আফগানিস্তানে যা চায় চীন ও ইরান

আফগানিস্তানে নিজেদের ক্রমবর্ধমান ভূমিকা সুদৃঢ় করার জন্য দেশটির প্রধান প্রতিবেশী ইরানের সঙ্গে একটি সাধারণ অবস্থান তৈরি করতে চাইছে চীন। এছাড়া চীন চায় তালেবনারা এবার সব ধরণের সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিষ্কারভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করে একটি ‘উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক’ সরকার গঠন করুক। চীন ইতোমধ্যেই তার ‘সব পরিস্থিতির বন্ধু’ পাকিস্তান এবং রাশিয়াকে নিয়ে তাদের বিবর্তিত আফগান নীতির সমন্বয় করছে।

পাকিস্তান ও রাশিয়ার সঙ্গে কাবুলে নিজেদের দূতাবাস খোলা রেখে চীন তালেবানদেরকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য তাদের সরকার গঠনের অপেক্ষায় রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং অন্যান্য পশ্চিমা দেশগুলির তালেবানকে স্বীকৃতি না দেওয়ার দৃঢ় ইঙ্গিতর মধ্যেই চীন এই অবস্থান নিয়েছে। শনিবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই তার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেন আমির-আবদুল্লাহিয়ান এর সঙ্গে এই বিষয়ে টেলিফোনে আলাপ করেন।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ধকল থেকে বাঁচতে ইরান সম্প্রতি চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করেছে। চীনও ক্রমাগতভাবে তেল সমৃদ্ধ দেশ ইরানে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আমির-আবদুল্লাহিয়ানের সাথে আলোচনায় ওয়াং ই বলেন, চীন লক্ষ্য করছে যে তালেবানরা আগামী কয়েকদিনে নতুন সরকার গঠনের ঘোষণা দিতে পারে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ওয়াং ই আশা প্রকাশ করেছেন যে, ‘নতুন সরকার উদার ও অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর সঙ্গে পরিষ্কারভাবে সম্পর্ক ছিন্ন করবে এবং অন্যান্য দেশ, বিশেষ করে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন ও উন্নয়ন করবে’।

তিনি বলেন, ‘আফগানিস্তানের সাধারণ প্রতিবেশী হিসেবে চীন ও ইরানকে নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করতে হবে যাতে তারা আফগানিস্তানে ক্ষমতার পালাবদল এবং শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনে একটি গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে পারে’। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে কটাক্ষ করে ওয়াং বলেছেন, ‘আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের ফলে তারা এখন চীন ও রাশিয়ার ওপর মনোযোগ দিতে পারবে বলে যে দাবি করেছে যুক্তরাষ্ট্র তা কেবল নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করার জন্যই বলছে দেশটি। এছাড়া বিশ্বকে ক্ষমতার রাজনীতির লড়াইয়ে ঠেলে দেওয়ার যে প্রবণতা রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের, এই দাবি তারও প্রমাণ’।

ওয়াং সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি যথাযথ শিক্ষা নিতে না পারে, তবে তারা আফগানিস্তানের ভুলের চেয়েও সামনে আরও বড় ভুল করবে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয় যে আমির-আবদুল্লাহিয়ান বলেছেন, ‘আফগানিস্তানে বিশৃঙ্খলার মূল কারণ হলো যুক্তরাষ্ট্রের দায়িত্বহীনতা। এ ছাড়া ইরান মনে করে যে তালেবানদের উচিত একটি বিস্তৃত এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করা, যার মাধ্যমে দেশের সকল জাতিগোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষা হবে’।

তিনি বলেন, ‘ইরান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখা এবং আফগানিস্তানে যে কোনো ধরণের অস্থিরতার প্রতিরোধেরও আহবান জানায়। যাতে দেশটি থেকে আর কোনো মানুষকে অন্য দেশে শরণার্থী হতে না হয়। আর ইরান আফগানিস্তানকে দ্রুত সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করতে চীনের সঙ্গে সমন্বয় জোরদার করতেও প্রস্তুত রয়েছে’। তালেবানরা ক্ষমতা দখল করার পর থেকে চীন পূর্ব তুর্কিস্তান ইসলামিক মুভমেন্টের (ইটিআইএম) উইগুর জঙ্গিদের নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে, যারা জিনজিয়াংয়ের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে।

গত জুলাই মাসে চীন সফরকালে বেইজিং মোল্লা আবদুল গনি বারাদারের নেতৃত্বাধীন তালেবান প্রতিনিধি দলের কাছ থেকে দৃঢ় প্রতিশ্রুতি নিয়েছে যে, তারা ইটিআইএমকে আফগানিস্তানের ভুমি ব্যবহার করে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাতে দেবে না। একই সময়ে চীন, আফগানিস্তানের খনিজ সম্পদ কাজে লাগানোর পাশাপাশি দেশটিতে তার ৬০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর সম্প্রসারণের দিকেও নজর দিচ্ছে।

তালেবানরা ইতিমধ্যেই বলেছে যে, যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ পুনর্গঠনে আফগানিস্তানে চীনকে বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। তালেবান মুখপাত্র সুহেল শাহীন চীনের রাষ্ট্রায়ত্ত চ্যানেল চায়না গ্লোবাল টেলিভিশন নেটওয়ার্ককে সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘চীন একটি বিশাল দেশ যার বিশাল অর্থনীতি এবং ক্ষমতা রয়েছে। আফগানিস্তানের পুনর্গঠন, পুনর্নির্মাণে তারা বড় ভূমিকা রাখতে পারে’। ‘গত কয়েক বছর ধরে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক রয়েছে। আমরা তাদের বলেছি আফগানিস্তানের দিক থেকে কোনো বিপদ নিয়ে তাদের নূন্যতম উদ্বেগও থাকা উচিত নয়’।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন