দেশের ক্ষুদ্রতম জেলার একটি ঝালকাঠি, শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যান্য জেলার থেকে বেশ এগিয়ে থাকলেও করোনার কারনে সৃষ্ট অর্থনৈতিক বিপর্যয়ে পরেছে এই জেলার লোকজন । এই জেলার অর্থনীতি মূলত কৃষি ও মৎস্য নির্ভর। এ জেলার অনেকেই যারা ঢাকায় চাকরি করতেন কিন্তু এখন বাড়িতে এসে বেকার সময় পার করছেন তাদের অনেকেই মৌসুমি পেশায় কাজ করছেন।
ঝালকাঠির কাঁঠালিয়া থানার মুন্সিরাবাদ গ্রামের পিযুষ হাওলাদার, ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বিষয়ে পড়াশোনা শেষ করে একটি বায়িং হাউজে কর্মরত ছিলেন, করোনার কারোনে ছুটি পেয়ে বাড়িতে আসেন।বেতন টাকা না পওয়ায় বাড়িতে এসে তাকে চরম বিপাকে পরতে হয়। এই সময় তিনি বাগান থেকে বাঁশ কেটে চাই ( মাছ ধরার এক প্রকার ফাঁদ) বানাতে শুরু করেন।
এই সময় এই এলাকাতে চাই দিয়ে প্রচুর পরিমাণে মাছ ধরা হয়। মৌসুমের এই সময়টাতে এই এলাকায় চাই এর ব্যাপক চাহিদা থাকাতে অলস সময় না কাটিয়ে তিনি বিকল্প মাধ্যমে আয় করছেন। বর্তমানে এক কুড়ি চাই এর বাজার দর ৩০০০ টাকা থেকে ৩৫০০ টাকা পর্যন্ত।
মনতোষ হালদার, ঢাকার একটি সিনেমা হলে ইলেক্ট্রনিকস্ অপারেটর হিসেবে কর্মরত ছিলেন।লগডাউন শুরু হওয়ার বেশ আগেই তার হল বন্ধ করে দেয়া হয়। তাছাড়া লগডাউন শেষ হওয়ার পর পরই যে সিনেমা হল চালু হবে, তা নিয়েও আছে অনিশ্চিয়তা। বাড়িতে এসে তিনি চরম অর্থ সংকটে পরেন। তাই তিনি স্থানীয় বাজার থেকে কিছু চড় গড়ার জাল কিনে বাড়ির পাশে খালে মাছ ধরেন তিনি। প্রতিদিন প্রায় ৩০০- ৪০০ টাকার মাছ স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেন বলে তিনি জানান ।
নয়ন নামের একজন ঢাকার একটি আইটি ট্রেনিং সেন্টারে প্রশিক্ষণ নিচ্ছিলেন, করোনায় ট্রেনিং বন্ধ থাকায় গ্রামে এসে মাটি কাটা শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন। এই কাজে তিনি প্রতিদিন ৭০০ টাকা আয় করেন।
রতন নামের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার যিনি বর্তমানে বাসায় বসে তার সমস্ত দাপ্তরিক কাজ করছেন, এবং বাড়ির বাগানে কিছু ফলের গাছ লাগিয়েছেন। তিনি জানান বাসায় বসে অফিসের সমস্ত কাজই তিনি সুন্দর ভাবে করতে পারছেন।
বানাই গ্রামের সজল ও সবুজ নামের দুই ভাই করোনার ছুটিতে বাড়িতে এসে তাদের পুরনো ভাঙা ঘর ভেঙে নতুন একটি ঘর তুলে ফেলেছেন। তারা জানায় নিজেরা এই এক মাস কাজ করায় তাদের প্রায় ৩০০০০ টাকা সাশ্রয় হয়েছে।
এদের প্রত্যেকের কাছে জানতে চেয়েছি, আপনারা যেহেতু ঢাকায় চাকরি করেন, অথচ গ্রামে এসে এই কাজ করার অনুভূতি কেমন? তারা জানান – নিজে কিছু করে আয় করার মাধ্যমে যে ভালো লাগা থাকে তা অন্যের সাহায্য বা সহযোগিতায় পাওয়া যায় না।
বার্তা প্রেরেক:
সমিরন হাওলাদার
ঝালকাঠি প্রতিনিধি