সাত বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে শিশুদের পরীক্ষা নেওয়া নিষিদ্ধ করল চীন

চীনে সাত বছর বয়স পর্যন্ত স্কুলে শিশুদের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। খবর: বিবিসির।অত্যন্ত প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থায় অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের ওপর চাপ কমানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই এই পদক্ষেপ নিয়েছে চীন সরকার। এর আগে চীনের শিশু শিক্ষার্থীদেরকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম বছর থেকে ১৮ বছর বয়সে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ পর্যন্ত পরীক্ষা দিতে হতো।

দেশটির শিক্ষা মন্ত্রণালয় এখন বলছে যে, এতো অল্প বয়সেই পরীক্ষার চাপ শিশু শিক্ষার্থীদের “শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের” ক্ষতি করছে। এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয় বলেছে, “পরীক্ষা স্কুল শিক্ষার একটি প্রয়োজনীয় অংশ। কিন্তু কিছু স্কুলে অতিরিক্ত পরীক্ষা নেওয়ার মতো সমস্যা রয়েছে, যা শিক্ষার্থীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং অবশ্যই এই নিয়মের সংশোধন হওয়া উচিত”। নতুন নিয়মে একটি স্কুল প্রতি মেয়াদে কতগুলি টেস্ট এবং পরীক্ষা নিতে পারবে তার সংখ্যাও সীমাবদ্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণীতে কাগজ-ভিত্তিক পরীক্ষা নেওয়ার প্রয়োজন নেই। অন্যান্য গ্রেডের জন্য স্কুল প্রতি সেমিস্টারে একটি চূড়ান্ত পরীক্ষার আয়োজন করতে পারে। জুনিয়র উচ্চ মাধ্যমিকের (৫ম-৮ম) জন্য মধ্য-মেয়াদে আরেকটি পরীক্ষা নেয়া যেতে পারে। প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সকল শ্রেণীর জন্য স্থানীয়ভাবে আঞ্চলিক বা আন্ত-স্কুল পরীক্ষার আয়োজন করা যাবে না”। “জুনিয়র উচ্চ মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের জন্যও সাপ্তাহিক পরীক্ষা, ইউনিট পরীক্ষা, মাসিক পরীক্ষা ইত্যাদির আয়োজন করার অনুমতি দেওয়া যাবে না”।

চীনের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম উইবোতে এ নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ বলছিলেন যে, এটি শিশুদের উপর চাপ দূর করার জন্য সঠিক একটি পদক্ষেপ। অনেকে অবশ্য প্রশ্ন করছিলেন যে, স্কুলগুলি পরীক্ষা ছাড়াই কীভাবে দক্ষতার পরিমাপ করবে। চীনের শিক্ষা খাতে ব্যাপক সংস্কারের অংশ হিসেবে এই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। গত জুলাই মাসেই দেশটিতে অনলাইনে বিদ্যালয়ের মূল বিষয়গুলি পড়ানোর বিনিময়ে মুনাফা অর্জনকারী প্রাইভেট টিউটরিং এবং কোচিং সেন্টারগুলিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

নতুন নির্দেশিকায় শিক্ষা শিল্পে বিদেশী বিনিয়োগের সুযোগও সীমাবদ্ধ করা হয়েছে এবং প্রাইভেট টিউটরিং নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর আগে দেশটিতে প্রাইভেট টিউটরিং খাতে বছরে ১২০ বিলিয়ন ডলার অর্থের লেনদেন হতো। শিশু লালন-পালনের খরচ কমানোর চেষ্টার অংশ হিসেবেই চীন সরকার এই পদক্ষেপ নিয়েছে। সম্প্রতি চীনে শিশু জন্মহার রেকর্ড পরিমাণে কমে গেছে। শিক্ষাখাতে বৈষম্যও একটি সমস্যা। ধনী বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে শীর্ষ বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে হাজার হাজার টাকা খরচ করছেন। কিন্তু গরীবরা টাকার অভাবে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

শিক্ষার প্রতি চীনাদের আবেগ সম্পত্তির দামকেও প্রভাবিত করে। ধনী বাবা-মায়েরা সন্তানদের বিদ্যালয়ের কাছাকাছি এলাকায় বাড়ি ঘর করার জন্য প্রচুর দাম দিয়ে জমি দখল করেন। এএফপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বছর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য হোমওয়ার্ক নিষিদ্ধ করেছে। আর জুনিয়র উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য রাতের হোমওয়ার্ক ১.৫ ঘণ্টার মধ্যে সীমিত করার আদেশ দিয়েছে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন