রোবট ডাক্তার নামাল ইতালি

করোনাভাইরাস প্রতিরোধযুদ্ধে ডাক্তারদের সহায়তায় এবার রোবট চিকিৎসক নামিয়েছে ইতালি।

নিবিড় পর্যবেক্ষণ ইউনিটে (আইসিইউ) থাকা ভাইরাসে আক্রান্ত আশঙ্কাজনক রোগীর পালস পরীক্ষা করে দেখছে এসব রোবট।

কখনো আবার ওষুধ খাইয়ে দিচ্ছে। ইতালির ভ্যারেসে হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা শুরু করেছে ছয়টি রোবাট।

দেশটিতে আশার আলো দেখাচ্ছে এসব চিকিৎসক রোবট। এর ফলে কোভিড-১৯ রোগীর পাশাপাশি বেঁচে যাচ্ছে চিকিৎসকদের জীবনও। এতে আনন্দ-উচ্ছাস প্রকাশ করছেন ডাক্তার-নার্সরা। মহামারীবিরোধী লড়াইয়ে বিভিন্ন দেশেও শুরু হয়েছে রোবটের ব্যবহার।

ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে আক্রান্ত রোগীদের কাছে খাবার, ওষুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পৌঁছে দিচ্ছে অত্যাধুনিক এ প্রযুক্তি। শুধু চিকিৎসাই নয়, সংক্রমণ প্রতিরোধে লকডাউন কার্যকর করতে পথে পথে টহল দিচ্ছে রোবট।

উত্তর আফ্রিকার দেশ তিউনিশিয়ার রাস্তায় এখন এমন দৃশ্য দেখা যাচ্ছে, যা আগে কখনও দেখা যায়নি। ঘর থেকে কেউ রাস্তায় নামলেই পথ আগলে দাঁড়াচ্ছে রোবটপুলিশ। দরাজ ও কঠিন কণ্ঠে জানতে চাইছে- ‘কোথায় যাচ্ছ, দাঁড়াও। এখানে তুমি কী করছ? তোমার আইডি দেখাও।’

করোনার কারণে ইতালি এখন মৃত্যুপুরী। মহামারীর বিরুদ্ধে লড়তে নানা উপায়-পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটির সরকার। লকডাউন থেকে সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব সবরকম ব্যবস্থাই চলছে অব্যাহতভাবে। সম্পূর্ণ পাল্টে গেছে দেশের চিত্র।

প্রতিদিন মারা যাচ্ছে হাজার মানুষ। কিন্তু ইতালীয়দের জন্য এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেদনার বিষয় হচ্ছে, করোনার রোগীদের বাঁচাতে গিয়ে মারা গেছেন বহু ডাক্তার-নার্স। দেশটির চিকিৎসা সংগঠনগুলোর হিসেবে, শুক্রবার পর্যন্ত অন্তত ৭০ জন নার্স-চিকিৎসক প্রাণ হারিয়েছেন।

রোবটের মতো উন্নত সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকলে তাদের মরতে হতো না। শেষ পর্যন্ত বহুল কাক্সিক্ষত সেই রোবট হাতে পেয়েছেন ইতালির ডাক্তাররা।

সুইজারল্যান্ড সীমান্তবর্তী দেশটির ভ্যারেসে হাসপাতালে ইতোমধ্যে এসে পৌঁছেছে হালকা-পাতলা গড়নের ছয়টি রোবট। এতে হাসি ফুটেছে হাসপাতালটির নার্স ও ডাক্তারদের মুখে।

হাসি দেখা যাচ্ছে রোগীদের ঠোঁটের কোণেও। এতদিনে নিজেদের কয়েকজন প্রকৃত বন্ধুকে কাছে পেয়ে তাদের সঙ্গে সেলফি উঠাতেও ভুলছেন না চিকিৎসকররা।

এদিকে পৌঁছার পরপরই হাসপাতালের পুরো চিকিৎসার দায়িত্বই যেন হাতে তুলে নিয়েছে রোবটগুলো। চাকার ওপর ভর করে পুরো হাসপাতালজুড়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছে তারা।

কখনও আইসিইউতে রোগীর পালস তথা হৃদকম্পন চেক করছে। কখনও থার্মাল মেশিনটা হাতে নিয়ে তাপমাত্রাটা মাপছে।

তবে তাদের আসল দায়িত্বটা হল- সংক্রমণ ঠেকানো ও আক্রান্ত হওয়া থেকে ডাক্তার ও নার্সদের হেফাজত করা। রোবটগুলোর ভূমিকা বর্ণনা করে ভ্যারেসের সারকোলো হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের পরিচালক ফ্রান্সেসকো ডেনটালি বলেন, ‘রোবটগুলো বিরামহীন সহযোগিতা করছে।

তাদের আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। কিন্তু সুরক্ষা ছাড়া ডাক্তার ও নার্সরা আক্রান্ত হতে পারেন। রোবটদের অসুস্থ হওয়ারও ভয় নেই।

এটা একটা বড় পাওয়া।’ করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে অন্যান্য দেশের অনুকরণে গত মাসেই লকডাউন ঘোষণা করে তিউনিশিয়া সরকার।

জনগণ যাতে ঠিকমতো লকডাউন মেনে ঘরে থাকে সজন্য রাজধানীতে মোতায়েন করা হয় রোবটপুলিশ। ‘পিগার্ড’ নামের এই রোবটে ইনফ্রেয়ার্ড ও থার্মাল ইমেজিং ক্যামেরা এবং সাউন্ড ও লাইট অ্যালার্ম সিস্টেম বসানো আছে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন