সাবরিনার রাত কাটে যেভাবে হাজতে

কোভিড-১৯ মহামারীর টেস্ট নিয়ে প্রতারণার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া জেকেজি হাসপাতালের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী নির্ঘম রাত কাটিয়েছেন। হাজতে সারারাত জেগে ছিলেন তিনি। মাজেমধ্যে পায়চারি করেছেন। কথা বলেছেন নারী প্রহরীর সঙ্গে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তেজগাঁও থানার এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, থানায় নেয়ার পর সাবরিনাকে কিছুক্ষণ একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়েছিল। এর পর তাকে হাজতে রাখা হয়। রাতে থানা হাজতেই কাটে তার সময়। আমাদের দুজন নারী প্রহরী সেখানে ডিউটিতে ছিলেন। তাদের সঙ্গে মাঝে মাঝে কথা বলেছেন। সোমবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে তাকে পুলিশ পাহারায় আদালতে নেয়া। সেখানে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চার দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। এই চিকিৎসকের আইনজীবীরা তার জামিন চান। আদালত জামিন আবেদন খারিজ করে তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

রোববার দিনভর আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ডা. সাবরিনা। তিনি গ্রেফতার এড়াতে ফন্দি আটছিলেন। তবে দুপুরে ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতারের পর তার সব প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে সাবরিনাকে তেজগাঁও থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর তাকে প্রথমে একজন পুলিশ কর্মকর্তার কক্ষে বসানো হয়। এর পর হাজতে রাখা হয়। থানায় সাবরিনার স্বজন ও একজন গৃহকর্মী ছিলেন। থানা থেকে সরবরাহ খাবারই রাতে খেয়েছেন তিনি। হাজতখানায় তাকে পায়চারি করতে দেখেছেন পুলিশ কর্মকর্তারা।

জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের রেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করে আসা ডা. সাবরিনা জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীর স্ত্রী। সে কারণে সাবরিনা আরিফ চৌধুরী নামেই তিনি পরিচিত। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান ওভার গ্রুপ লিমিটেডের চেয়ারম্যান ডা. সাবরিনা এ চৌধুরী। আরিফসহ ছয়জন গ্রেফতার হওয়ার পর তাদের জিজ্ঞাসাবাদে জেকেজির প্রতারণার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান সাবরিনার নামও উঠে আসে। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় ডাকা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়।

স্বামী আরিফুল হক চৌধুরীকে যে মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে, ডা. সাবরিনাকেও সেই একই মামলার আসামি করার প্রক্রিয়া চলছে। এদিকে ডা. সাবরিনাকে গ্রেফতারের পর রোববার বিকালে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এক অফিস আদেশে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিব মো. আবদুল মান্নান স্বাক্ষরিত ওই আদেশে বলা হয়, ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইন সরকারি চাকরিতে কর্মরত থাকাবস্থায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান জেকেজির চেয়ারম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলেন। করোনা টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট দেয়া ও অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন তিনি। এ কারণে তাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

সরকারি কর্মকর্তা হয়ে সরকারের অনুমতি ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদে থাকা ও অর্থ আত্মসাৎ সরকারি কর্মচারী বিধিমালা অনুযায়ী শাস্তিযোগ্য অপরাধ। সাবরিনার ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে। জানা যায়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় করোনার নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষা না করেই জেকেজি প্রতিষ্ঠানটি ১৫ হাজার ৪৬০ টেস্টের ভুয়া রিপোর্ট সরবরাহ করে। পুলিশ জানিয়েছে, জেকেজি হেলথকেয়ার থেকে ২৭ হাজার রোগীকে করোনার টেস্টের রিপোর্ট দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে ১১ হাজার ৫৪০ জনের করোনার নমুনার আইইডিসিআরের মাধ্যমে সঠিক পরীক্ষা করানো হয়েছিল। বাকি ১৫ হাজার ৪৬০ রিপোর্ট প্রতিষ্ঠানটির ল্যাপটপে তৈরি করা হয়। জব্দ করা ল্যাপটপে এর প্রমাণ মিলেছে। আরিফ চৌধুরীকে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে জানান, জেকেজির ৭-৮ কর্মী ভুয়া রিপোর্ট তৈরি করেন। জেকেজির মাঠকর্মীরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে করোনা উপসর্গ দেখা দেয়া মানুষের নমুনা সংগ্রহ করতেন। প্রতি রিপোর্টে ৫-১০ হাজার টাকা নেয়া হতো। আর বিদেশিদের কাছ থেকে নেন ১০০ ডলার। সেই হিসাবে করোনা পরীক্ষার ভুয়া রিপোর্টে প্রায় ৮ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে জেকেজি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন