ঘাটের ব্রিজ এবং নির্মাতা অসহায় আবুল কাশেমের জীবন সংগ্রাম

ময়মনসিংহ জেলার তারাকান্দা উপজেলার গালাগাঁও ইউনিয়নের ছোট্ট একটি গ্রাম কালনীকান্দা। সেই গ্রামের পাশ দিয়ে বযে গেছে  কালীয়ান নামে একটি নদী। এই নদীর অপর পাশে আরেকটি ছোট্ট গ্রাম ঘোষপাড়া। আর ঘোষপাড়া গ্রামের পাশের রয়েছে চাড়িয়া বাজার নামে একটি বড় বাজার যেখানে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ আসে বাজার করতে।

শতশত মানুষ এই নদী পার হয়ে চাড়িয়া বাজারে আসতে হয় বাজার করতে। কিন্তু এই নদী পার হতে হতো জীবনের ঝুকি নিয়ে। আর নদী পার হওয়ার বাহন ছিল কলা গাছের ভেলা কিংবা ছোট্ট ডিঙি নৌকা যেখানে প্রতিদিনই ছিল জীবনের ঝুকি।

কোন যানবাহন চলাচল করতে পারতো না। জনগনের এই দুর্দশা দেখে নিজের মনকে স্থির রাখতে পারেন নি কালনীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা জনাব  আবুল কাশেম। অনেকে কাশেম পাগলা বলেই চিনে। তিনি কোন সম্পদশালী লোক না। বলতে তিনি একজন গরিব মানুষ যার থাকার মত শুধু এক টুকরো জায়গা আছে। তিনি চিন্তা করলেন এই কালীয়ান নদীর উপর একটি বাশের ব্রিজ তৈরি করবেন। কিন্তু ব্রিজ করতে তো অনেক টাকা লাগবে।

এত টাকা তো তার কাছে নেই। তখন সে এলাকার চেয়ারম্যান, মেম্বার ও বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চাইলেন এবং আশ্বাস দিলেন যে সহযোগিতা করবেন।  এই আশায় বুক বেধে অসহায় আবুল কাশেম চল্লিশ হাজার ধার দেনা করে ব্রিজের কাজ সম্পূর্ন করেন। কিন্তু পরবর্তীতে আর কেউ তাকে সহযোগিতা করে নাই।

আবুল কাশেম এই ব্রিজটি তৈরি করেছিল আটাশ বছর আগে। ব্রিজটির দৈর্ঘ্য ২৫০ ফুট।  ঐ সময় গালাগাঁও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন গিয়াস উদ্দিন সরকার এবং রামপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন আব্দুল কাদির আকন্দ। এই ব্রিজ করার সময় আবুল কাশেমের ভাষ্যমতে সাবেক চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন সরকার বলেছিলেন আট টন গম দিবেন আর কাদির চেয়ারম্যান বলেছিলেন পঁচিশ হাজার টাকা দিবেন এবং কালনীকান্দা গ্রামের একজন শিক্ষক বলেছিলেন যে চার টন গম দিবেন। কিন্তু কেউ আর সহযোগিতার হাত বাড়ায় নি।

আবুল কাশেম বলেন কারো প্রতি  আমার কোন কষ্ট নেই। এই ব্রিজের উপর নির্ভর করেই কোন ভাবে খেয়ে না খেয়ে দিন পার করে। ধান কাটার সিজন শেষে আশে পাশের গ্রাম গুলো থেকে কিছু ধান সংগ্রহ করে এবং এই ধান বিত্রির টাকা দিয়ে ব্রিজটি সংস্কার করেন। আর বাকি যা থাকে তা দিয়ে কোন ভাবে সংসার চলে। বর্তমানে তিনি ব্রিজের পাশে ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করে সেখানেই থাকেন। আবুল কাশেমের এখন বার্ধক্য এসে গেছে। কাজ করার মত তেমন শক্তি আর নেই। তাই তিনি সরকার ও দেশের বিত্তবানদের কাছে আর্থিক সহযোগিতা চান যাতে তিনি পরিবার নিয়ে কোন ভাবে চলতে পারেন। আবুল কাশেম আরো বলেন ব্রিজটি যদি পাকা করে দিতেন তাহলে এলাকার জনগন নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারত। এলাকাবাসীর ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দীর্ঘদিনের দাবি এই ব্রিজটি পাকাকরন হউক।

বার্তা প্রেরক,
মোঃ রফিকুল ইসলাম
তারাকান্দা,ময়মনসিংহ, প্রতিনিধি

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন