সাহায্য করছি কিন্তু লাইভ করছি না : বাপ্পি চৌধুরী

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের এ সময়ে ঢাকাই ছবির তারকাদের মধ্যে সম্মিলিত কোন উদ্যোগ চোখে পড়েনি। তবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি ২১ মার্চ এফডিসির প্রধান গেটে শ’ খানেক পিস মাস্ক বিলি করতে দেখা গেছে। সমিতির আওতায় পরে অসচ্ছল শিল্পীদের খাবার সরবরাহ করতে দেখা গেলেও সেটা কেবল নায়িকা মিষ্টি জান্নাত এবং নায়ক অনন্ত জলিলের সহায়তায়। শিল্পী সমিতির দায়িত্বটা কেবল পৌছে দেয়ার ছিলো।

সম্মিলিত কোন উদ্যোগ না দেখা গেলেও অনেক নায়ক নায়িকাই ব্যক্তিগতভাবে সাধারণ মানুষের সাহায্য করে যাচ্ছেন। চিত্রনায়ক বাপ্পি চৌধুরী তাদের একজন। তবে সেটা অনেকটা প্রচারণার বাইরে থেকেই। প্রায় ১২ দিন ধরে এ নায়ক হোম কোয়ারেন্টাইনে দিনযাপন করছেন। বই পড়ে, সিনেমা দেখে এবং পরবর্তী কাজের পরিকল্পনা করেই করোনা পরিস্থিতিতে বাসায় কাটছে ‘ভলোবাসার রঙ’ ছবির নায়কের দিনগুলি।

মঙ্গলবার দেশের একজন জনপ্রিয় নায়ক হয়ে দেশের মানুষের জন্য কী করছেন? এমন প্রশ্ন নিয়েই কথা শুরু হয় তার সঙ্গে। প্রশ্নের উত্তরে বাপ্পি বলেন, করোনা নিয়ে এই ক্রাইসিস সময়ে অনেকেই তো অসচ্ছল মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। যারা দাঁড়াচ্ছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা থাকলো। সাহায্যের বিষয়টা আমি আমার মতো করে করছি। সাহায্যের বিষয়টা কি জনে জনে বলে করতে হবে?

কথার শেষ প্রশ্ন ছুড়ে দেয়া বাপ্পি চৌধুরীর করোনা কারণে অনেক কিছুই পিছিয়ে গেছে। শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২ ছবিটির মুক্তি পিছিয়ে, নতুন ছবির শুটিং পিছিয়েছে, আরেকটি ছবির জন্য মারপিট শিখতে থাইল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিলো। সেটাও হয়নি। বাপ্পির রাখা প্রশ্নের জের ধরেই জানতে চাওয়া হয় তাহলে যারা অসচ্ছল মানুষকে প্রকাশ্যে সহায়তা করছেন তারা কি ঠিক করছেন না? সহজ করে উত্তর দেন বাপ্পি। বলেন, আরে আমি তো আমারটা বলেছি। যারা প্রকাশ্যে ও ফেসবুক লাইভে এসে সাহায্য করছেন দেখাচ্ছেন তারা তো খারাপ কিছু করছেন না। তারা তাদের ভালো কাজটিই প্রমোট করছেন। এতে করে অন্য আরেক জন ভালো কাজের প্রতি উৎসাহিত হচ্ছেন। ভালো কাজ প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে দুইভাবেই তো করা যায়। তবে যে যেভাবেই করুক না কেনো কিছু মানুষ তো সহযোগিতা পাচ্ছেন। এটাই বড় কথা।

পাশাপাশি আরও একটি কথা বলেন বাপ্পি। এই সময়ে সাহায্যের বিষয়টা সতর্ক হয়ে করা উচিত। কারণ ত্রাণ, সাহায্য আর জনগনকে সতর্ক করার জন্য বেরিয়ে পড়াদের মাধ্যমে আমাদের বিপদ আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সবাই একটা করে মাস্ক পরে ঝাপিয়ে পড়ছে ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রমে। তাদের নেই কোনও সামাজিক দুরত্বের বালাই, এমনকি ত্রান কাজ চালানো মানুষেরাও মানছে না কিছু। সেদিকেও খেয়াল করা দরকার বলে জানালেন এ নায়ক।

বাপ্পি আরেকটা বিষয় জানান, যারা ত্রাণ দেয়ার সময় ফেসবুকে লাইভ করছেন। একটু খেয়াল করবেন। যাদের দিচ্ছেন তারা কিন্তু অনেকেই দিনমজুর। মানে ভিখারি নন। তারাও চান না তাদের ত্রাণ নেয়ার দৃশ্যটি ফোকাস হোক। তাদের পরিবারের কেউ জেনে যাক সেটা ত্রাণের খাবার। এতে সেও পরিবারের কাছে কিছুটুা লজ্জায় পড়ে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বাপ্পি চৌধুরীর ‘টিম বাপ্পি; ও পাপ্পি চৌধুরী ফ্যান ক্লাব নামে কয়েকটি গ্রুপ রয়েছে। সেই গ্রুপের কয়েকজন সদস্যদের দিয়েই সাহায্য করেছেন বাপ্পি। তার সহযোগিতায় যাত্রাবাড়ির বেশ কিছু পরিবার মাসের খাবার পেয়েছেন। ফেনীতে কিছু মানুষের জন্য পাঠিয়েছেন নগদ অর্থ। এ ছাড়াও দীর্ঘদিন ধরে ফেনীর একটি স্কুলে সহযোগিতা করে আসছেন বাপ্পি। করোনা পরিস্থিতে সে স্কুল বন্ধ হলেও সেখানকার অনেককে নগদ অর্থ পাঠানো হয়েছে বলে কথায় কথায় জানান ঢাকাই ছবির এ নায়ক।। তবে সাহায্যের বিষয়টি অনেকেটা গোপনেই করছেন। প্রকাশ্যে বা লাইভ করে করার কিছু নেই বলেই মন্তব্য তার।

বাপ্পি চৌধুরী বলেন, ‘করোনাভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত সবাই। দেশে ক্রমেই বাড়ছে এ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। গৃহবন্দি হয়ে আছি আমি। বাসার বাইরে কোন কারণেই যাওয়া হচ্ছেনা। যা সাহায্য করার প্রয়োজন বাসায় বসেই করছি। আগামীতে করোনা আতঙ্ক যে কয়দিন থাকে ততদিন বাসার বাইরে বের হওয়ার ইচ্ছে নেই আমার। তবে সাহায্যের কাজ চালিয়ে যাবো।’

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন