রমজানে ডায়াবেটিস রোগীর খাবার ও জীবনযাত্রা

রোজা রাখতে ডায়াবেটিক রোগীদের সাধারণত কোনো নিষেধ নাই। তারা রোজা রাখলে খুব কমই জটিলতার সম্মুখীন হোন। বেশিরভাগ ডায়াবেটিস রোগীই রোজা রাখতে পারেন। এক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা ও খাবারে কিছুটা পরিবর্তন তাদের সিয়াম সাধনাকে সহজতর করে তোলে। পাশাপাশি এ নিয়ে ডাক্তারের সঙ্গে নিয়মিত পরামর্শ করাও জরুরি।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর ব্যায়াম:

দিনের বেলায় অধিক পরিশ্রম বা ব্যায়াম করা উচিত নয়, এতে হাইপোগ্লাইসেমিয়া ও পানিশূন্যতার ঝুঁকি বাড়ে। ইফতার বা রাতের খাবারের ১ ঘণ্টা পর হাল্কা থেকে মাঝারি মাত্রার ব্যায়াম করা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে তারাবির নামজেও কিছুটা ব্যায়াম হয়ে যায়।

রোজায় ডায়াবেটিস রোগীর খাবার:

ডায়াবেটিসের রোগীরা সাধারণত সারাদিনের খাবার ৫-৬ ভাগে ভাগ করে নির্দিষ্ট সময় পরপর খান। রোজার সময় দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়, এবারের রোজায় এই সময় কাল ১২ ঘণ্টারও অধিক হতে পারে। আবার ডায়াবেটিসের ওষুধের সাথে খাদ্যগ্রহণের একটা সমন্বয় থাকতে হয়, রোজায় এই সমন্বয়ের কাজটা একটু কঠিন হয়ে পড়ে।

ইফতারের সময় অনেকে একটু বেশিই খেয়ে ফেলেন, ফলে রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা ইফতারের পর অনেক বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে। অনেকে আগের রাতে আর কিছুই খান না, এতেও রক্তের গ্লুকোজ উঠানামা করতে পারে।

আর অনেকেই সঠিক খাবার বেছে নিতে ভুল করেন। তাই রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা অন্ততপক্ষে স্বাভাবিকের কাছাকাছি রাখার জন্য সঠিক ডায়েট প্ল্যান জরুরি। রোজার সময় ডায়েট প্ল্যান তৈরির জন্য নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় রাখতে হবে:

১. সারাদিনের মোট ক্যালরি ঠিক থাকবে, রোজার আগে সারাদিনে যত ক্যালরি রোজাতেও তাই খাবেন; তবে খাওয়ার পরিমাণ এবং ধরণ আলাদা।

২. মোট ক্যালরি তিন বেলায় ভাগ করে খাবেন। যেমন: ইফতার, সন্ধ্যা রাত ও সেহরি।

৩. সেহরি শেষ সময়ের অল্প কিছুক্ষণ আগে এবং ইফতার সময় হওয়ার সাথে সাথে খাওয়ার চেষ্টা করবেন।

৪. নিম্ন গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এবং বেশি ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার খাদ্যতালিকায় রাখতে হবে। এগুলো আস্তে আস্তে হজম হয়, ফলে অভুক্ত অবস্থায় দীর্ঘক্ষণ শক্তি দেয়।

৫. ইফতারের সময় অধিক পরিমাণে মিষ্টি ও চর্বি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা উচিত। খেজুর খেতে চাইলে ১-২টা খেতে পারেন। ফলমূল, শাকসব্জি, ডাল ও টকদই খাবার তালিকায় রাখতে পারেন। ইফতারে টাটকা ফলের জুস খাওয়া যেতে পারে, তবে তাতে চিনি যোগ করা যাবে না। ভাজাপোড়া খাবার যেমন: পিঁয়াজু, বেগুনী, পুরি, পরোটা ও কাবাব কম খান। ভাজাপোড়ার ক্ষেত্রে বাইরের খাবার পরিহার করুন, ঘরে তৈরি খাবার খান।

৬. রাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি খান, যাতে পানি শূন্যতায় না ভোগেন। চিনিমুক্ত পানি, ডাবের পানি পান করতে পারেন। যদি মিষ্টি পানীয় পছন্দ করেন তবে সুইটনার—যেমন: জিরোক্যাল, সুইটেক্স বা ক্যান্ডেরাল ব্যবহার করতে পারেন।

৭. চা, কফি, কোলা-ড্রিংক্স না খাওয়াই ভালো, এগুলো প্রস্রাবের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পানিশূন্যতার কারণ হতে পারে।

৮. সেহরিতে পর্যাপ্ত প্রোটিন এবং চর্বিজাতীয় খাবার খান, এগুলো খাওয়ার পরের গ্লুকোজ কম বাড়ায় এবং ক্ষুধা কমায়।
নিচে রোজার সময়ের জন্য খাদ্যতালিকার একটি নমুনা দেওয়া হলো, যা ব্যক্তিবিশেষে আলাদা হতে পারে।

ইফতার: বুট ভুনা: ১/২ কাপ থেকে ১ কাপ; পিঁয়াজু: ২-৩টা; বেগুনী: ২–৩টা; মুড়ি: ২–৩ কাপ; মিষ্টি ফল: যে কোনো একটি; শশা, ক্ষীরা, আমড়া, কচি পেয়ারা, ডাবের পানি, লেবুর পানি (চিনি ছাড়া), জাম্বুরা, বাঙ্গি, জামরুল, আমলকী, কালজাম ও অন্যান্য টক ফল ইচ্ছামত খাওয়া যাবে।

সন্ধ্যা রাত: আটার রুটি (ছোট পাতলা) ২–৩টা অথবা ভাত ২–৩ কাপ; মাছ বা মাংস: ১–২ টুকরা; ডাল (মাঝারি ঘন) ১–২ কাপ অথবা দুধ (সর ছাড়া) ১ কাপ; সবজি: ইচ্ছামতো।

সেহরি: ভাত: ২-৪ কাপ; মাছ বা মাংস: ১–২ টুকরা; ডাল (মাঝারি ঘন) ১–২ কাপ অথবা দুধ (সর ছাড়া) ১ কাপ; সবজি: ইচ্ছামতো।

ডা. এ.বি.এম. কামরুল হাসান

এমডি (এন্ডোক্রাইনোলজি অ্যান্ড মেটাবলিজম)

সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, এন্ডোক্রাইনোলজি বিভাগ,

ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন