আফগানিস্তান থেকে বিদেশি সেনা ৩১ অগাস্টের মধ্যে প্রত্যাহারের যে সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্র সেই সময়সীমার মধ্যেই তাদের উদ্ধার অভিযান শেষ করতে চায়। এই সময়সীমা আরও বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন দেশ যে আহ্বান জানাচ্ছে, তাতে এখনো সাড়া দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র।
পেন্টাগনের কর্মকর্তারা বলছেন, আগের পরিকল্পনায় কোন রদবদলের সময় এখনো আসেনি। কিন্তু আজ (মঙ্গলবার) জি-সেভেন দেশগুলোর যে ভার্চুয়াল শীর্ষ সম্মেলন হওয়ার কথা সেখানে যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স এবং জার্মানি এই সময়সীমা বাড়িয়ে মার্কিন সৈন্যরা যেন আরও কিছুদিন কাবুল বিমানবন্দরে থাকে, সেজন্যে চাপ দেবে।
তবে তালেবান এরই মধ্যে হুঁশিয়ার করে দিয়েছে যে, বিদেশি সৈন্যদের অবস্থানের সময়সীমা বাড়ানো হলে সেটি হবে চুক্তির স্পষ্ট লঙ্ঘন। রয়টার্স বার্তা সংস্থা জানিয়েছে, মার্কিন সৈন্যদের অবস্থানের সময়সীমা বাড়ানো হবে কিনা, আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সে ব্যাপারে প্রেসিডেন্ট বাইডেন সিদ্ধান্ত নেবেন। পেন্টাগনের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, তারা যাতে সময় হাতে রেখে প্রস্তুতি নিতে পারেন, সেভাবেই সিদ্ধান্তটি নেয়া হবে।
কাবুল বিমানবন্দরে এখনো প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ ভিড় করছে, যারা আফগানিস্তান ছাড়ার জন্য মরিয়া।
সরাসরি আলোচনার সম্ভাবনা কতটা? হোয়াইট হাউজের হিসেব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কাবুল থেকে ৪৮ হাজার মানুষকে আকাশপথে উদ্ধারে সহায়তা করেছে। তালেবান বিদ্যুৎ গতিতে আফগানিস্তানের বেশিরভাগ অঞ্চল তাদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যাওয়ার পর এই উদ্ধার অভিযান শুরু হয়।
কেবল আফগানিস্তানের পাঞ্জশির উপত্যকার অঞ্চলটিই এখনো তালেবানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়ে গেছে। সেখানে তালেবান বিরোধী একটি বাহিনী প্রতিরোধ লড়াই চালিয়ে যাওয়ার কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জেক সুলিভ্যান জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র প্রায় প্রতিদিনই তালেবানের সঙ্গে আলোচনা করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং নিরাপত্তা চ্যানেল দিয়ে। কিন্তু এখনো তালেবানের সঙ্গে সরাসরি কোন আলোচনার কথা প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভাবছেন না।
তিনি বলেছেন, যত আমেরিকান আফগানিস্তান ছাড়তে চায় তাদের সবাইকে ৩১ অগাস্টের সময়সীমার মধ্যেই উদ্ধার করে আনা সম্ভব বলে তার বিশ্বাস। তবে মিস্টার বাইডেন প্রতিদিনের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন। কিন্তু যুক্তরাজ্যসহ অনেক দেশই মনে করছে, ৩১ অগাস্টের মধ্যে আসলে উদ্ধার অভিযান শেষ হবে না। স্পেন বলেছে, কাবুলে তাদের মিশনে যারা ছিল, এবং যেসব আফগান তাদের সঙ্গে কাজ করেছে, সবাইকে এই সময়সীমার মধ্যে উদ্ধার করা যাবে না।
দেশটির প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেছেন , তারা যত বেশি মানুষকে সম্ভব উদ্ধার করার চেষ্টা করবেন, কিন্তু তারপরও কিছু মানুষ সেখানে উদ্ধারের অপেক্ষায় থেকে যাবেন। ব্রিটিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী বেন ওয়ালেসও একই ধরনের হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন এর আগে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, মার্কিন সৈন্যদের উপস্থিতি ছাড়া ব্রিটেনের পক্ষে কাবুল বিমানবন্দরে উদ্ধার অভিযান চালানো সম্ভব হবে না। জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলন থেকে যা আশা করা হচ্ছে
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন সহ বিভিন্ন দেশ আজকের জি-সেভেন শীর্ষ সম্মেলনে প্রেসিডেন্ট বাইডেনের ওপর ৩১শে অগাস্টের সময়সীমা বাড়ানোর জন্য চাপ দেবেন বলে মনে করা হচ্ছে। এই সময়সীমা কয়েকদিন বাড়ানো হতে পারে, এমন ইঙ্গিত দেখতে পাচ্ছেন অনেকে। কিন্তু এটা পরিস্কার নয়, প্রেসিডেন্ট বাইডেন এ নিয়ে কোন প্রকাশ্য অঙ্গীকার করবেন কিনা।
জি-সেভেন জোটের দেশগুলো হচ্ছে: যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি এবং জাপান।
আজকের শীর্ষ বৈঠকে মূলত দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য এবং কৌশল নিয়ে কথা হবে। কীভাবে আফগান শরণার্থীদের দীর্ঘমেয়াদে সহায়তা দেয়া যায়, কীভাবে তাদের পুর্নবাসন করা যায়। আফগানিস্তানে গত ২০ বছরে নারী শিক্ষা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে যে অগ্রগতি হয়েছে, তা কীভাবে রক্ষা করা যায়। তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া হবে কীনা, সেটাও এই বৈঠকে আলোচনা হতে পারে।
একজন ব্রিটিশ এমপি টম টুগেনহাট, যিনি আফগানিস্তানে একজন সেনা অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন, তিনি বলছেন, ৩১ অগাস্টের সময়সীমা বাড়াতে কেবল যুক্তরাষ্ট্র রাজি হলেই চলবে না, তালেবানকেও রাজি হতে হবে। তিনি বলেন, “সময়সীমা বাড়ানোর ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের বড় ভূমিকা আছে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এখানে তালেবানকেও রাজি করাতে হবে।
এটা করা খুব কঠিন। কারণ তালেবানের ওপর বিশ্বাস রাখা কঠিন।” সিআইএ প্রধানের সঙ্গে তালেবান নেতার সাক্ষাৎ? এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকার এক খবরে দাবি করা হচ্ছে, সিআইএর পরিচালক উইলিয়াম বার্নস গতকাল সোমবার কাবুলে তালেবানের নেতা আবদুল গানি বারাদারের সঙ্গে গোপনে বৈঠক করেছেন।
সূত্র: বিবিসি বাংলা