথচ মানুষ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় পরীক্ষার জন্য হাঁসফাঁস করছেন। এটি মহামারী পরিস্থিতি উন্নয়নে যে সহায়ক হবে না, তা বলাই বাহুল্য।

আমরা মনে করি, এ পর্যায়ে এসে উপসর্গ দেখা গেলেই পরীক্ষা করা দরকার। এ জন্য কেন্দ্রীয় পুল তৈরি করে রোগীদের পাঠিয়ে দেয়া দরকার সক্ষম ল্যাবগুলোয়। তারাই নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করে রিপোর্ট পাঠিয়ে দেবে আইইডিসিআরে।

সংস্থাটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণকারী হিসেবে সব তথ্য সংগ্রহ করবে ও ব্রিফিং দেবে। এভাবে না হলে অনেক মানুষকে করোনার উপসর্গ নিয়ে পরীক্ষা ছাড়াই মারা যেতে হবে অথবা জ্বর, সর্দি, কাশির চিকিৎসায় সন্তুষ্ট থেকে খারাপ পরিস্থিতির দিকে যেতে হবে।

দুর্ভাগ্যের বিষয়, উন্নত বিশ্বে যেখানে স্বাস্থ্যকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করছে করোনাভাইরাসে কেউ আক্রান্ত কিনা নিশ্চিত হওয়ার জন্য; আমাদের এখানে মানুষ উপসর্গ নিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষা করেও পরীক্ষা করাতে পারছেন না।

এটি আর যাই হোক, মহামারী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য ইতিবাচক হতে পারে না। করোনার উপসর্গ থাকা মাত্রই পরীক্ষার আওতায় আনা নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য মানসম্মত ল্যাবগুলো কাজে লাগানোর পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি বড় হাসপাতালগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।

ঢাকায় বিস্তৃত করার পাশাপাশি সব বিভাগীয় শহরে একাধিক ল্যাব স্থাপন ও করোনাভাইরাস পরীক্ষার উদ্যোগ নিতে হবে। নিজেদের কর্তৃত্ব ধরে রাখার চেয়ে সুসমন্বয় করে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার মধ্যেই প্রকৃত লিডারশিপ ও সফলতা নিহিত- এটি বুঝতে হবে এবং সে মোতাবেক পদক্ষেপ নিতে হবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন