বৃহস্পতিবার (১৩ অক্টোবর) সকালে সাভার সেনানিবাসে ৬টি ইউনিটের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কারো সঙ্গে যুদ্ধ করব না, আমরা যুদ্ধ করতে চাই না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি জাতির পিতা দিয়ে গেছেন। আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়–এটাই আমরা বিশ্বাস করি।’
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী এখন আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও তাদের ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি চাই আমাদের সেনাবাহিনী কখনো কোনো দিক থেকে পেছনে থাকবে না। যত রকম আধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জামাদি আছে, তার সঙ্গে পরিচিত যাতে হয় এবং সেগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সমানভাবে চলতে পারে, সেভাবে আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে গড়ে তুলতে চাই।’ যেকোনো পতাকা প্রাপ্তি সম্মানের ব্যাপার উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, পতাকার মর্যাদা সমুন্নত রাখতে হবে। পতাকার মর্যাদা রক্ষা করা ও সেই সঙ্গে দেশের মর্যাদা রক্ষা প্রতিটি সৈনিকের দায়িত্ব।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের দেশের সেনাবাহিনীর পদাতিক ব্রিগেড এবং উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পদাতিক ব্যাটালিয়নকে মেকানাইজড হিসেবে রূপান্তরিত করা হয়েছে। আমরা চাই আমাদের দেশ এগিয়ে যাবে। জাতীয় নিরাপত্তাঝুঁকি মোকাবিলায় এই মেকানাইজড ইউনিটগুলোর সংযোজনে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো, যা আমাদের দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের যেকোনো দুর্যোগ-দুর্বিপাকে সেনাবাহিনী সবসময় পাশে থাকে। কিছুদিন আগে সিলেট এবং নেত্রকোনায় যে বন্যা দেখা দিল, এমন এমন দুর্গম জায়গায় বন্যা দেখা দিল যেখানে পৌঁছানো যাচ্ছিল না। সেখানে আমাদের সেনাবাহিনী বিশেষ ভূমিকা রেখে যারা আটকা পড়েছিল তাদের উদ্ধার করে খাদ্যের ব্যবস্থা, পানির ব্যবস্থা, চিকিৎসার ব্যবস্থা এবং ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তাঘাট, ঘরবাড়ি মেরামত করেছে। সে জন্য আমি সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানাই।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশ দুর্যোগপ্রবণ দেশ; কিন্তু যেকোনো দুর্যোগে মানুষকে রক্ষা করা এবং দুর্যোগ মোকাবিলা করতেও বাংলাদেশ সিদ্ধহস্ত এবং বাংলাদেশ তা পারে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন এবং যে পদক্ষেপগুলো তিনি স্বাধীনতার পর নিয়েছিলেন, সেটাই অনুসরণ করে আজ বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলায় আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনায় সারা বিশ্ব যখন বিপর্যস্ত, বাংলাদেশেরও প্রায় একই অবস্থা ছিল। সে সময়ও আমাদের সশস্ত্র বাহিনী ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলেন, মানুষকে রক্ষা করতে চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে কাফন-দাফন সব ব্যাপারে সহযোগিতা করেছেন। এটা করতে গিয়ে অনেকের জীবন দিতে হয়েছে। আমি তাদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করি।’
তিনি বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, বাংলাদেশের জনগণের কাছে আমি কৃতজ্ঞতা জানাই যে, বারবার আমাকে নির্বাচিত করে জনগণের সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। তাই আজ আর্থসামাজিকভাবে আমরা উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘১৯৯৭ সালে যখন আমি ক্ষমতায়, তখন ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে অনেক মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, ঘরবাড়ি হারিয়েছিল। মানুষকে আমরা উদ্ধার করেছিলাম, কিন্তু তাদের সম্পদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। সে সময় থেকেই আমরা মানুষের জন্য ঘরবাড়ি তৈরি করা শুরু করি, আশ্রয়ণ প্রকল্প-১ করি এবং সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ৭০টা পরিবারকে ঘর করে দিই, যেটা প্রথম নৌবাহিনী করে দিয়েছিল। এরপর সারা বাংলাদেশে এই আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে জাতির পিতা ভূমিহীনদের মাঝে খাসজমি বিতরণ এবং তাদের ঘরবাড়ি তৈরি করে দেয়ার যে কার্যক্রম শুরু করেছিলেন, নোয়াখালী থেকে আমি সেই কাজটাই আশ্রয়ণ প্রকল্পের নামে শুরু করি। এই কাজ সর্বপ্রথম সেনাবাহিনী তৈরি করে দেয়। সমগ্র বাংলাদেশ আশ্রয়ণ প্রকল্পের মাধ্যমে ব্যারাক হাউস তৈরি করে ভূমিহীন-গৃহহীন মানুষের ঘর তৈরি করে তাদের জীবনটাই বদলে দেয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি থাকবে না। যেখানে জমি আছে সেটা চাষ করতে হবে, ফসল উৎপাদন, ফলমূল, তরিতরকারি করতে হবে। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কারণে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে বাংলাদেশেও একই অবস্থা। আমরা সেটা নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো বলছে, ২০২৩ সালে সারা বিশ্বে দুর্ভিক্ষ হবে; কিন্তু বাংলাদেশ যেন এ দুর্ভিক্ষকবলিত না হয়; তাই আমাদের নিজেদের ভূমিতে খাদ্য উৎপাদন, নিজেদের সঞ্চয় এবং কৃচ্ছ্রসাধন করে চলতে হবে।’