কাঁচা আমের গুনাগুন

বাইরে এখন তীব্র রোদের আঁচ। সঙ্গে গা পোড়ানো গরম। এ সময় কাঁচা আমের এক গ্লাস শরবত সারা শরীরে এনে দিতে পারে প্রশান্তি। বাজারে এখন কাঁচা আম পাওয়া যাচ্ছে। দামও নাগালে। কাজেই কাঁচা আমের শরবতে প্রাণটাকে শীতল আর শরীরটাকে চাঙা করার সুযোগ রয়েছে।পুষ্টিবিদেরা বলেন, কাঁচা বা পাকা দুই ধরনের আমই শরীরের জন্য ভালো৷

আম কাঁচা বা পাকা যে অবস্থায়ই থাকুক না কেন, শরীরের জন্য এর কোনো নেতিবাচক দিক নেই বললেই চলে। কাঁচা আম বা আমের রসে পটাশিয়াম থাকায় প্রচণ্ড গরমে তা শরীর ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। কাঁচা আমের গুণ প্রসঙ্গে পুষ্টিবিদেরা বলেন, ১০০ গ্রাম কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকে ৪৪ ক্যালরি। এ ছাড়া ৫৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ও ২৭ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম থাকে। কাঁচা আমের আরও কিছু গুণের কথা জেনে নিন।

ওজন কমাতে পারে কাঁচা আম

যাঁরা ওজন কমাতে বা শরীরের বাড়তি ক্যালরি খরচ করতে চান, তাঁদের জন্য এখন আদর্শ ফল কাঁচা আম। পাকা মিষ্টি আমের চেয়ে কাঁচা আমে চিনি কম থাকে বলে এটি ক্যালরি খরচে সহায়তা করে।

অম্লতা দূর করে
বুক জ্বালাপোড়া বা অম্লতার সমস্যায় ভুগছেন? কাঁচা আম এ সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পারে। অম্লতা কমাতে কাঁচা আমের এক টুকরো মুখে দিতে পারেন।

সকালের বমি ভাব দূর করে
অনেকেরই সকালে উঠে বমি বমি ভাব হয়। বিশেষ করে অন্তঃসত্ত্বা যাঁরা। এ সমস্যা দূর করতে পারে কাঁচা আম।

ঝিমুনি দূর করে
দুপুরে খাওয়ার পর এই গরমে কিছুটা ঝিমুনি ভাব দেখা দিতে পারে। কাঁচা আমে আছে প্রচুর শক্তি। দুপুরের খাওয়ার পরে কয়েক টুকরা কাঁচা আম খেলে ঝিমুনি দূর হয়।

যকৃতের সমস্যা দূর করে
যকৃতের রোগ নিরাময়ের প্রাকৃতিক বন্ধু হতে পারে কাঁচা আম। কয়েক টুকরো কাঁচা আম চিবানো হলে পিত্তরস বৃদ্ধি পায়। এতে যকৃতের স্বাস্থ্য ভালো হয় এবং অন্ত্রের জীবাণু সংক্রমণ দূর হয়।

ঘামাচি প্রতিরোধ করে
গরমের সময় ঘামাচি একটি অস্বস্তিকর ব্যাপার। ঘামাচির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সবচেয়ে ভালো উপায় কাঁচা আম খাওয়া। কাঁচা আমে এমন কিছু উপাদান রয়েছে, যা সানস্ট্রোক হতে বাধা দেয়।

রক্তের সমস্যা দূর করে
কাঁচা আমে আয়রন বা লৌহ থাকায় রক্তস্বল্পতা সমস্যা সমাধানে বেশ উপকারী।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে
খাদ্য হজমে সহায়তা করে কাঁচা আম। অন্ত্রকে পরিষ্কার করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয় কাঁচা আম। টুকরো করে আম কেটে লবণ মাখিয়ে তা মধুসহযোগে খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।

শরীরে লবণের ঘাটতি দূর করে
গরমে অতিরিক্ত ঘামে শরীর থেকে সোডিয়াম ক্লোরাইড ও লৌহ বের হয়ে যায়। কাঁচা আমের জুস শরীরের এই ঘাটতি দূর করে।

ডায়াবেটিস প্রতিরোধে
কাঁচা আম খেলে ডায়াবেটিসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে কাঁচা আম।

স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া রোধ করে
কাঁচা আম শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি জোগাতে পারে। স্কার্ভি ও মাড়ির রক্ত পড়া কমায় কাঁচা আম। আমচুর স্কার্ভি নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী। নিশ্বাসের দুর্গন্ধ ও দাঁতের ক্ষয় রোধেও সহায়তা করে কাঁচা আম।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কাঁচা আম খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে।

শরীর ঠান্ডা থাকে
কাঁচা আমে পটাশিয়াম থাকার কারণে তা শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে৷ এ কারণে শরীরে ঘাম কম হয়। গরমে ক্লান্তিও দূর হয় ৷

চুল ও ত্বক উজ্জ্বল করে
প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে তা চুল ও ত্বককে উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে ৷

হজম ভালো হয়
গ্যালিক অ্যাসিড থাকার কারণে তা হজম-প্রক্রিয়াকে গতিশীল করে৷

সতর্কতা
কথায় আছে, অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো নয়। কাঁচা আম খাওয়ার ক্ষেত্রেও বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে। অতিরিক্ত পরিমাণে কাঁচা আম খেলে ডায়রিয়া হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ কাঁচা আমের কষ মুখে লাগলে ও পেটে গেলে মুখ, গলা ও পেটে সংক্রমণ হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে সাবধান।

তথ্যসূত্র: বারডেম, হেলথ সাইট, টাইমস অব ইন্ডিয়া

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন