খুলনা অঞ্চলের আয় বেড়েছে কোটি টাকার বেশি

নভেল করোনাভাইরাস মহামারীর ফলে বাংলাদেশসহ বৈশ্বিক রফতানিতে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। তবে করোনা পরিস্থিতিতে রফতানি মন্দাভাব থাকা সত্ত্বেও খুলনা অঞ্চলে গেল ২০১৯-২০ অর্থবছরে চিংড়ি রফতানি থেকে আগের বছরের তুলনায় আয় বেড়েছে। বিশেষ করে করোনা মহামারী ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ার আগেই গত ফেব্রুয়ারিতে খুলনা অঞ্চল থেকে চিংড়ি রফতানি আগের বছরের রফতানিকে ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়।

খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে ২৯ হাজার ৫৪০ দশমিক ৯৬৭ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছে, যা থেকে আয় আয় হয়েছে ২ হাজার ৩৫৯ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। যেখানে এর আগের অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রফতানি হয়েছিল ২৯ হাজার ৬ দশমিক ৮২১ টন চিংড়ি। আর এ সময় আয় হয় ২ হাজার ২৯০ কোটি ২০ লাখ টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থবছরে রফতানি আয় বেশি হয়েছে ৬৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা।

খুলনা অঞ্চলের মৎস্য কর্মকর্তারাসহ খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনার আগেই যে গতিতে চিংড়ি রফতানি হচ্ছিল তাতে গত বছরের চেয়ে অনেক বেশি রফতানি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কারণ অর্থবছরের কয়েক মাস বাকি থাকতেই ফেব্রুয়ারিতে খুলনা অঞ্চল থেকে চিংড়ি রফতানি আগের বছরের রেকর্ডকে ছাড়িয়ে যায়। এরপর আরো এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ ছিল। কিন্তু করোনার কারণে এগিয়ে যাওয়ার মাত্রাটা বেশি এগোতে পারেনি।

অন্যদিকে করোনা মহামারীর কারণে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরের শুরুটা খুব একটা ভালো হয়নি। খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ পরিদর্শক তৌফিক মাহমুদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাইয়ে এ অঞ্চল থেকে ২ হাজার ৯০৫ দশমিক ১৯৬ টন চিংড়ি রফতানি হয়েছে, যা থেকে আয় হয়েছে ২০১ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। যেখানে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জুলাইয়ে রফতানি হয়েছিল ৩ হাজার ৯৯ টন চিংড়ি। আর রফতানি আয় ছিল ২৪৫ কোটি টাকা। সেই হিসাবে করোনার প্রভাবে চলতি বছরের জুলাইয়ে চিংড়ি রফতানি থেকে আয় কমেছে প্রায় ৪৩ কোটি টাকার।

মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিস সূত্রে আরো জানা গেছে, খুলনা অঞ্চল থেকে ২০১১-১২ অর্থবছরে ৪২ হাজার ৪৮৯ দশমিক ১০৩ টন চিংড়ি রফতানি হয়, যা থেকে আয় হয় ২ হাজার ৫৩৩ কোটি ৪ লাখ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে রফতানি হয় ৩৮ হাজার ৫৫১ দশমিক ৫৩ টন চিংড়ি। আর রফতানি আয় ছিল ২ হাজার ২৪৩ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে রফতানি ছিল ৩২ হাজার ৮০২ দশমিক ৮১ টন। আর রফতানি আয় ছিল ২ হাজার ৭০০ কোটি ২২ লাখ টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৮৬ দশমিক ৭৪ টন চিংড়ি রফতানি রফতানি হয়, যা থেকে আয় হয় ২ হাজার ৫৪২ কোটি ৮৯ লাখ টাকা, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৩১ হাজার ৬৮৬ দশমিক ৭৪ টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয় ২ হাজার ৫৪২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩০ হাজার ২১৭ দশমিক শূন্য ৭ টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয় ২ হাজার ৫৮৮ কোটি ২৪ লাখ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ২৯ হাজার ২০০ দশমিক ৭৮৮ টন চিংড়ি রফতানি থেকে আয় হয় ২ হাজার ৪৮৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

সার্বিক বিষয় সম্পর্কে খুলনা অঞ্চলের মৎস্য পরিদর্শন ও মান নিয়ন্ত্রণ অফিসের উপপরিচালক মোহাম্মাদ মিজানুর রহমান বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে খুলনা অঞ্চল থেকে যে পরিমাণ রফতানি হয়েছিল সেটি গেল অর্থবছরের ফেব্রুয়ারিতেই আমরা অতিক্রম করতে সম্পন্ন হই। এর পরের মাসগুলোয় আমরা আরো বেশি রফতানির আশা করেছিলাম। কিন্তু করোনা মহামারীর কারণে রফতানিতে হঠাৎ করে ধস শুরু হয়। এর পরের কয়েক মাস রফতানি তেমন হয়নি বললেই চলে। তবে জুলাইয়ে রফতানি কিছুটা হলেও সেটি গত অর্থবছরের রফতানির তুলনায় কম। তবে করোনা পরিস্থিতি উন্নতি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চলতি অর্থবছরের বাকি মাসগুলোয় রফতানি বৃদ্ধি পেতে পারে বলে মনে করেন এ কর্মকর্তা।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন