বাংলাদেশকে ১ কোটি করোনার টিকা দেবে ইইউ

বাংলাদেশকে ১ কোটি করোনার টিকা দেবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) রাষ্ট্রদূত রেনজি টিরিংক। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য এক কোটি টিকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমরা। তবে আমরা জানি, এটা পর্যাপ্ত নয় এবং আশা করি, আরও বেশি দিতে পারব।

বৃহস্পতিবার কসমস ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্ক: ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে মূল বক্তব্যে ইইউ রাষ্ট্রদূত এ তথ্য জানান। তিনি দরিদ্র দেশগুলোকে সহযোগিতার ক্ষেত্রে ইইউসহ উন্নত দেশের উদ্যোগহীনতার সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে টিকার বিষয়ে নিজেদের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন।

সম্প্রতি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেছিলেন, “উন্নত দেশ যারা, ধনী দেশ যারা, তারা সব টিকা নিয়ে বসে আছে, আর ব্যবহারও করতে পারে না, ফেলে দিচ্ছে। এটা কী ধরনের ইথিক্যাল অ্যান্ড মর‌্যাল ভ্যালুজ?” পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেই বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে টিকা সরবরাহের বৈশ্বিক উদ্যোগ কোভ্যাক্সের কার্যক্রমে ইউরোপীয় দেশগুলোর সহায়তার নানাদিক তুলে ধরেন টিরিংক। তিনি বলেন, আমরা বলতে পারি, বৈশ্বিক করোনাভাইরাস মোকাবিলায় অন্যতম চালিকাশক্তি ইউরোপীয় ইউনিয়ন।

চলতি বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ২০ কোটি ডোজ টিকা সহায়তা দেব আমরা। ইইউ ও এর সদস্য রাষ্ট্রগুলো ইতিমধ্যে মহামারি মোকাবিলায় ১৬ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং উন্নয়নশীল দেশের সহযোগিতায় আমাদের পদক্ষেপকে অবমূল্যায়ন না করুন। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ইউরো দেওয়ার মাধ্যমে কোভ্যাক্স কার্যক্রমে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দাতা ইইউ। পাশাপাশি ১৬ বিলিয়ন ইউরোর প্রতিশ্রুতি তো রয়েছে। করোনাভাইরাসের পরীক্ষা, চিকিৎসা ও বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারে এই অর্থ খরচ হবে।

বক্তৃতায় ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত পরিকল্পনা তুলে ধরে রাষ্ট্রদূত টিরিংক বলেন, বঙ্গোপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের আরও সক্রিয় ভূমিকা আশা করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। শুধু এই অঞ্চল নয়, পুরো ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশের কৌশলগত অংশগ্রহণ বৃদ্ধির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ইইউ এর কার্যক্রম বৃদ্ধি করা সম্ভব। ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলে পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার প্রায় ৬০ ভাগ মানুষের বসবাস, আর এই অঞ্চল থেকেই বৈশ্বিক জিডিপির প্রায় ৬০ শতাংশ আসে।

অর্থাৎ বৈশ্বিক উন্নয়নে এই অঞ্চলের মানুষের অবদান দুই-তৃতীয়াংশ। সে জন্য আমরা সব সময় জোর দিয়ে বলেছি, ভারত ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কৌশল হবে সবার জন্য উন্মুক্ত। আমরা চীনকে সহযোগী হিসাবে বিবেচনা করেছি। পাশাপাশি তারা আমাদের প্রতিযোগী ও ক্ষেত্রবিশেষে প্রতিদ্বন্দ্বী।

সুতরাং আমরা চীনকে বাইরে রাখছি না। এটা চীন ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের চমৎকার ও ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক রাখার মতো। বাংলাদেশের জন্য নতুন জিএসপি নীতিমালা চলতি মাসের ২২ সেপ্টেম্বর গ্রহণ করা হবে বলে অনুষ্ঠানে জানান ইইউ রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, বর্তমান জিএসপি ২০২৩ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হবে।

২২ সেপ্টেম্বর নতুন জিএসপি গ্রহণ করা হবে এবং আপনারা শিগগির খবরে পাবেন। বর্তমান জিএসপিতে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের প্রাধান্য ছিল। নতুন জিএসপিতে এর সঙ্গে ‘পরিবেশ সুরক্ষা ও সুশাসনও’ যুক্ত হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা ইফতেখার আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কসমস ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান এনায়েতুল্লাহ খান।

এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, সিপিডির ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি রুবানা হক, পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান জায়দি সাত্তার এবং কসমস ফাউন্ডেশনের ইমেরিটাস উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত তারিক এ করিম আলোচনায় অংশ নেন।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন